মশা নিধনের বেশিরভাগ মেশিন নষ্ট

মশার উৎপাতে অতিষ্ঠ রাজবাড়ী পৌরবাসী

জহুরুল ইসলাম হালিম, রাজবাড়ী
মশার উৎপাতে অতিষ্ঠ রাজবাড়ী পৌরবাসী
রাজবাড়ীতে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। প্রতিদিনই ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ভর্তি হচ্ছে হাসপাতালে।

জহুরুল ইসলাম হালিম, রাজবাড়ী: রাজবাড়ীতে বেড়েছে মশার উপদ্রব। দিনে কিছুটা কম থাকলেও সন্ধ্যা হলে মশারি অথবা কয়েল ছাড়া থাকা কঠিন হয়ে পড়ছে বলে অভিযোগ পৌরবাসীর। রাজবাড়ী পৌরসভার মেয়র আলমগীর শেখ তিতু বলছেন, মশার উপদ্রব কমাতে প্রতিদিনই মশা নিধনের ওষুধ ছিটানো হচ্ছে। পৌর শহরের কিছু অপরিকল্পিত ড্রেন রয়েছে। সেগুলোর উন্নয়নে প্রকল্প গ্রহণ করা হবে। সেই সঙ্গে মশা নিধনের অর্ধেকের বেশি মেশিন নষ্ট হওয়ায় হিমশিম খেতে হচ্ছে। মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন পৌরবাসী। দ্রুতই মশা নিধনের জন্য আধুনিক মেশিন ক্রয় করা হবে বলে জানিয়েছে পৌর কর্তৃপক্ষ।

 

সরেজমিন পৌরসভার বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, পৌরসভার বিভিন্ন আবাসিক এলাকায় যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা ফেলে রাখা হয়েছে। অনেক এলাকার ঝোপঝাড়, জঙ্গল, ড্রেন নিয়মিত পরিষ্কার না করায় মশার উপদ্রব বাড়ছে। অধিকাংশ ড্রেনে পানির প্রবাহ না থাকায় ড্রেনগুলোতে ময়লা-আবর্জনা জমে আছে। ফলে ড্রেনে জমে থাকা পানি থেকে জন্ম নিচ্ছে মশার লার্ভা।

 

এদিকে সারা দেশের মতো রাজবাড়ীতেও বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। প্রতিদিনই জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হচ্ছে রোগী। পৌর শহরের সজ্জনকান্দা এলাকার ব্যবসায়ী মো. রাজু বলেন, এই এলাকাতে মশার অবস্থা খুবই খারাপ। দুপুর ২টা থেকে কয়েল জ্বালানো লাগে। কয়েল না জ্বালিয়ে ঘরে থাকা যায় না। আমার দোকানে কোনো ক্রেতা আসতে পারে না। মশার উৎপাত থেকে বাঁচতে মেয়র মহোদয়ের কাছে অভিযোগ দিয়েছি। তিনি বলেছেন, মশা নিধনের জন্য ওষুধ পাঠাবেন।

 

ওই এলাকার আরেক বাসিন্দা চম্পা খাতুন বলেন, ঘরের বাইরে থাকা যায় না মশার উৎপাতে। ঘরের মধ্যে থাকতে হলে দুপুর ২টা থেকে কয়েল জ্বালিয়ে রাখতে হয়। পৌরসভা থেকে মশা মারার জন্য আসে মাঝেমধ্যেই। ওষুধ ছিটানোর পর এক থেকে দুদিন মশা কম দেখা যায়। এরপর আবার যা তাই হয়ে যায়।

 

আকলিমা বেগম বলেন, মশার জন্য দিন-রাত সব সময় কয়েল জ্বালিয়ে রাখতে হয়। মশার যন্ত্রণায় বাচ্চারা লেখাপড়া করতে পারে না। এগুলো যদি মেয়র না দেখে তাহলে আমরা থাকব কীভাবে? এখন ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশিÑ সবসময় আতঙ্কের মধ্যে থাকতে হয়।

 

শিল্পী আক্তার বলেন, আমরা খুবই কষ্টে আছি। সন্ধ্যার পর থেকে রাত দশটা এগারোটা পর্যন্ত জেগে থাকে শহরের মানুষ। দুটি করে কয়েল জ্বালাই তাও মশা যায় না। আবার দুর্গন্ধ, একটু বৃষ্টি হলে ঘরে টিকতে পারি না। ভদ্র ও শিক্ষিত মানুষেরাই বেশি যত্রতত্র ময়লা ফেলে। যার কারণে দুর্গন্ধ বেশি ছড়ায়। আমরা চাই, পৌরসভা যেন এদিকে একটু নজর দেয়। মশা মারার জন্য ওষুধ ছিটায়।

 

রাজবাড়ীর সিভিল সার্জন ডা. ইব্রাহিম টিটোন বলেন, রাজধানী ঢাকার সঙ্গে এই জেলার যোগাযোগ সহজ ও কাছের হওয়ায় ডেঙ্গু রোগী বাড়ছে। জেলায় চলতি বছরের শুরু থেকে এ পর্যন্ত ১৮৫ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে সুস্থ হয়েছে ১৭৭ জন। বর্তমানে জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে ৮ জন। জ্বর এলে পরীক্ষা করা ও চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চলাসহ বাসাবাড়ির আশপাশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার আহŸান জানান তিনি।

 

রাজবাড়ী পৌরসভার মেয়র আলমগীর শেখ তিতু বলেন, মশার উপদ্রব ও মশা নিধনে নানা পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। প্রতিদিন বিকেল তিনটা থেকে পৌরসভার বিভিন্ন এলাকায় মশা নিধনের জন্য পৌরসভার একটি টিম কাজ করছে। এর পরও রাজবাড়ী পৌরবাসীকে বলতে চাই, আপনারা যার যার জায়গা থেকে সচেতন থাকবেন।

 

আপনাদের বাড়ির ফুলের টব পরিষ্কার রাখবেন, কোথাও যেন পানি জমে না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখবেন। পৌর শহরে কিছু ড্রেন অপরিকল্পিতভাবে রয়েছে। তারপরও প্রতি বছরই ড্রেনগুলো পরিষ্কারের জন্য পৌরসভা থেকে বাজেট দিয়ে থাকি। প্রতিনিয়তই ড্রেনগুলো পরিষ্কার রাখছি। মূলত জনগণকেই সচেতন থাকতে হবে, তাহলে আমরা মশার উপদ্রব এবং ডেঙ্গু থেকে মুক্তি পাব।

 

তিনি আরো বলেন, মশা নিধনের জন্য রাজবাড়ী পৌরসভার ফগার মেশিন রয়েছে ১২টি। এগুলো আধুনিক মেশিন না হওয়ায় মাঝেমধ্যেই বিকল হয়ে পড়ে। সে সময় মেকানিক এনে সচল করতে হয়। তবে এ মাসের মধ্যেই কিছু আধুনিক ফগার মেশিন ক্রয় করা হবে। বর্তমানে ৫টি ফগার মেশিন সচল রয়েছে। এর মধ্য থেকে কয়েকটিতে ‘ডিস্টার্ব’ দেখা দিয়েছে। ফলে মশা নিধনে হিমশিম খেতে হয় পৌর কর্তৃপক্ষকে।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য