ভিশন সেন্টারে ২০-৩০ শতাংশই চোখ ওঠা রোগী

ইফ্ফাত শরীফ
ভিশন সেন্টারে ২০-৩০ শতাংশই চোখ ওঠা রোগী

ঢাকা: রাজধানীতে হঠাৎ করেই বেড়েছে চোখ ওঠা রোগীর সংখ্যা। অন্যবারের তুলনায় এবার চোখ ওঠা রোগীর সংখ্যা বেশি। শহরের বিভিন্ন হাসপাতালসহ ব্যক্তিগত চেম্বারে চোখ ওঠা রোগীর ভিড় বাড়ছেই। ছোঁয়াচে হওয়ায় রোগটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ এটাকে মহামারি হিসেবে দেখছেন। সাধারণত মৌসুমের পরিবর্তন এবং তাপমাত্রার তারতম্যের জন্য এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বেড়ে যায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, চোখ ওঠা রোগ মৌসুম পরিবর্তনের কারণে হলেও এর জন্য দায়ী বায়ু এবং পরিবেশদূষণ।

 

চোখ ওঠার ফলে অনেক রোগী ফার্মাসি থেকে পরামর্শ নিয়ে হাই অ্যান্টিবায়োটিক খাচ্ছেন। তবে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে, কনজাংটিভাইটিসের জন্য লাইট গ্রুপের অ্যান্টিবায়োটিক ড্রপ ব্যবহার করা ভালো। কেউ যদি ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক খায়, তাহলে পরে ‘অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স’ হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে বলে সতর্ক করেছেন চিকিৎসকরা। অর্থাৎ পরে চোখের ক্যাটারাক্ট অপারেশন বা আলসার হলে এই অ্যান্টিবায়োটিকগুলো আর কাজ করে না।

 

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, অপরিষ্কার বা নোংরা জীবনযাপন চোখ ওঠার অন্যতম কারণ। এ ছাড়া ভাইরাস আক্রমণের কারণেও চোখ ওঠার সমস্যা হতে পারে। আবার কখনো এলার্জির কারণেও চোখ উঠে থাকে। যখন মৌসুমি বায়ুর আর্দ্রতা বেড়ে যায়, তখন এ রোগটা বেশি হয়। সাধারণত রোগীর ব্যবহৃত জিনিস গামছা, রুমাল, চশমা অন্য কেউ ব্যবহার করলে এই ভাইরাস ছড়ায়। আবার অনেক সময় আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত জিনিস ধরার পর হাত না ধুয়ে চোখ ধরলে রোগটি ছড়ায়। কারো চোখের খচখচে ভাবটা যদি বেশি হয়, বেশি পরিমাণে কেতুর জমে বা চোখে ঝাপসা দেখে, তাহলে চক্ষু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়া উত্তম বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বেশিরভাগ সময়ই ভাইরাসে চোখ ওঠে। এমনও দেখা গেছে, কোনো কোনো পরিবারের সব সদস্যই আক্রান্ত হয়েছে। রোগীদের মধ্যে চোখের সাদা অংশের পাশাপাশি কালো অংশ বা কর্নিয়াতেও সংক্রমণ দেখা দিচ্ছে। সংক্রমণ ঠেকাতে অনেক ডাক্তার রোগীকে কালো চশমা পরারও পরামর্শ দিয়েছেন।

 

তাই সংক্রমণ ঠেকেতে ভিড় বেড়েছে শহরের চশমার দোকানগুলোতে। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী চড়া মূল্যে বিক্রি করছেন কালো চশমা।

 

বিক্রেতারা বলছেন, করোনা মহামারির পরে দেশে চশমার বিক্রি অনেকটা কমে গিয়েছিল। তবে কয়েক সপ্তাহ ধরে কালো চশমার বিক্রি আগের থেকে অনেকটা বেড়েছে। এবারের মতো গত বছর এ সময় এত চশমা বিক্রি হয়নি।

 

খিলগাঁও চৌধুরীপাড়ার বাসিন্দা মো. জানে আলম ভোরের আকাশকে বলেন, ‘চোখ ওঠার ফলে কিছুদিন আগেই ছেলের জন্য ছয়শ টাকা দিয়ে চশমা কিনতে হলো। অন্য সময় এ চশমার দাম থাকে দুই থেকে তিনশ টাকা। এখন আবার আমার জন্যও কিনতে হচ্ছে। পরিবারের সবারই চোখ ওঠা রোগ হওয়া শুরু করেছে। আগে কখনো এভাবে এত প্রকোপ দেখা যায়নি। এবারই প্রথম একসঙ্গে পরিবারের সবার চোখ উঠল।’

 

এ বিষয়ে হেলথ অ্যান্ড হোপ স্পেশালাইজড হাসপাতালের পরিচালক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, ‘এখন যে চোখ উঠছে সেটা ভাইরাসজনিত চোখ ওঠা। মেডিকেলের ভাষায় যাকে ভাইরাল কনজাংটিভাইটিস বলা হয়। এই ভাইরাসটি মূলত বাতাসে ছড়ায়। সাধারণত মৌসুমের যখন পরিবর্তন হয় এবং তাপমাত্রার তারতম্যের জন্য এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বেড়ে যায়।’

 

তিনি বলেন, ‘সাধারণত যখন পরিবেশের দূষণ বেড়ে যায়, সে সময় এই ভাইরাস সক্রিয় হয়ে ওঠে। বাংলাদেশে এখন যে চোখ ওঠা তা মৌসুম পরিবর্তনের কারণে হলেও এর পেছনে দায়ী বায়ু এবং পরিবেশদূষণ। যার ফলে দেশে চোখ ওঠা মহামারির মতো ছড়িয়ে পড়েছে।’

 

চোখ ওঠার বিষয়ে মানুষকে আরো সচেতন হতে হবে উল্লেখ করে এই জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘এইটা ভাইরাসজনিত চোখ ওঠা। চোখ একটু লাল হবে, চোখে ময়লা জমবে, ব্যথা করবে। চোখ বেশি চুলকালে অ্যান্টিহিস্টামিন জাতীয় ওষুধ খেতে হবে। আর ব্যথা যদি বাড়ে তাহলে প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ খাবার পরামর্শ দিয়েছেন। যদি চোখ ওঠা কারো ক্ষেত্রে ব্যথা বেশি বেড়ে যায় এবং চোখের জ¦ালাপোড়া বেড়ে যায় তাহলে তাকে অভিজ্ঞ ডাক্তারের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।’ পাশাপাশি এ রোগের সংক্রমণ ঠেকাতে যার চোখ উঠেছে, তার ও তার আশপাশের মানুষকে সচেতন হতে হবে বলে জানান জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী।

 

এ বিষয়ে জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. গোলাম মোস্তফা ভোরের আকাশকে বলেন, ‘রাজধানীসহ সারাদেশে কমিউনিটি ভিশন সেন্টারগুলোতে প্রতিদিন অনেক চোখ ওঠা রোগী আসছে। হাসপাতালগুলোতে যত রোগী আসছে তার মধ্যে ২০-৩০ শতাংশ চোখ ওঠা রোগী। এবার যে পরিমাণ রোগী বেড়েছে বিগত বছরগুলোতে এত বেশি পরিমাণে চোখ ওঠা রোগী দেখা যায়নি। এটা সাধারণত সিজনাল ডিজিজ। এ রোগ এমনিতেই ভালো হয়ে যায়। তবে বেশি আক্রান্ত হলে চিকিৎসা লাগে।’

 

ভোরের আকাশ/আসা

মন্তব্য