-->

খাবারের মাধ্যমেই ভিটামিন ‘এ' পাওয়া সম্ভব

ইতি খন্দকার
খাবারের মাধ্যমেই ভিটামিন ‘এ' পাওয়া সম্ভব

ভিটামিন এ হলো খাবারে থাকা এক ধরনের জৈব অণু এবং এর রাসায়নিক নাম হলো রেটিনাল। যা মানব দেহে জারিত হয়ে ভিটামিন এ রেটিনয়িক এসিড তৈরি করে। আমরা সবাই জানি ভিটামিন এ এর অভাবে রাতকানা রোগ হয়ে থাকে কিন্তু আমরা খুব কম মানুষ জেনে থাকি ভিটামিন এ এর অভাবে অনেক ধরণের সমস্যা হতে পারে। ভিটামিন এ এর অভাবজনিত রোগ সমূহ থেকে বিস্তার পেতে হলে অবশ্যই আমাদেরকে ভিটামিন এ সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করতে হবে এবং প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় তা অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

 

কিভাবে বুঝতে পারবো  দেহে ভিটামিন ‘এ’ এর অভাব রয়েছে

 

  • চোখ শুষ্ক ভাব লাগা কিংবা চোখের অশ্রু উৎপাদন কমতে থাকা এটি ভিটামিন এ এর অভাবের প্রথম লক্ষণ গুলোর মধ্যে একটি। চোখে প্রথমত যখন শুষ্ক ভাব চলে আসে তখন থেকেই চোখের নানা সমস্যা দেখা দেয় ভিটামিন এ এর অভাবে। যার ফলে পরবর্তীতে রাতকানা রোগের উচ্চ প্রবণতা দেখা দেয় এবং চোখের কর্নিয়া ঘোলাটে হয়ে যায়।

 

  • ভিটামিন এ শরীরে কম থাকলে শরীরে প্রাপ্ত লৌহের স্বাভাবিক ব্যবহারে ঘাটতে ঘটে। ফলে রক্তস্বল্পতা দেখা দেয়। যার থেকে অ্যানিমিয়া হবার সম্ভাবনা থেকে যায়।

 

  • ত্বকে যখন অতিরিক্ত শুষ্কতা বৃদ্ধি পাবে এবং কম বয়সে মুখে বলিরেখা দেখা দিবে তখনই বুঝতে হবে আমাদের ভিটামিন এ এর অভাব রয়েছে। বিভিন্ন গবেষণা থেকে জানা গিয়েছে যে ২১% মানুষের শরীরে টিউমার বা স্কিন ক্যান্সার হয় ভিটামিন এ এর অভাবে।

 

  • দিন দিন বুদ্ধির বিকাশ এবং বৃদ্ধিতে তুলনামূলকভাবে কম প্রকাশিত হলেও বুঝতে হবে ভিটামিন এ এর ঘাটতি রয়েছে।

 

  • আঘাত অথবা অস্ত্রপাচারের পরে ক্ষত নিরাময় সমস্যা দেখা দিলে তা হতে পারে ভিটামিন এ এর অভাবে একটি অন্যতম কারণ।

 

  • নারী এবং পুরুষের প্রজননের অক্ষমতা সেটা কিন্তু ভিটামিন এ এর অভাবেও হতে পারে।

 

যে সকল খাবার সমূহ ভিটামিন ‘এ’ এর ঘাটতি পূরণ করবে

 

শরীরে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি পরিমাণে ভিটামিন এ গ্রহণ করা যাবে না। একজন প্রাপ্ত পূর্ণ বয়স্ক মহিলার শরীরে ভিটামিন এ দৈনিক কমপক্ষে ৭০০ মাইক্রো গ্রাম এবং বেশি হলেও ৩০০০ মাইক্রগ্রাম এরমধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে হবে। পুরুষের ক্ষেত্রে ৯০০ থেকে ৩০০০ মাইক্রগ্রাম রাখতে হবে। তাই দৈনিক অতিরিক্ত ভিটামিন এ গ্রহণ করে নিজেদেরকে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে ফেলা যাবে না।

 

ভিটামিন এ মূলত একটি জৈব অনু যা সাধারণত ক্যারোটিন থেকে তৈরি হয়। দুই জাতীয় খাবার থেকে ভিটামিন এ পাওয়া যায় একটি হল উদ্ভিদ এবং আরেকটি হলো প্রাণিজ খাবার।

 

উদ্ভিদ জাতীয় খাবারের মধ্যে হলুদ কমলা ও সবুজ শাকসবজি এবং ফলমূল থেকে ভিটামিন এ পাওয়া যায়। যেমন, গাজর, পাকা পাকা পেঁপে, সবুজ শাকসবজি, সবুজ ফলমূল, মিষ্টি কুমড়ো, ব্রকলি, কমলালেবু, আমড়া, বাদাম, এভোকাডো, পাকা আম ইত্যাদি।

 

প্রাণীর খাবারের মধ্যে ভিটামিন এ একটু বেশি পরিমাণে থাকে। যেমন, ডিম, দুধ, চিজ, কলিজা, মাংস, মাছ বিশেষ করে মাংসাশী প্রাণী যেমন হাঙ্গর, কট, জেলিফিস, বোয়াল, চিতল ইত্যাদি মাছের যকৃত এ প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ পাওয়া যায়। ছোট্ট মাছেও ভিটামিন এ রয়েছে। যেমন মলা, ঢেলা, কাচকি ইত্যাদি। তাছাড়া মাছের তেলে বেশি পরিমাণে ভিটামিন এ বিদ্যমান থাকে।

 

উপরিউক্ত খাদ্য সমূহ দৈনিক খাদ্য তালিকায় রাখতে পারলে আমাদের ভিটামিন এ এর ঘাটতি কখনো দেখা দেবে না। তবে অতিরিক্ত পরিমাণে ভিটামিন এ গ্রহণ থেকে নিজেকে বিরত থাকতে হবে। সরকার কর্তৃক আয়োজিত ভিটামিন এ এর ক্যাপসুল শিশুদেরকে দিয়ে থাকে। তাই সঠিক সময়ে সঠিক পদ্ধতি অবলম্বন করে আপনার শিশুদেরকে ভিটামিন এ এর ক্যাপসুল গ্রহণ করাবেন পাশাপাশি গর্ভাবস্থায় প্রতিটি নারীদের ভিটামিন এ পর্যাপ্ত পরিমাণে খাদ্য তালিকায় দৈনিক নিশ্চিত করুন। কেননা ভিটামিন এ এর অভাব হলে গর্ভবতী মা সহ তার অনাগত সন্তান বিভিন্ন সমস্যার ঝুঁকিতে থেকে যাবে। তাই গর্ভকালীন থেকে শুরু করে  বার্ধক্য বয়স্ক পর্যন্ত ভিটামিন এ সঠিক পরিমাণ মতো নিশ্চিন্ত করুন।

 

ভোরের আকাশ/আসা

মন্তব্য

Beta version