-->

ঢামেকের ছাদে আনিছুরের জন্মদিন পালন, সেবা তত্ত্বাবধায়ককে কারণ দর্শানোর নোটিশ

নিজস্ব প্রতিবেদক
ঢামেকের ছাদে আনিছুরের জন্মদিন পালন, সেবা তত্ত্বাবধায়ককে কারণ দর্শানোর নোটিশ

ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের ছাদে কর্তব্যরত নার্সদের নিয়ে সিনিয়র স্টাফ নার্স আনিছুর রহমানের জন্মদিন পালন করায় ঢামেকের সেবা তত্ত্বাবধায়ক কারিমা খাতুনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তর। কেন তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে না- নোটিশ পাওয়ার সাত কর্মদিবসের মধ্যে তার ব্যাখ্যা যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে দাখিল করতে বলা হয়েছে।

 

গত ১৯ ফেব্রুয়ারি নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের পরিচালক (শিক্ষা ও শৃঙ্খলা) মো. রশিদুল মান্নাফ কবীর (উপসচিব) এ কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন। গত ২৩ জানুয়ারি সেবা তত্ত্বাবধায়ক কারিমা খাতুনের উপস্থিতিতে নার্সদের নিয়ে ঢামেকের ছাদে আনিছুর রহমানের জন্মদিন পালন করা হয়। ওইদিনই ঢামেক কর্তৃপক্ষ দুদিনের মধ্যে ব্যাখ্যা চেয়ে সেবা তত্ত্বাবধায়ক কারিমা খাতুন ও সিনিয়র স্টাফ নার্স আনিছুর রহমানকে চিঠি দেয়।

 

নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তর থেকে দেয়া কারণ দর্শানো নোটিশে বলা হয়, ‘পরিচালকের কার্যালয়, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকার ২৩/০১/২০২৩ খ্রি. তারিখের ৯৮৩নং স্মারক পত্রের মাধ্যমে জানা যায় যে, আপনি কারিমা খাতুন, পিতা- মানিক উদ্দিন খাঁন, সেবা তত্ত্বাবধায়ক, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা গত ২৩/০১/২০২৩ খ্রি. তারিখ বেলা ১১.০০টায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অনুমতি ব্যতীত হাসপাতালের অভ্যন্তরে ডিউটিরত নার্সদের নিয়ে ব্যক্তিগত অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। এছাড়া একাধিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী আপনি ঐ দিন সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ছাদে আনিছুর রহমান, সিনিয়র স্টাফ নার্স-এর জন্মদিন পালন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে একাধিক কর্মরত নার্সসহ উপস্থিত ছিলেন।’

 

‘আপনার এরূপ কর্মকাণ্ড সরকারি দায়িত্ব পালনে অবহেলার সামিল, অফিস চলাকালীন সরকারি দায়িত্বের প্রতি অবজ্ঞার শামিল এবং হাসপাতালে অবস্থিত রোগীদের চিকিৎসা সেবার অন্তরায়, যা অসদাচরণের পর্যায়ভুক্ত।’ ‘এমতাবস্থায়, উপরোক্ত অসদাচরণের কারণে কেন আপনার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, পত্র প্রাপ্তির সাত কার্যদিবসের মধ্যে তার ব্যাখ্যা যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে দাখিলের জন্য বলা হলো।’

 

আনিছুরকে ঢামেক কর্তৃপক্ষের দেয়া চিঠিতে বলা হয়, ‘আপনি অদ্য ২৩/০১/২০২৩ তারিখ বেলা ১১.০০টায় হাসপাতালের অভ্যন্তরে জন্মদিনের অনুষ্ঠান পালন করেন মর্মে তথ্য পাওয়া যায়। হাসপাতালের কর্তৃপক্ষের অনুমতি ব্যতিরেকে হাসপাতালের অভ্যন্তরে অধিকসংখ্যক ডিউটিরত নার্সদের নিয়ে এ ধরনের জন্মদিনের অনুষ্ঠান অপরাধ এবং বিধি বিধানের পরিপন্থি। এর ফলে আপনার দায়িত্ব পালনসহ হাসপাতালের নার্সিং সেবার কার্যক্রমে রোগীদের চিকিৎসা সেবা এবং প্রশাসনিক কাজে জটিলতার সৃষ্টি হয়। এ ধরনের কার্যকলাপ সরকারী চাকুরী বিধির পরিপন্থি।’

 

তবে এ বষিয়ে এখন পর্যন্ত নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তর থেকে আনিছুর রহমানকে কোনো চিঠি দেয়া হয়েছে কিনা, তা জানা যায়নি।

 

উল্লেখ্য, ২০২১ সালের ১৯ অক্টোবর আনিছুর রহমানকে ঢামেক হাসপাতাল থেকে হবিগঞ্জের আজমেরিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সিনিয়র স্টাফ নার্স হিসেবে বদলি করা হয়। সেখানে যোগদান না করে দুদিন পর ২১ অক্টোবর বদলি আদেশের বিরুদ্ধে ঢাকার প্রশাসনিক ট্রাইবুনাল-১ এ স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব, নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবং ঢামেক হাসপাতালের পরিচালককে বিবাদী করে একটি মামলা করে দেন। ২০২১ সালের ৪ নভেম্বর প্রশাসনিক ট্রাইবুনাল-১ এর আদেশে তিন মাসের জন্য আনিছুরের বদলি/পদায়ন স্থগিত করা হয়। এরপর ২০২২ সালের ২ ফেব্রুয়ারি আবার একই ট্রাইবুনাল মামলাটি নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তার বদলি/পদায়ন স্থগিত করেন। কিছুদিন পর আনিছুর রহমান ঢাকার প্রশাসনিক ট্রাইবুনাল-১ এ দায়েরকৃত মামলাটি প্রত্যাহার করেন। কিন্তু যোগদান করেননি বদলিকৃত কর্মস্থলে। নিয়মিত তাকে দেখা গেছে ঢামেকে। ঢামেকের হাজিরা খাতায়ও তিনি স্বাক্ষর করেছেন।

 

আনিছুর রহমানের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য গত ৪ জানুয়ারি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব বরাবর ঢামেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ একটি চিঠি পাঠায়। সেখানে আনিছুর রহমানের কর্মকাণ্ডের বিবরণ উল্লেখ করে বলা হয়, এমতাবস্থায় আনিছুর রহমানকে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক যে কর্মস্থলে পদায়ন করা হবে সে ব্যাপারে ঢামেক কর্তৃপক্ষের কোনো আপত্তি থাকবে না।

 

গত ২৩ জানুয়ারি ছিল আনিছুর রহমানের জন্মদিন। ঢামেকে পদায়ন না থাকলেও সেদিন সকালে ঢামেক হাসপাতালের পুরোনো বিল্ডিংয়ের ছাদে কর্তব্যরত শতাধিক নার্সকে সঙ্গে নিয়ে কেকে কেটে ঘটা করে জন্মদিনও পালন করেন। এতে রোগীদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়। বিব্রত হন চিকিৎসকরা। হঠাৎ করে তারা নার্স খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। ওইদিনই ঢামেক কর্তৃপক্ষ ব্যাখ্যা চেয়ে আনিছুর রহমান এবং ঢামেকের সেবা তত্ত্বাবধায়ক (মেট্রন) কারিমা খাতুনকে চিঠি দেয়।

 

এরপর গত ১২ ফেব্রুয়ারি নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) মো. নাসির উদ্দিন (উপসচিব) স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে আনিছুর রহমানকে আবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বদলি করা হয়। এতে অনেকেই বিস্ময় প্রকাশ করেছেন।

 

ভোরের আকাশ/আসা

মন্তব্য

Beta version