-->
শিরোনাম

দেশে প্রথম আলাদা হচ্ছে মেরুদণ্ড জোড়া লাগানো দুই শিশু, অস্ত্রোপচার ডিসেম্বরের শেষে

নিজস্ব প্রতিবেদক
দেশে প্রথম আলাদা হচ্ছে মেরুদণ্ড জোড়া লাগানো দুই শিশু, অস্ত্রোপচার ডিসেম্বরের শেষে

দেশে প্রথম আলাদা হচ্ছে মেরুদণ্ড জোড়া লাগানো দুই শিশুকে। আলাদা করতে অস্ত্রোপচার করা হবে দুই ধাপে । সব ঠিক থাকলে এ মাসের শেষ সপ্তাহে হবে প্রথম ধাপের অস্ত্রোপচার। এক মাস পর হবে দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত অস্ত্রোপচার । দুধাপের অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হওয়ার পর আরও কয়েকমাস তাদের থাকতে হতে পারে হাসপাতালে ।

 

সাড়ে আট মাসের শিশু নুহা ও নাবাকে আলাদা করতে বৃহস্পতিবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে মেডিক্যাল বোর্ডের সভা হয়।

 

শিশু দুটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউরো সার্জারী বিভাগে অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসেনের অধীনে চিকিৎসাধীন। তাদের চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ।

 

কুড়িগ্রাম জেলার কাঠালবাড়ীর পরিবহন শ্রমিক আলমগীর রানার স্ত্রী নাসরিনের গর্ভে জন্ম তাদের । শিশুদুটির পিছনে মেরুদন্ড ও স্পাইন জনগতভাবে জোড়া লাগানো । চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় একে Pygopagus Conjoined twin বলা হয়।

 

দরিদ্র পিতা- মাতার পক্ষে এ ব্যয়বহুল অস্ত্রোপচারের ব্যয়ভার বহন করা অসম্ভব। বিএসএমএমএম কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত তাদের চিকিৎসার সব ব্যয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বহন করেছে।

 

জটিল, কঠিন ও অত্যন্ত স্পর্শকাতর এ অস্ত্রোপচারের নেতৃত্ব দেবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউরোসার্জারি বিভাগের অধ্যাপক এবং সার্জারি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসেন। 

 

ইতোমধ্যে শিশু দুটির চিকিৎসা সংক্রান্ত একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় উপাচার্য অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ ১৯ সদস্যের একটি মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করে দিয়েছেন। অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসেনের নেতৃত্বে বোর্ডে পেডিয়াট্রিক সার্জারি, পেডিয়াট্রিক মেডিসিন, ভাসকুলা সার্জারি, অ্যানেসথেশিয়া, ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক রয়েছেন।

 

মেডিক্যাল বোর্ড সভায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা শিশু নুহা ও নাবার সার্বক্ষনিক খবর নিচ্ছেন। তিনি শিশুদ্বয়ের চিকিৎসার সকল খরচ বহন করছেন এবং যথাযথ চিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা সে নির্দেশনা বাস্তবায়নের সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।

 

তিনি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, শিশুদুটির চিকিৎসার জন্য যা যা করার তাই যেন আমরা করি। সেজন্য আমরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরের কারো সহযোগীতা লাগলে তাকেও ডাকা হবে।

 

সার্জারি অনুষদের ডিন ও নিউরো সার্জারী বিভাগের অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসেন বলেন, শিশু দুটির চিকিৎসা প্রক্রিয়া অত্যন্ত জটিল ও সময় সাপেক্ষ। বেশ কয়েক ধাপে এর অপারেশন করা লাগবে । নিউরো সার্জন, ইউরোলজিস্টস, শিশু সার্জন, বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জন, এনেস্থিওলজিস্ট, শিশু পুষ্টিবিদসহ বিভিন্ন বিভাগের চিকিৎসকের প্রয়োজন হবে।

 

শেখ হাসিনা বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইন্সিটিটিউটের প্রধান সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, কেস স্টাডি দেখে বুঝতে পারলাম, শিশু দুটির অপারেশন অত্যান্ত জটিল ও সময় সাপেক্ষ। এ অপারেশন বেশ কয়েক ধাপে করতে হবে।

 

মেডিক্যাল বোর্ডে ইউরোলজি বিভাগের অধ্যাপক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবুর রহমান দুলাল বলেন, মেরুদণ্ড জোড়া ছাড়ানোর পাশাপাশি ইউরোলজিক্যাল কিছু কাজ করতে হবে। ইউরোলজিক্যাল কাজও বেশ জটিল।

 

অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসেন বলেন, প্রায় পাঁচ মাস আগের কথা। তিনি চিকিৎসকদের একটি অনুষ্ঠানে অংশ নিতে কুড়িগ্রাম যান। সেখানে চিকিৎসকরা মেরুদণ্ড জোড়ালাগা এ নবজাতকের বিষয়টি তাকে জানান। তিনি এ শিশুদের দেখতে যান এবং উন্নত চিকিৎসায় তাদের ঢাকাতে আসতে অনুরোধ করেন।

 

অধ্যাপক হোসেন বলেন, ৫ মাস ধরে এ মেরুদণ্ড ও স্পাইন জোড়া লাগা শিশুরা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউরোসার্জারি বিভাগে তার অধীনে চিকিৎসাধীন। বয়স কম থাকায় তখনই অস্ত্রোপচার করা সম্ভব হয়নি। দুধাপে অস্ত্রোপচার হবে। সব ঠিক থাকলে এ মাসের শেষ সপ্তাহে প্রথম ধাপের অস্ত্রোপচার করা হবে। এক মাস পর দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত অস্ত্রোপচার হবে। দুধাপের অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হওয়ার পর আরও কয়েকমাস তাদের হাসপাতালে থাকতে হতে পারে।

 

তিনি বলেন, মেরুদণ্ড ও স্পাইন জোড়ালাগা শিশুর অস্ত্রোপচার অত্যন্ত জটিল স্পর্শকাতর। তবে আমরা আশাবাদী।

 

বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউরোসার্জারি বিভাগ জানায়, শিশুদের মায়ের অতীতে তার কোনো খারাপ প্রসূতি ইতিহাস ছিল না, অনিয়মিত মাসিকের সমস্যা ছিল না, কোনো পরিচিত অসুস্থতা ছিল না, এমনকি বিকিরণের সংস্পর্শে আসার কোনো ইতিহাস ছিল তিনি কখনো কোনো টেরাটোজেনিক ড্রাগ গ্রহণ করেননি। জন্মগত অসঙ্গতির কোনো পারিবারিক ইতিহাসও নেই। প্রসবপূর্ব ২০ সপ্তাহে গর্ভাবস্থায় যমজ দেখা যায়। তবে গর্ভাবস্থার ২৬ সপ্তাহে করা অ্যানোমলি স্ক্যানে কোনো জন্মগত অসঙ্গতি দেখা যায়নি। গর্ভাবস্থার বাকি সময়টা ছিল অস্বাভাবিক। গর্ভাবস্থার ৩৫ সপ্তাহে সিজারের মাধ্যমে বাচ্চাদের প্রসব করা হয়। জন্মের পরপরই তারা কেঁদে ওঠে। এ সময় তাদের জন্মের ওজন ছিল ৮ দশমিক ৫ কেজি। শিশুরা সুস্থ এবং কৌতুকপূর্ণ, তবে মূত্রনালী পৃথক হলেও তাদের মলদ্বার সংযুক্ত। শিশুরা শব্দ ও স্পর্শে সংবেদনশীল। তাদের যকৃত, গলব্লাডার, প্লীহা, অগ্ন্যাশয়, কিডনি এবং ইউরেটার্স স্বাভাবিক রয়েছে।

 

অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসেন আশা করেন অপারেশন সফল হলে বাংলাদেশে শৈল্য চিকিৎসা ব্যবস্থা আরো এক ধাপ এগিয়ে যাবে।

 

ভোরের আকাশ/আসা

মন্তব্য

Beta version