-->
শিরোনাম

চিকিৎসাধীন রোগী আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে

নিখিল মানখিন
চিকিৎসাধীন রোগী আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে

দেশের হাসপাতালগুলোয় চিকিৎসাধীন ডেঙ্গু রোগী আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। দৈনিক সুস্থতার তুলনায় ভর্তি হওয়া নতুন রোগী বেশি হওয়ায় হাসপাতালগুলোয় চাপ বেড়েছে। চূড়ান্ত পর্যায়ের চিকিৎসা ব্যবস্থা না থাকায় রাজধানীর হাসপাতালগুলোয় বেড়েছে রেফার্ড রোগীর চাপ। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রতিবেদন থেকে এমন চিত্র পাওয়া গেছে।

 

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক সাংবাদিকদের বলেছেন, ডেঙ্গু রোগী বেড়ে গেলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় তার চিকিৎসা দিতে যথেষ্ট প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন হাসপাতাল, বিএসএমএমইউর নতুন হাসপাতাল ইউনিট এবং লালকুঠি হাসপাতাল প্রস্তুত রাখা হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগী ২২ অক্টোবর ৩ হাজার ৪০৪ জন, ২১ অক্টোবর ৩ হাজার ২০৭ জন, ২০ অক্টোবর ৩ হাজার ১৭৪ জন, ১৮ অক্টোবর ৩ হাজার ২২৭ জন, ১৭ অক্টোবর ৩ হাজার ৪ জন, ১৬ অক্টোবর ২ হাজার ৮৪৭ জন, ১৫ অক্টোবর ২ হাজার ৮৮৯ জন, ১৩ অক্টোবর ২ হাজার ৬৯৫ জন, ১২ অক্টোবর ২ হাজার ৪৮১ জন, ১১ অক্টোবর ২ হাজার ৪৯৩ এবং ১০ অক্টোবর ২ হাজার ৪৩৯ জন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আরো জানায়, চলতি বছর ১ জানুয়ারি থেকে ২২ অক্টোবর পর্যন্ত মোট ভর্তি হওয়া ৩০ হাজার ২৯ ডেঙ্গু রোগীর মধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন ২৬ হাজার ৫১৩ জন।

 

রোগীর চাপ বেড়েছে রাজধানীর হাসপাতালগুলোয় : স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, গত ২২ অক্টোবর রাজধানীর ১৯টি সরকারি হাসপাতালে ১ হাজার ২৩০ এবং ৩৩টি বেসরকারি হাসপাতালে ১ হাজার ৯৮ ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন। ঢাকা মহানগরের বাইরে বিভাগভিত্তিক পরিসংখ্যা দেখে গেছে, ঢাকা বিভাগের ১১ জেলায়, ময়মনসিংহের ৩ জেলায়, চট্টগ্রাম বিভাগে ৮ জেলায়, খুলনা বিভাগের ৯ জেলায়, রাজশাহী বিভাগের ৭ জেলায়, রংপুর বিভাগে ২ জেলায়, বরিশাল বিভাগের ৭ জেলায় এবং সিলেট বিভাগের ২ জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ১ হাজার ৭৬ ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আরো জানায়, চিকিৎসাধীন ডেঙ্গু রোগীর চাপে রয়েছে এমন হাসপাতালগুলোর মধ্যে রয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২০২, মিটফোর্ড হাসপাতালে ১৫২, বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটে ৭০, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ১২৩, রাজারবাগের পুলিশ হাসপাতালে ৬৩, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১৯৩, পিলখানার বিজিবি হাসপাতালে ৩১, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ১৩৪, কুর্মিটোল জেনারেল হাসপাতালে ১৩৭, কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতালে ৫৮, কামরাঙ্গীরচরের ৩১ শয্যা হাসপাতালে ২৭ ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন আছেন।

 

আর বেসরকারি হাসপাতালের মধ্যে চাপ রয়েছে এমন হাসপাতালগুলোর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৫২, হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতালে ৬৮, বারডেম হাসপাতালে ৪১, ইবনে সিনা হাসপাতালে ১০৫, স্কয়ার হাসপাতালে ৪৪, ডেল্টা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৫৮, শমরিতা হাসপাতালে ১৬, সেন্ট্রাল হাসপাতালে ৩৮, গ্রিন লাইফ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৩২, ইসলামী ব্যাংক সেন্ট্রাল হাসপাতালে ৫১, ইউনাইটেড হাসপাতালে ৪৩, শহীদ মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২৯, এভার কেয়ার হাসপাতালে ২৫, আদ-দ্বীন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৩২, ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৪৯, বিআরবি হাসপাতালে ২১, বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে ২২, উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৬৬, সালাউদ্দিন হাসপাতালে ১৯, উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতালে ৩৯, আনোয়ার খান মর্ডান মেডিলেক কলেজ হাসপাতালে ২৭, মেডিকেল কলেজ ফর ওম্যান অ্যান্ড হাসপাতালে ৬০, ডা. এম আর খান শিশু হাসপাতালে ৫৬ এবং ঢাকা সেন্ট্রাল ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২৫ ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন।

 

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এডিস মশার লার্ভা নিধনে সফলতা না পাওয়ায় প্রাপ্তবয়স্ক মশা আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। যতই বলা হোক, নাগরিকরা, সিটি করপোরেশন এবং স্থানীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রশাসন এ বিষয়ে সচেতন নয়। ডেঙ্গু শুরু হলে আমরা কথা বলি। কিন্তু এডিস মশার প্রজনন ঠোকাতে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হয় না। সবাই জানেন স্বচ্ছ ও বদ্ধ পানিতে এডিস মশার প্রজনন হয়। কিন্তু আগাম কোনো প্রস্তুতি থাকে না বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। সম্প্রতি রাজধানীর একটি হোটেলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, এখন প্রত্যেক জেলায় ডেঙ্গুরোগী পাওয়া যাচ্ছে। হাসপাতালে ৩ হাজারের বেশি রোগী ভর্তি আছে। আমরা চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু রোগীর সংখ্যা না কমলে মৃত্যুর সংখ্যা কমানো কঠিন। তাই মানুষকে সচেতন হতে হবে। স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব আনোয়ার হোসেন বলেন, প্রতিদিনই নতুন রোগী হাসপাতালে আসছে। হাসপাতালগুলোয় সিট না থাকলেও রোগীরা আসছে। কিন্তু আমরা তো তাদের ফেরত পাঠাতে পারি না। মেঝেতে হলেও তাদের জায়গা দিচ্ছি, চিকিৎসা সেবা দিচ্ছি। জগন্নাথ বিশ^বিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক ড. আবদুল আলিম জানান, গত এক মাসে বৃষ্টি এবং থেমে থেমে বৃষ্টি বেড়ে যাওয়ায় ডেঙ্গুর জন্য দায়ী এডিস মশা বেড়ে গেছে। টানা বৃষ্টিতে লার্ভা ভেসে যায়। কিন্তু থেমে থেমে বৃষ্টিতে স্বচ্ছ পানি জমে, যা এডিস মশার প্রজননের জন্য সহায়ক। সামনে আরো এটা বাড়বে। কমপক্ষে আরো এক মাস পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাবে।

 

প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এম আব্দুল্লাহ ভোরের আকাশকে বলেন, দেশের ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে বেড়েছে উদ্বেগ। সব জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে ডেঙ্গু রোগী। এটা ডেঙ্গুর মৌসুম। গত বছরও এ সময়ে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ছিল। এবার থেমে থেমে বৃষ্টি বেশি হওয়ায় এডিস মশাও বেশি। আক্রান্তও বেশি হচ্ছে। তবে শিশুদের মধ্যে আক্রান্তের হার বেশি। তিনি বলেন, সচেতনতার অভাবেই প্রতি বছর এভাবে ডেঙ্গু হানা দেয়। শিশুদের এ সময়ে হাত পা ঢাকা জামাকাপড় পরানো উচিত। তারা দিনে ঘুমালে মশারি টানিয়ে দেয়া উচিত। ডেঙ্গুর জন্য দায়ী এডিস মশা দিনে কামড়ায়। তখন অধিকাংশ শিশু স্কুলে থাকে। স্কুল থেকেও কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয় না। এখন করোনাও আছে। তাই করোনার টেস্ট করালে সঙ্গে ডেঙ্গুর টেস্টও করাতে হবে। জ্বর হলে অপেক্ষা না করে দ্রুত টেস্ট করালে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী দ্রুত শনাক্ত করা যায়। ফলে ঝুঁকি কমে যায়। আর জ্বর হলে নিজের চিকিৎসা নিজে না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরার্শ নিতে হবে। আমাদের ডেঙ্গু চিকিৎসায় কোনো সংকট নেই। তবে আবহাওয়া এবং সচেতনতার অভাবের কারণে ডেঙ্গু রোগী আরো বাড়বে বলে আশঙ্কা করছি বলে জানান তিনি।

 

ভোরের আকাশ/আসা

মন্তব্য

Beta version