হাসপাতালে দেরি করে চিকিৎসা নিতে আসার কারণে বেশি ডেঙ্গুরোগী মারা গেছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
সোমবার সচিবালয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে নেপাল এবং সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশে ডেঙ্গুরোগী ও মৃত্যুর হারও বেড়েছিল।
আমরা লক্ষ্য করেছি আশপাশের দেশগুলোর মধ্যে থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, সিঙ্গাপুরে ডেঙ্গুরোগী বেড়েছিল। এ পর্যন্ত ৫৮ হাজার ডেঙ্গুরোগী পেয়েছি। তার মধ্যে ৩৬ হাজারই ঢাকায়, তাও সিটি করপোরেশন এলাকায়। সিটি করপোরেশনেই সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গুরোগী। সিটি করপোরেশনে লোকও বেশি বাস করে। এখানে অনেক ড্রেনেজ সিস্টেম আছে। অনেক রকমের পানি জমে আছে, সেটাও বেশি।
‘ঘরবাড়িও বেশি, যেখানে আবর্জনা ও পানি জমে থাকে, কনস্ট্রাকশন অনেক বেশি। সব জায়গায় স্প্রে করা প্রয়োজন। স্প্রে সিটি করপোরেশন ও পৌরসভা করে থাকে। এ বছর দেখা গেলো তারপরও মশা অনেক বেড়েছিল। এতে রোগীর সংখ্যাও বেড়েছে। আমরা বারিধারা থাকি সেখানেও অনেক মশা। সার্বক্ষণিক স্প্রে করলেও দেখি মশা দূর হয় না। সেজন্য সবাইকে সচেতন হতে হবে।’
মন্ত্রী বলেন, ডেঙ্গুর জন্য যে চিকিৎসা ব্যবস্থা আমাদের নেওয়ার কথা অর্থাৎ হাসপাতালের ব্যবস্থা রাখা, আমরা কিন্তু সেই ব্যবস্থা রেখেছিলাম। হাসপাতাল ডেঙ্গুরোগীতে ভরা ছিল। প্রত্যেক দিন প্রায় ১ হাজার রোগী আমরা পেতাম। সেই ১ হাজার রোগীকে আমাদের রাখতে হয়েছে, চিকিৎসা দিতে হয়েছে।
কেউই বিনা চিকিৎসায় হাসপাতাল থেকে যায়নি। আশার বিষয় হলো রোগীর সংখ্যা কমে আসছে। আগে এক হাজার রোগী প্রতিদিন আমরা পেয়েছি, আজ ৪০০ রোগী ভর্তি হয়েছে। তাতে অর্ধেরকেরও বেশি কমেছে। মৃত্যুর হারও কমেছে। গতকাল তিনজন মারা গেছে। তার আগে কয়েকদিন কোনো মৃত্যু হয়নি।
তিনি বলেন, গ্রামে কিন্তু এত মশা নেই, ঢাকা শহরে এটা বেশি। তাই ঢাকা শহর অন্যান্য সিটি করপোরেশনগুলোতে যদি বেশি নজরদারি করা হয় তাহলে হয়ত আগামীতে ডেঙ্গুর সংখ্যা কমবে। স্প্রে হয়ত যে পরিমাণ দরকার ছিল সে পরিমাণ দেওয়া সম্ভব হয়নি। কিন্তু তারা যথেষ্ট চেষ্টা করেছে, সেজন্যই ডেঙ্গু কমে এসেছে। আশা করি সামনে ভালো ওষুধ যথা সময়ে দেওয়া হবে।
জাহিদ মালেক বলেন, স্প্রে যথেষ্ট করার পরও যখন মশা এত বাড়ে তখন অনেক সময় মনে হয় এই ওষুধটা মশার জন্য কার্যকর হয়নি। মানুষের শরীরে যেভাবে অ্যান্টিবডি ডেভেলপ করেছে, মশারও তেমন অ্যান্টিবডি ডেভেলপ করেছে। ডেঙ্গুতে মৃত্যুর কারণ মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেছে। এছাড়াও রোগীরা হাসপাতালে দেরি করে আসছে।
তিনি বলেন, দেখা যাচ্ছে রোগী যখন ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে তখন অনেকে মনে করছেন সর্দি জ্বর হচ্ছে। সেটা ভেবে অনেক কালক্ষেপণ করা হচ্ছে, এতে রোগী সিরিয়াস হয়ে যাচ্ছে। হেমোরেজিক একটা ভাইরাসে আছে ডেঙ্গুর যা ইন্টারনাল বেøডিং করে, সেটা শুরু হলে রোগীকে বাঁচানো কষ্ট হয়ে যায়। দেরি করে আসার কারণে অনেক রোগী মারা গেছে।
ভর্তি হওয়ার তিনদিনের মধ্যে রোগী মারা গেছে ৭২ শতাংশ। যারা দীর্ঘ সময় থাকতে আসত পেরেছে তারা কিন্তু বেঁচে গেছে। যারা আসার তিনদিনের মধ্যে মারা গেছেন তারা সিরিয়াস কন্ডিশনে এসেছিল। সেদিকে সবার সচেতন থাকতে হবে, যাতে জ্বর হলে পরীক্ষাটা করে নেওয়া হয়। ডেঙ্গু হলে তাৎক্ষণিক চিকিৎসা নেওয়া প্রয়োজন।’
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য