স্বাস্থ্যে ১০ কোটি টাকার কাজে ঠিকাদার নিয়োগে দুর্নীতি ও অনিয়ম তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের যুগ্ম সচিব (বাজেট-১) মো. আবদুছ সালামকে আহ্বায়ক এবং সিনিয়র সহকারী সচিব (এইচ আর-২) সুজিৎ দেবনাথকে সদস্য সচিব ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উপপরিচালক (হাসপাতাল) ডা. মইনুল ইসলামকে সদস্য করে বুধবার এ কমিটি করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী ১০ কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের উপসচিব মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে কমিটি গঠনের কথা জানানো হয়েছে। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে- ‘স্বাস্থ্য অধিদপ্তরাধীন অপারেশনাল প্ল্যান ‘লাইফস্টাইল, হেলথ এডুকেশন অ্যান্ড প্রমোশন’-এর ১০ (দশ) কোটি টাকার স্বাস্থ্যসেবা প্যাকেজের কনসালট্যান্ট/ঠিকাদার নিয়োগে দুর্নীতি ও অনিয়মের বিষয়ে তদন্ত করার জন্য নিম্নরূপ কমিটি গঠন করা হলো।’
কমিটির কার্যপরিধি সম্পর্কে আদেশে বলা হয়েছে- কমিটি প্রাপ্ত অভিযোগ ও অন্যান্য প্রাসঙ্গিক কাগজপত্র ও তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনা করবে এবং প্রয়োজনে অভিযোগ-সংশ্লিষ্ট স্থানসমূহ পরিদর্শন করবে; কমিটি ১০ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করবে; উক্ত বিষয়ে কোনো অনিয়ম হয়ে থাকলে দায়ী ব্যক্তি/ব্যক্তিবর্গকে চিহ্নিত করবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের (লাইফস্টাইল, হেলথ এডুকেশন অ্যান্ড প্রমোশন) দশ কোটি টাকার স্বাস্থ্যসেবা প্যাকেজের কনসালট্যান্ট ও ঠিকাদার নিয়োগে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তিন কর্মকর্তার দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ তোলেন ধ্রুব কথাচিত্র নামের একটি প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী মো. আশরাফুল আলম। তিনি ১০ লাখ টাকা অগ্রিম কমিশন দিয়েও কাজ না পাওয়ার কথা উল্লেখ করে গত ২২ ফেব্রুয়ারি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও গত ৫ মার্চ দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) পৃথক পৃথক লিখিত অভিযোগ করেন। এ নিয়ে গত ১৯ মার্চ ‘১০ লাখ টাকা কমিশন দিয়েও কাজ পায়নি ধ্রুব কথাচিত্র’ শিরোনামে দৈনিক ভোরের আকাশে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এ রিপোর্ট প্রকাশের পর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় তদন্ত কমিটি গঠন করল।
ওই সময় এ বিষয়ে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান ভোরের আকাশকে বলেছিলেন, ‘সরকারি কর্মকর্তা এবং ঠিকাদার উভয়পক্ষের যোগসাজশে দুর্নীতি করে লাভবান হওয়া ঘুষ গ্রহণ এবং দেয়ার চেয়েও গুরুতর অপরাধ। কেননা সরকারি কর্মকতা-কর্মচারী এবং ঠিকাদাররা মিলে সমঝোতার দুর্নীতির মাধ্যমে যেভাবে লাভবান হয়ে থাকেন, তাতে রাষ্ট্রীয় সম্পদের আত্মসাৎসহ বহুমুখী ক্ষতি হয়, যার বোঝা জনগণকে বইতে হয়। সরকারি ক্রয়বিধির লঙ্ঘন হয়, উন্মুক্ত প্রতিযোগিতার মাধ্যমে ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করে ক্রয় ও সরবরাহ সম্পন্ন করার সুযোগ থেকে রাষ্ট্রকে বঞ্চিত করা হয়। রাষ্ট্রের সম্পদ বিনষ্ট হয়। যিনি কমিশন দেয়ার কথা স্বীকার করেছেন, আর যে সরকারি কর্মকর্তারা তা নিয়ে কাজ দিতে চেয়েছেন বা অধিকতর কমিশনে কাজ দিয়েছেন এবং যাদের কাজ দেয়া হয়েছে সকল পক্ষই সমঝোতার দুর্নীতি করেছেন। সেজন্য দুদকের উচিত, সকল পক্ষকেই কঠোরভাবে জবাবদিহির মধ্যে আনা। অন্যথায় এ ধরনের সিন্ডিকেটের হাতে রাষ্ট্র কাঠামোর জিম্মি হওয়ার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হবে।’
ধ্রুব কথাচিত্রের স্বত্বাধিকারী মো. আশরাফুল আলম লিখিত অভিযোগে বলেন- ‘বিগত দুই অর্থবছর ধরে বর্তমান লাইন ডাইরেক্টর ডা. মো. মিজানুর রহমান আরিফ যোগদানের পর থেকে ১০ শতাংশ হারে কোটি টাকা কমিশন নিয়ে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নিজস্ব পছন্দের প্রতিষ্ঠানকে কাজ দিচ্ছেন। আর এ কমিশনের টাকা সংগ্রহের দায়িত্ব পালন করছেন দরপত্র মূল্যায়ন/অন্য কমিটির সভাপতি ডা. মো. শাখাওয়াত হোসেন, প্রোগ্রাম ম্যানেজার (টিএসডি) এবং দরপত্র মূল্যায়নের জন্য কমিটির সদস্য মো. মোখলেচুর রহমান, সহকারী প্রধান (কাঃ সঃ) ও ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার। এই দুই কর্মকর্তা বিগত ২০২১-২২ অর্থবছরে আমাকে একটি সার্ভিস প্যাকেজের কাজ দেয়ার কথা বলে আমার কাছ থেকে নগদ দশ লাখ টাকা কমিশন নেন। প্রকাশ থাকে যে, ওই দশ লাখ টাকা ফেরত না দিয়ে আমাকে ২০২২-২৩ অর্থবছরে আহ্বানকৃত প্যাকেজ নং-৭ প্রোডাকশন অব এসবিসিসি ম্যাটারিয়াল অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইন্টারভেনশন ফর প্রিভেনশন ডায়াবেটিসের প্রস্তাব দাখিলের পরামর্শ প্রদান করেন এবং আমাকে ওই কাজ দিয়ে তাদের নেয়া দশ লাখ টাকা সমন্বয় করে দেবেন।’
অভিযোগে আরো বলা হয়, ‘আমি বাধ্য হয়ে তাদের কথায় বিশ্বাস করে যথানিয়মে সব কাগজপত্র, অভিজ্ঞতা, দক্ষতা ও আর্থিক সক্ষমতা সংযুক্ত করি। এক্সপ্রেশন অব ইন্টারেস্ট (ইওআই) দাখিল করি। আমার এক্সপ্রেশন অব ইন্টারেস্ট (ইওআই) যাচাই-বাছাই করে আমাকে রিকোয়েস্ট ফর প্রোপোজাল প্রদান করেন। আমরা রিকোয়েস্ট ফর প্রপোজালের চাহিদা মোতাবেক সব তথ্যাদি সংযুক্ত করে Technical & Financial প্রস্তাব দাখিল করি। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, আমার কাছ থেকে অগ্রিম নগদ দশ লাখ টাকা কমিশন নেয়ার পরও দরপত্র মূল্যায়ন ক্রয় কমিটির সভাপতি ডা. মো. শাখাওয়াত হোসেন এবং দরপত্র মূল্যায়ন ক্রয় কমিটির সদস্য মো. মোখলেছুর রহমান আমার Technical & Financial প্রস্তাব বিবেচনা না করে অধিক কমিশন গ্রহণ করে অযোগ্য, অদক্ষ ও ভুয়া প্রতিষ্ঠানকে ঊর্ধ্ব রেটে কাজ দিয়ে সরকারের কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করছেন। আমি টাকা ফেরত চাইলে ওই দুই কর্মকর্তা আমার দশ লাখ টাকা ফেরত না দিয়ে আমাকে নানাভাবে হয়রানির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। সব প্যাকেজের কাগজপত্র তদন্ত করলে অনিয়ম ও দুর্নীতির আসল চিত্র সহজেই পাওয়া যাবে।’
ওই অভিযোগনামায় “স্বাস্থ্য অধিদপ্তরাধীন অপারেশনাল প্ল্যান ‘লাইফস্টাইল, হেলথ এডুকেশন অ্যান্ড প্রমোশন’-এর ১০ কোটি টাকার কাজের সকল কার্যক্রম স্থগিত চাওয়া হয়।”
ভোরের আকাশ/আসা
মন্তব্য