-->

উদাসীনতার কারণে দেশে করোনার চতুর্থ ঢেউ

নিখিল মানখিন
উদাসীনতার কারণে দেশে করোনার চতুর্থ ঢেউ

শুরু হয়েছে করোনার উর্ধ্বমুখী সংক্রমণ। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে কার্যকর সরকারি উদ্যোগ ও মানুষের সাড়া নেই। দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে দেশের করোনা পরিস্থিতি আবার ভয়াবহ রূপ নেবে বলে সতর্ক করেছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, মানুষের উদাসীনতার কারণেই করোনা পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে। করোনার ভয়াবহতার কথা ভুলে গেছে মানুষ। আর সরকারি মনিটরিং না থাকায় দেশব্যাপী চলছে স্বাস্থ্যবিধি ভাঙার প্রতিযোগিতা।

 

দেশে ২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ে। এরপর ধীরে ধীরে সংক্রমণ বাড়তে থাকে। প্রথম ঢেউ নিয়ন্ত্রণে আসে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে। একই বছরের মার্চে ডেল্টা ধরনের করোনায় আসে দ্বিতীয় ঢেউ। এ পর্যায়ে উদ্বেগজনক পরিস্থিতি তৈরি হয় গত জুলাইয়ে। একপর্যায়ে শনাক্তের হার ৩৩ ছাড়িয়ে যায়। দ্বিতীয় ঢেউ নিয়ন্ত্রণে আসার পর দেশে তৃতীয় ঢেউ নিয়ে আসে করোনার আরেক ধরন ওমিক্রন। এ ধরন শনাক্ত গত বছরের ১১ ডিসেম্বর আর তৃতীয় ঢেউ নিশ্চিত হয় ২০২২ সালের ২০ জানুয়ারি। ২০২২ সালের ২৮ জানুয়ারি করোনা শনাক্তের হার ৩৩.৩৭ দাঁড়ায়, যা দেশে করোনা সংক্রমণ ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি। তবে তৃতীয় ঢেউয়ে আক্রান্ত বেশি হলেও মৃত্যু ছিল তুলনামূলক কম। এ ঢেউ দ্রুত নিয়ন্ত্রণেও আসে। গত ১১ মার্চ তৃতীয় ঢেউ নিয়ন্ত্রণে আসার বিষয়টি নিশ্চিত হয়। এভাবে মার্চ থেকে মে পর্যন্ত দেশের করোনা পরিস্থিতি অনেকটা নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছিল। দৈনিক শনাক্ত ১ শতাংশের নিচে নেমে গিয়েছিল।

 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্বের অধিকাংশ দেশ এখন করোনার চতুর্থ ঢেউয়ে আক্রান্ত। প্রতিবেশী দেশ ভারতে অনেক আগেই চতুর্থ ঢেউ শুরু হয়েছে। এবার সেই ঢেউ লেগেছে বাংলাদেশে। গত এক মাস ধরে ধারাবাহিকভাবে দেশের করোনা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। আর গত কয়েকদিন ধরে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে দৈনিক শনাক্তকৃত নতুন রোগী ও শনাক্তের হার। গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত হয়েছেন ১ হাজার ৩১৯ জন নতুন রোগী এবং শনাক্তের হার ১৪.৩২। এর আগের দিন শনাক্ত হয়েছিল ১ হাজার ১৩৫ জন এবং শনাক্তের হার ছিল ১৩.৩০।

 

স্বাস্থ্যবিধি মেলে চলার পরামর্শ দিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের সাবেক ডিন ও প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ ভোরের আকাশকে বলেন, দৈনিক করোনা সংক্রমণের হার যেভাবে দ্রুত বেড়ে চলেছে, দেশে করোনার চতুর্থ ঢেউ শুরু হয়েছে বলে আমরা ধরে নিতেই পারি। সব দেশেই করোনা সংক্রমণের উঠানামা চলে আসছে। কয়েক সপ্তাহ আগেও দেশে সংক্রমণের হার ১ শতাংশের নিচে নেমে গিয়েছিল। কিন্তু শেষ হয়ে যায়নি করোনার সংক্রমণ। তাই সংক্রমণ যতদিন অব্যাহত থাকবে, ততদিনই সতর্ক থাকতে হবে। মানুষের উদাসীনতার কারণেই করোনা পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে। করোনার ভয়াবহতার কথা ভুলে গেছে মানুষ। সংক্রমণের হার নিয়ন্ত্রণে রাখতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিকল্প নেই বলে জানান অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ।

 

সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগনিয়ন্ত্রণ বিভাগের সাবেক পরিচালক বে-নজির আহমেদ বলেন, আমরা চতুর্থ ঢেউয়ের মধ্যে প্রবেশ করেছি। ওমিক্রনের নতুন এক সাব-ভ্যারিয়েন্ট দেখা দিয়েছে। এ ভ্যারিয়েন্ট অনেক বেশি সংক্রামক। রাজধানীতে রোগী বেশি। এ সংখ্যা আরো বাড়তে পারে। ঈদে অনেকেই বাড়িতে যাবে। তখন সংক্রমণ বাড়তে পারে। দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করলে সংক্রমণ প্রতিরোধ করা যাবে জানিয়ে তিনি বলেন, সরকারের উচিত এ ভাইরাসের রোগতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ করা। ক্রাশ প্রোগ্রাম চালিয়ে সবার মধ্যে টিকা নিশ্চিত করা। জিনোম সিকোয়েন্সিং করে ভাইরাসটি কোথা থেকে আসছে তা বের করতে হবে। বাইরে থেকে এলে বিমানবন্দরগুলোয় নিরাপত্তা আরো জোরালো করতে হবে। আর দেশেই ছড়ালে ভিন্ন ব্যবস্থা নিতে হবে। আইসোলেশনের ব্যবস্থা করতে হবে। আগামী ১৪ দিন ব্যাপক কর্মসূচি নিলে ১৪ দিন পর ভাইরাসটি স্থিতাস্থাপকতা পর্যায়ে থাকবে এবং পরের ১৪ দিনে কমে যাবে।

 

হঠাৎ করে করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে সবার মধ্যে এক ধরনের উদাসীনতাকে দায়ী করছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ও করোনা মোকাবিলায় গঠিত জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম।

 

তিনি বলেন, এখন আর কেউ স্বাস্থ্যবিধি মানছে না। রাস্তায় অনেকেই আর মাস্ক পড়ছে না। সরকারের মধ্যেও কিছুটা উদাসীনতা দেখা গেছে। আমাদের জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটির মিটিং নিয়মিত হচ্ছে না। কয়েক মাস আগে সর্বশেষ মিটিং হয়েছে।

 

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. মুশতাক হোসেন ভোরের আকাশকে বলেন, দেশের করোনা পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি ঘটছে। সরকার ও সাধারণ মানুষ-উভয়কেই সতর্ক থাকতে হবে। সংক্রমণের ব্যাপকতা বাড়তে দেওয়া ঠিক হবে না। কিন্তু স্বাস্থ্যবিধি মানা না হলে সংক্রমণের গতি বেড়ে যাবে। রোগী বেশি হলে গেলে হাসপাতালগুলোয় সৃষ্টি হবে অতিক্তি চাপ।

মন্তব্য

Beta version