-->

অনিরাপদ গর্ভপাত মাতৃমৃত্যুর প্রধান কারণ

নিজস্ব প্রতিবেদক
অনিরাপদ গর্ভপাত মাতৃমৃত্যুর প্রধান কারণ

বাংলাদেশে মাতৃমৃত্যুর একটি প্রধান কারণ অনিরাপদ গর্ভপাত। অনিরাপদ গর্ভপাতজনিত মাতৃমৃত্যু কমানোর জন্য ‘মাসিক নিয়মিত করণ’ অত্যন্ত জরুরী। এ বিষয়ে শুধু নারীই না; পুরুষদেরও সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ উইমেন্স হেলথ কোয়ালিশনের (বিডব্লিউএইচসি) চেয়ারপারসন নাসিমনু আরা হক মিনু।

 

বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে বাংলাদেশ উইমেন্স হেলথ কোয়ালিশন (বিডব্লিউএইচসি) আয়োজিত অনুষ্ঠানে সংস্থাটির গত ৪০ বছরের সফলতা এবং ভবিষ্যত পরিকল্পনা সম্পর্কে অবহিতকরণ অনুষ্ঠান ‘মিট দ্য প্রেস’ এ এসব কথা বলেন তিনি। বাংলাদেশ উইমেন্স হেলথ কোয়ালিশন (বিডব্লিউএইচসি) একটি জাতীয় পর্যায়ের বেসরকারি সংস্থা। সংস্থাটি ১৯৮০ সাল থেকে বাংলাদেশের সুবিধাবঞ্চিত মহিলাদের নিরাপদ মাসিক নিয়মিতকরণ (এমআর) সেবা দিয়ে আসছে।

 

নাসিমনু আরা হক বলেন, মাতৃমৃত্যুর অন্যতম কারণগুলির মধ্যে একটি হলো অনিরাপদ গর্ভপাত। তাই একজন গর্ভবতীকে মাসিক নিয়মিতকরণের আগে অবশ্যই স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে হবে। মাসিক নিয়মিতকরণের ফলোআপ করা খুবই গুরুত্ত্বপূর্ণ। কোন জটিলতা বা স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত ডাক্তার বা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে যেতে হবে। দেশকে এগিয়ে নিতে হলে নারীদের সামনে নিয়ে আসতে হবে। নারীর স্বাস্থ্যের দিকে নজর দিতে হবে।

 

নাসিমুন আরা হক মিনু আরও বলেন , আগে যেখানে প্রতি এক লাখে ১৬৫ জন মায়ের মৃত্যূ হতো এখন সেটি কমে ১৪৫ নেমেছে। আমরা সন্তান জন্ম দিতে একটি মায়েরও মৃত্যু চাইনা। এই সংখ্যা জিরোতে আনতে সকলকে কাজ করতে হবে।

 

সংস্থাটির ভাইস চেয়ারপারসন জাহানারা সাদেক বলেন, ১৯৯০ সালে ‘এম আর’ ( গর্ভপাত) কর্মসূচি শুরু করেছিলাম। তখন চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ করেছি বলে আজ কথা বলতে পারছি। সেই সময়ে ট্যাবু (সামজিকভাবে যেটি প্রকাশ্যে বলা মানা) ভাঙাই ছিলো চ্যালেঞ্জ। আজ অনেকটাই এগিয়েছি বলতে হবে। আমরা এখন মেয়েদের ‘মাসিক’ নিয়ে কথা বলতে পারছি। তবে এই কথা বলাতেই আমরা সীমাবদ্ধ নই। আমরা এখন কাজ করছি প্রত্যন্ত অঞ্চলে দরিদ্র নারীদের নিয়ে। চরাঞ্চল বা প্রত্যন্ত অঞ্চল, যেখানে এখনো স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছাতে পারেনি, আমরা তাদের কাছে সেবা নিয়ে যেতে কাজ করছি।

 

সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক শরীফ হেলাল বলেন, দেশের বিভন্ন স্থানে স্যাটেলাইট স্বাস্থ্য কেন্দ্র স্থাপন করে বিপুল সংখ্যক জনগণকে নিরাপদ এমআর, পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি, শিশু স্বাস্থ্য, টিকাদান কর্মসূচিসহ সাধারণ স্বাস্থ্য সেবার আওতায় আনতে পেরেছি। এমনকি নিরাপদ পানি, স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা, বাল্য বিয়েরোধসহ বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে সাধারণ জনগণকে সচেতন করে তুলতে সক্ষম হয়েছি। আমরা চা শ্রমিকদের নিয়ে কাজ করছি। এখন কাজ করবো চরাঞ্চলের মানুষদের নিয়ে। তাদের নিয়ে কাজ করাটা এখনো চ্যালঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জকে আমরা গ্রহণ করেছি আগামীর বাংলাদেশকে সুন্দর করার জন্য।

 

১৯৮০ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত বিডব্লিউএইচসি নারী ও শিশু স্বাস্থ্য সেবা নিয়ে কাজ করে আসছে। এ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি ৫ কোটি ২১ লাখ ৯৬ হাজার ০৮৯ জন সেবাগ্রহীতার মধ্যে এমআর ও এমআর পরবর্তীসেবা দিয়েছে ২ লাখ ৪২ হাজার ৭৫৪ জন নারীকে, পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি প্রদান করেছে ৯৮ লাখ ৯৫ হাজার ৩৩৫ জনকে, প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা ১ কোটি ৬ লাখ ৩০ হাজার ৯৮৭, টিকা প্রদান করেছে ২ কোটি ৩ লাখ ৮০ হাজার ৩৬৯ জনকে, মাতৃত্বকালীন সেবা দিয়েছে ৫ লাখ ২৯ হাজার ৫০২ জনকে, কাউন্সেলিং সেবা দিয়েছে ১ কোটি ৫ লাখ ১৭ হাজার ১০২ জনকে। সর্বমোট ৭ কোটি ৮৮ লাখ ২২ হাজার ৩৫৯ জনকে স্বাস্থ্যসেবাসহ স্বাস্থ্য শিক্ষা প্রদান করে।

 

দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে সফলতার সাথে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের ধারাবাহিকতায় বিডব্লিউএইচসি অর্জন করেছে অসংখ্য দেশী-বিদেশী পুরস্কার। বিডব্লিউএইচসি ভবিষ্যতে সুবিধাবঞ্চিত জনসাধারণের প্রয়োজনে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে একাধিক স্বাস্থ্যসেবা স্থাপন করবে যেখানে উন্নত স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা হবে। পাশাপাশি বিডব্লিউএইচসি স্বয়ং সম্পুর্ণতা অর্জনের জন্য আয়বর্ধক কার্যক্রম গ্রহণ করে।

 

আলোচনার শেষে উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন বিডব্লিউএইচসির নির্বাহী পরিচালক শরীফ হেলাল।

 

ভোরের আকাশ/আসা

মন্তব্য

Beta version