-->
আজ বিশ্ব দৃষ্টি দিবস

১৩৫ উপজেলায় চোখের আধুনিক চিকিৎসা

ইফ্ফাত শরীফ
১৩৫ উপজেলায় চোখের আধুনিক চিকিৎসা

ঢাকা: দেশের ১৩৫ টি উপজেলার মানুষ পাচ্ছেন চোখের আধুনিক চিকিৎসা। যা নিশ্চিত করছে উপজেলা কমিউনিটি ভিশন সেন্টার। এই সেন্টারের সঙ্গে সমন্বয় করছে ৮টি বেইজ সেন্টার। ২০২৩ সালের জুনের মধ্যে আরো ৬৫টি কমিউনিটি ভিশন সেন্টার চালু হবে। এগুলো চালু হলে চোখের আধুনিক চিকিৎসা পাবেন ২০০ উপজেলার মানুষ।

 

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেবে ২.২ বিলিয়নের বেশি মানুষ চোখের সমস্যায় ভুগছেন। এরমধ্যে দৃষ্টি প্রতিবন্ধকতায় ভুগছেন বিশ্বের জনসংখ্যার এক-চতুর্থাংশ মানুষ। এই দৃষ্টিশক্তির অর্ধেকের বেশি চিকিৎসাযোগ্য হলেও চোখের যত্নে মানসম্মত চিকিৎসা বঞ্চিত এসব মানুষ। পুরো বিশ্বের প্রায় এক বিলিয়নেরও বেশি মানুষ নেন না চোখের মানসম্মত চিকিৎসা।

 

এমন পরিস্থিতিতে আজ বৃহস্পতিবার পালিত হচ্ছে বিশ্ব দৃষ্টি দিবস। দৃষ্টি সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে প্রতিবছরের অক্টোবর মাসের দ্বিতীয় বৃহস্পতিবার দিবসটি পালিত হয়। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ‘আপনার চোখকে ভালোবাসুন’।

 

জানা গেছে- সারা দেশে অন্ধত্ব এবং দৃষ্টি প্রতিবন্ধকতা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ হাতে নিয়েছে সরকার। জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধীনে ন্যাশনাল আই কেয়ার স্থাপন করেছে। এই আই কেয়ারের অধীনে দেশের ৪১ জেলার ১৩৫ উপজেলায় চালু করা হয়েছে কমিউনিটি ভিশন সেন্টার। এই ভিশন সেন্টার গুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে আটটি বেইজ সেন্টার। ১৫ থেকে ২০ টি কমিউনিটি ভিশন সেন্টার কেন্দ্রীক ৯০ কিলোমিটারে রয়েছে একটি করে বেইজ সেন্টার।

 

ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে ভিডিও কনফারেন্স করে কমিউনিটি ভিশন সেন্টারে আসা প্রান্তিক জনগোষ্ঠির পরামর্শ ও চিকিৎসা দেন বেইজ সেন্টারের অভিজ্ঞ চিকিৎসকরা। কোনো রোগীর অপারেশনের প্রয়োজন হলে তাকে অপারেশনের জন্য কমিউনিটি ভিশন সেন্টার থেকে বেইজ সেন্টারে রেফার্ড করা হয়।

 

বর্তমানে ১৩৫ উপজেলায় এই সেবা চালু থাকলেও আগামী জুনের মধ্যে আরো ৬৫ উপজেলায় কমিউনিটি ভিশন সেন্টার চালু করতে যাচ্ছে ন্যাশনাল আই কেয়ার।

 

এ বিষয়ে কথা হয় জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. গোলাম মোস্তাফা বলেন, কমিউনিটি ভিশন সেন্টারের মাধ্যমে প্রায় পাঁচ কোটি প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে আধুনিক চক্ষুসেবার আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে। সরকার চক্ষুরোগীদের যেমন চোখে ছানি পড়া, গ্লুকোমা বা ডায়াবেটিস, রেটিনোপ্যাথি বা শিশুর চোখে আঘাতজনিত চিকিৎসা, পাওয়ার চশমার ব্যবস্থাপনা সরকারিভাবে সম্পূর্ন ফ্রি দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। এই সেবা আগামীতে পুরো বাংলাদেশে ছড়িয়ে দেয়া হবে।

 

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একটি কক্ষে চালু করা হয়েছে কমিউনিটি ভিশন সেন্টার। চোখের রোগীরা সেখানে প্রাথমিক চক্ষু চিকিৎসা সেবাসহ সমন্বিত উন্নত চক্ষু চিকিৎসা সেবা পান। এর মধ্যে রয়েছে ছানি, গ্লুকোমা, ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি, শিশু চক্ষু রোগ, চোখের আঘাতসহ অন্য জটিল চক্ষু রোগ শনাক্তকরণ। এ ছাড়া টেলি-কনসালটেশনের মাধ্যমে বেইজ সেন্টারে কর্মরত চক্ষু বিশেষজ্ঞর পরামর্শ নিয়ে রেফারেলের মাধ্যমে বেইজ সেন্টারে এসে রোগীরা অপারেশন ও প্রয়োজনীয় ইনভেস্টিগেশন করতে পারবে। কমিউনিটি ভিশন সেন্টারে সরকারি ব্যবস্থাপনায় বিনামূল্যে ঔষধসহ পাওয়ার চশমা প্রদান করা হয়। কমিউনিটি ভিশন সেন্টারে রোগীদের চিকিৎসায় যেসকল আধুনিক যন্ত্রপাতি রয়েছে তার মধ্যে স্লিটল্যাম্প, অটোরিক্সাক্টোমিটার (চোখের পাওয়ার মাপার যন্ত্র), ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি এবং গ্লুকোমা রোগ নির্ধারনের জন্য ফান্ডাস ক্যামেরা, চোখের প্রেসার মাপার যন্ত্র, Ophthalmoscope ও Retinoscope উল্লেখ্যযোগ্য।

 

চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. গোলাম মোস্তাফা বলেন, কমিউনিটি ভিশন সেন্টারে কর্মরত প্রশিক্ষিত সেবিকা বেইজ সেন্টারে কর্মরত চক্ষু বিশেষজ্ঞার সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রোগীর সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে দেন। বেইজ সেন্টারে অবস্থিত চক্ষু বিশেষজ্ঞ রোগীর রোগ শনাক্ত করে প্রয়োজনীয় ই-সাইন সম্বলিত ব্যবস্থাপত্র প্রদান করেন। চক্ষু বিশেষজ্ঞ কর্তৃক প্রদত্ত ব্যবস্থাপত্র কমিউনিটি ভিশন সেন্টারের কম্পিউটার প্রিন্টারে প্রিন্টকপি বের করে, এই ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী সেবিকা রোগীর হাতে কমিউনিটি ভিশন সেন্টার থেকে বিনামূল্যে ঔষধপত্র ও চশমা বুঝিয়ে দেন। কমিউনিটি ভিশন সেন্টারে কর্মরত সেবিকা নিজেরা কোন ব্যবস্থাপত্র প্রদান করতে পারেন না। এ ছাড়া বিশেষ প্রয়োজনে রোগীকে বেইজ সেন্টারে যেতে হলে সেখানে কমিউনিটি ভিশন সেন্টারের জন্য বরাদ্দকৃত রুমে একাধিক চক্ষু বিশেষজ্ঞ উপস্থিত থেকে আগত রোগীদের চক্ষু চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করেন।

 

ভোরের আকাশ/আসা

মন্তব্য

Beta version