বাবুল আহমেদ, মানিকগঞ্জ: অপারেশন থিয়েটারের জরুরি যন্ত্র ডায়াথার্মি। মেশিনটি উচ্চতাপ সৃষ্টি করে। এই মেশিনটির মাধ্যমে সবচেয়ে কম রক্তপাতের মাধ্যমে বড় বড় অস্ত্রোপচার করা হয়ে থাকে। ওটি (অপারেশন থিয়েটার বা অস্ত্রোপচার কক্ষ) টেবিলে এই মেশিনটি অপরিহার্য। প্রতিটি ডায়াথার্মি মেশিনের ওজন প্রায় সাত কেজি। প্রতিটি মেশিনের দাম কমপক্ষে দুই লাখ টাকা। মানিকগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেলা হাসপাতালে এ ধরনের ১০টি ডায়াথার্মি মেশিনের হদিস মিলছে না। সম্প্রতি সম্পদ ব্যবস্থাপনার অনলাইন এন্ট্রি করার সময় বিষয়টি কর্তৃপক্ষের নজরে আসে। হদিস না মেলায় এ বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। এদিকে হাসপাতালের অস্ত্রোপচার কক্ষে (ওটি) হদিস না মেলায় ১০টি ডায়াথার্মি মেশিন সম্পর্কে জবাব দেয়ার জন্য ১ ফেব্রুয়ারি হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. বাহাউদ্দিন ওটির ইনচার্জ সিনিয়র স্টাফ নার্স জান্নাত আরা আক্তারকে একটি নোটিশ দেন।
নোটিশ সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালে সেন্ট্রাল মেডিকেল স্টোর ডিপার্টমেন্ট (সিএমএসডি) থেকে ১০টি বাইপোলার ডায়াথার্মি মেশিন হাসপাতালের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়। ওই বছরের ২৯ নভেম্বর সনি ট্রেডিং নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের টেকনিশিয়ানরা এসে অস্ত্রোপচার কক্ষে (ওটি) মেশিনগুলো সংযোজন করে দিয়ে ওটির ইনচার্জ জান্নাত আরা আক্তারের কাছ থেকে সইসহ সনদ নিয়ে যান। সম্প্রতি সম্পদ ব্যবস্থাপনার অনলাইন এন্ট্রি করার সময় সংশ্লিষ্ট পরিদর্শক হাসপাতালের অস্ত্রোপচারকক্ষে ডায়াথার্মি মেশিনগুলো পাননি। যেহেতু জান্নাত আরা আক্তার সই করে মেশিনগুলো বুঝে নিয়েছেন এবং ওটির ইনচার্জ হিসেবে তিনি দায়িত্বে আছেন, তাই মেশিনগুলোর বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে তিন দিনের মধ্যে জবাব দেয়ার জন্য তাকে নির্দেশ দিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
এদিকে সাত কর্মদিবস অর্থাৎ ১৩ ফেব্রুয়ারি মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার কথা থাকলেও আরো সময় চেয়েছে তদন্ত কমিটি।
এ বিষয়ে হাসপাতালের স্টোরকিপার (ভারপ্রাপ্ত) মো. লুৎফর রহমান বলেন, ডায়াথার্মি যন্ত্রগুলো ওই সময়ে ওটিকে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। যন্ত্রগুলো বুঝে পেয়ে ওই সময়ের তত্ত্বাবধায়কসহ ওটির ইনচার্জ জান্নাত আরা আক্তার স্বাক্ষর করেন। সেই হিসেবে যন্ত্রগুলো ওটিতে থাকার কথা। নোটিশের জবাব দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ওটির ইনচার্জ জান্নাত আরা আক্তার। বিষয়টি তদন্তাধীন থাকায় আর কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।
এ বিষয়ে ওই সময়ের দায়িত্বরত হাসপাতালের তত্তাবধায়ক ডা. আরশাদ উল্লাহর সঙ্গে যোগাযোগ করলে বিষয়টি তদন্তাধীন থাকায় কোনো মন্তব্য করেননি।
তদন্ত কমিটির এক কর্মকর্তা জানান, বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। যন্ত্রগুলো আসলে কোথায় আছে, তা বের করতে নথিপত্র পর্যালোচনা করা হচ্ছে। যদি কোনো অনিয়ম হয়ে থাকে, সেগুলোও প্রতিবেদনে তুলে ধরা হবে।
এ বিষয়ে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. বাহাউদ্দিন বলেন, বিষয়টি নজরে আসার পর তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ভোরের আকাশ/আসা
মন্তব্য