দুইমাস পর টনক নড়লো নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের। অবশেষে ঢামেকের সিনিয়র স্টাফ নার্স সেই আনিছুর রহমানকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তর। কেন তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে না- নোটিশ পাওয়ার সাত কর্মদিবসের মধ্যে তার ব্যাখ্যা দাখিল করতে বলা হয়েছে।
বুধবার ২২ মার্চ নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের পরিচালক (শিক্ষা ও শৃঙ্খলা) মো. রশিদুল মান্নাফ কবীরের (উপসচিব) স্বাক্ষরে এ কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
এর আগে আনিসুরকে নোটিশ না দিলেও জন্মদিন পালনের ওই ঘটনায় এর আগে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের সেবা তত্ত্বাবধায়ক কারিমা খাতুনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছিল নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তর।
এছাড়াও জন্মদিন পালন করার ঘটনায় ওইদিনই ঢামেক কর্তৃপক্ষ সেবা তত্ত্বাবধায়ক কারিমা খাতুন ও সিনিয়র স্টাফ নার্স আনিছুর রহমানকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছিল।
নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তর থেকে আনিছুরকে দেয়া কারণ দর্শানো নোটিশে বলা হয়, ‘পরিচালকের কার্যালয়, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকার ২৩/০১/২০২৩ খ্রি. তারিখের ১৮৩ নং স্মারক পত্র এবং একাধিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী আপনি আনিছুর রহমান, পিতা- সোহরাব আলী সিকদার, সিনিয়র স্টাফ নার্স, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা গত ২৩/০১/ ২০২০ খ্রি. তারিখ বেলা অনুমান ১১.০০ টায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অনুমতি ব্যতীত হাসপাতালের অভ্যন্তরে ডিউটিরত নার্সদের নিয়ে ব্যক্তিগত অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। আপনার এরুপ কর্মকান্ড সরকারি দায়িত্ব পালনে অবহেলার সামিল, অফিস চলাকালীন সরকারি দায়িত্বের প্রতি অবজ্ঞার সামিল এবং হাসপাতালে অবস্থিত রোগীদের চিকিৎসা সেবার অন্তরায়। যা অসদাচরণের পর্যায়ভুক্ত। এমতাবস্থায়, উপরোক্ত অসদাচরণের কারণে কেন আপনার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, পত্র প্রাপ্তির (সাত) কার্যদিবসের মধ্যে তার ব্যাখ্যা যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে দাখিলের জন্য বলা হলো।’
গত ২৩ জানুয়ারি সেবা তত্ত্বাবধায়ক কারিমা খাতুনের উপস্থিতিতে নার্সদের নিয়ে ঢামেকের ছাদে আনিছুর রহমানের জন্মদিন পালন করা হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই হাসপাতালের অভ্যন্তরে ডিউটিরত নার্সদের নিয়ে ব্যক্তিগত অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এ ঘটনার দুইমাস পর নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তর এ নোটিশ দিলো।
উল্লেখ্য, ২০২১ সালের ১৯ অক্টোবর আনিছুর রহমানকে ঢামেক হাসপাতাল থেকে হবিগঞ্জের আজমেরিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সিনিয়র স্টাফ নার্স হিসেবে বদলি করা হয়। সেখানে যোগদান না করে দুদিন পর ২১ অক্টোবর বদলি আদেশের বিরুদ্ধে ঢাকার প্রশাসনিক ট্রাইবুনাল-১ এ স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব, নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবং ঢামেক হাসপাতালের পরিচালককে বিবাদী করে একটি মামলা করে দেন। ২০২১ সালের ৪ নভেম্বর প্রশাসনিক ট্রাইবুনাল-১ এর আদেশে তিন মাসের জন্য আনিছুরের বদলি/পদায়ন স্থগিত করা হয়। এরপর ২০২২ সালের ২ ফেব্রুয়ারি আবার একই ট্রাইবুনাল মামলাটি নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তার বদলি/পদায়ন স্থগিত করেন। কিছুদিন পর আনিছুর রহমান ঢাকার প্রশাসনিক ট্রাইবুনাল-১ এ দায়েরকৃত মামলাটি প্রত্যাহার করেন। কিন্তু যোগদান করেননি বদলিকৃত কর্মস্থলে। নিয়মিত তাকে দেখা গেছে ঢামেকে। ঢামেকের হাজিরা খাতায়ও তিনি স্বাক্ষর করেছেন। আনিছুর রহমানের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য গত ৪ জানুয়ারি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব বরাবর ঢামেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ একটি চিঠি পাঠায়। এরপর গত ১২ ফেব্রুয়ারি নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) মো. নাসির উদ্দিন (উপসচিব) স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে আনিছুর রহমানকে আবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বদলি করা হয়।
ভোরের আকাশ/আসা
মন্তব্য