শহিদুল ইসলাম সাহেদ: পাঁচ মাস বয়সের শিশু তাকরিম। শীতে থর থর করে কাঁপছে। পুরো শরীর তার ব্যান্ডেজে মোড়ানো। শুধু তাকরিম নয়, এমন অনেক দগ্ধ শিশুকে চিকিৎসা নিতে দেখা গেছে সেখানে। যে বয়সে মায়ের কোলো আদরে-আহ্লাদে থাকার কথা, খেলা করার কথা সেই সময়ে হাসপাতালের বিছানায় সময় কাটছে নিষ্পাপ শিশুদের।
শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের জরুরি বিভাগে গিয়ে দেখা গেছে এমন দৃশ্যপট। নোয়াখালী জেলার হাতিয়ার বুরিরচর এলাকায় দগ্ধ হয় অবুঝ তাকরিম। চিকিৎসার জন্য তাকে নিয়ে আসা হয় ঢাকায়। রান্নার হাড়িতে সিদ্ধ হয়েছে তাকরিম। মা রোকেয়া তখন রান্নায় ব্যস্ত। সেই মুহূর্তে তাকরিম কান্না করলে নিজে কোলে দিতে বলেন রোকেয়া। তাকরিমের বোনের কোল থেকে মায়ের কাছে দিতে গেলেই দুর্ঘটনাটি ঘটে।
তাকরিমের মামা আব্দুল মতিন বলেন, পুরো শরীর গরম তরকারিতে দগ্ধ হয়ে অসহনীয় যন্ত্রনায় কাতরাচ্ছে শিশুটি। শিশুর বাবা কাওসার হাতিয়া এলাকার মাছ ধরার নৌকার জেলে।
শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের প্রধান সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন ভোরের আকাশকে জানান, এই শীতে পোড়া রোগীর সংখা একটু বেশি। ঠান্ডা থেকে রক্ষা পেতে অনেকে আগুনের তাপ নেন। আবার অনেকে গরম পানি করতে গিয়ে দগ্ধ হচ্ছেন। এ বিষয়ে সকলের সচেতনতা জরুরি বলে মনে করেন তিনি। নারায়ণগঞ্জ সিদ্ধিরগঞ্জের সিআইখোলা বৌবাজার থাকতো তিন বছরের শিশু কাইফ। তার ফুফু গোসলের জন্য পানি গরম করে নিচে রেখে কাপড় আনতে ঘরের বাইরে যান। এ সময় ফুটন্ত পানিতে হাত দিলে মুহূর্তেই তার হাতটি দগ্ধ হয়ে যায়।
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ এলাকার আট বছরের শিশু নাহিদা দগ্ধ হয়েছে চুলার আগুনে। শীতের সকালে মক্তব থেকে এসে তাপ পোহাতে বসেছিল মাটির চুলার পাশে। সেখানে রান্না করছিলেন নাহিদার মা। তাপ পোহাতে গিয়ে হঠাৎ নাহিদার শরীরে আগুন লেগে যায়। তাকে দ্রুত স্থানীয় ক্লিনিকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখান থেকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের জরুরি বিভাগে চিকিৎসার জন্য পাঠিয়ে দেয়া হয়।
শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের গিয়ে দেখা গেছে দগ্ধ শিশুদের আহাজারি। প্রতিদিন ২৫ থেকে ৩০ জন শিশু দগ্ধ হয়ে চিকিৎসা নিতে আসছে এই হাসপাতালে। এই ইনস্টিটিউটের রেসিডেন্ট সার্জন ডা. এসএম আউয়াল হোসেন ভোরের আকাশকে জানান, শীত এলেই আগুনে দগ্ধের সংখ্যা বেড়ে যায়।
সাধারণত বার্নে আসা রোগীর মধ্যে গরম পানি, গরম দুধ, গরম তেল এবং গরম পানিতে দগ্ধ রোগীর সংখ্যা বেশি। তরল জাতীয় পদার্থে দগ্ধ হওয়া রোগীদের প্রায় সবাই নারী ও শিশু। এর বাইরে ৩০ শতাংশ আগুনে পোড়া রোগী। আগুনে পোড়ার মধ্যে রয়েছে, তাপ পোহাতে গিয়ে দগ্ধ, এসি, সিলিন্ডার বিস্ফোরণ, গ্যাস পাইপ লিকেজ থেকে আগুনে দগ্ধ হওয়া রোগী।
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য