-->
শিরোনাম

তিন হাসপাতালে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সর্বাধুনিক প্রযুক্তির মেশিন

আরিফ সাওন
তিন হাসপাতালে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সর্বাধুনিক প্রযুক্তির মেশিন

আরিফ সাওন, টাঙ্গাইল থেকে ফিরে: দেশের তিনটি হাসপাতালে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় বসানো হয়েছে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির মেশিন। যার মাধ্যমে মাত্র আধাঘণ্টায় জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ মেডিকেল বর্জ্য জীবাণুমুক্ত হয়ে সাধারণ বর্জ্যে পরিণত হচ্ছে।

 

শুধু তাই নয়; সব বর্জ্যই ছোট ছোট একই সাইজে পরিণত হয়। বর্জ্যরে আকার এবং ওজন অনেকাংশে কমে আসে। আকার কমছে ৮৫ শতাংশ আর ওজন কমছে ২৫ শতাংশ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রিসাইকেল করে এ বর্জ্য থেকে সার, অ্যানিম্যাল ফুড কিংবা বিদ্যুৎ উৎপাদনও করা যেতে পারে।

 

এই প্রযুক্তিকে বলা হয় মাইক্রোওয়েভ প্রযুক্তি। তিন হাসপাতালে স্থাপন করা হয়েছে ৪টি মাইক্রোওয়েভ মেশিন। এর মধ্যে রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে বসানো হয়েছে দুটি। বাকি দুটির একটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং আরেকটি বসানো হয়েছে টাঙ্গাইলের শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।

 

সিরিঞ্জ, সুঁই, বোতল, স্যালাইন ব্যাগ, নল, গজ, ব্যান্ডেজ, কাপড়, ছুরি-কাঁচি, মানুষের শরীর থেকে কেটে ফেলা অংশ মিলিয়ে প্রতিদিন তিন প্রতিষ্ঠানের গড়ে ৩ হাজার কেজিরও বেশি বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করা হচ্ছে। যদিও এর আগে যথাযথভাবে এসব বর্জ্য ব্যবস্থাপনা হতো না। এখনো দেশের বেশির ভাগ হাসপাতাল ও চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে যথাযথ বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করা হচ্ছে না।

 

জানা গেছে, দেশে ২০০৮ সালে ‘বায়োমেডিকেল ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট রুলস’ নামক নীতিমালা প্রণয়নের পর কয়েকটি হাসপাতালে বিচ্ছিন্নভাবে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কাজ করা হচ্ছে। প্রিজম নামক একটি সংস্থা দেশের ১২টি জেলার হাসপাতালের বর্জ্য সংগ্রহ করে ইনসিনারেশন নামক পদ্ধতির মাধ্যমে পুড়িয়ে ফেলছে। এতে যেমন পরিবেশ দূষণ ঘটে এবং পুড়িয়ে ফেলার কারণে যে গ্যাস বের হয়, তাতে মানুষের নানা ধরনের ক্ষতি হচ্ছে।

 

এতে ডিঅক্সিন নামক একটি গ্যাস বের হয়ে বাতাসে মিশে যাচ্ছে। চিকিৎসকরা বলেছেন, এটি কার্সিনোজেনিক। এ ছাড়া সুষ্ঠু বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অভাবে মেডিকেল বা হাসপাতাল বর্জ্যরে মতো বিষাক্ত ও জীবাণুযুক্ত বর্জ্য কোনো ব্যবস্থাপনা ছাড়াই মাটিতে পুঁতে ফেলছে এবং পরিবেশ ও মাটির ক্ষতি হচ্ছে।

 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হাসপাতালের বর্জ্য সঠিকভাবে ধ্বংস করা না হলে এ থেকে নানা ধরনের জীবাণু যেমন ডায়রিয়া, কলেরা, হেপাটাইটিস বি, সি, এইচআইভি এইডস ছড়িয়ে পড়তে পারে। তাই এর যথাযথ ব্যবস্থাপনায় গুরুত্বারোপ করছেন তারা।

 

সম্প্রতি টাঙ্গাইলের শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্ল্যান্টে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে নিয়োজিত কর্মীরা হাসপাতালের মেডিকেল বর্জ্য এনে মাইক্রোওয়েভ মেশিনে ঢেলে মেশিন চালু করে দিচ্ছেন। বেশ কিছু সময় পর তা টুকরো টুকরো হয়ে বেরিয়ে আসছে।

 

এ বিষয়ে মাইক্রোওয়েভ মেশিন সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ট্রেড ভিশন লিমিটেডের ম্যানেজার শাহেদুজ্জামানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যে মেডিকেল বর্জ্যে জীবাণু থাকতে পারে বলে ধারণা করা হয়, সেগুলো এই মেশিনে দেয়া হয়। মেশিন চালু করলে মেশিনটির ভেতরে থাকা ধারালো ব্লেডে প্রথমে বর্জ্যগুলো টুকরো টুকরো হয়ে যায়। সাইজ ৫ মিলিমিটারের মতো হয়।

 

এরপর উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন মাইক্রোওয়েভ প্রয়োগ করে সর্বোচ্চ ১০০ থেকে ১১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ২০ থেকে ৩০ মিনিটে বর্জ্য জীবাণুমুক্ত করা হয়। জীবাণুমুক্ত হয়ে গেলে খন্ড খন্ড শুকনো বর্জ্য বাইরে বেরিয়ে আসে, যা দেখতে টেক্সটাইল মিলের ফেলে দেয়া সুতার মতো।

 

তিনি বলেন, মেশিন থেকে যেগুলো বেরিয়ে আসে তা জীবাণুমুক্ত, শুকনো এবং আনরিকগনাইজড। আমরা মেশিনে যতটুকু বর্জ্য দিই আকারে তা কমে আসে। আকারে কমে ৮৫ শতাংশ এবং ওজন কমে ২৫ শতাংশ। এটার ওয়েস্টটা ড্রাই। আপনি চাইলে লংটাইম স্টোর করতে পারবেন। এ থেকে কোনো প্রকার গন্ধ বের হবে না। আপনি রিসাইকেল করতে পারবেন।

 

সরকার রিসাইকেল করার জন্য বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে জানিয়ে বলেন, রিসাইকেল করার আগে আপনাকে আগে প্ল্যান করতে হবে আপনি এ থেকে কী করতে চান। আপনি অরগানিক বায়ো ফার্টিলাইজার করতে পারেন। এমনও মেশিন আছে, একটা মেশিন থেকে ফার্টিলাইজ, অ্যানিম্যাল ফিডস ও ডিজেলের মতো ফুয়েল তৈরি করতে পারেন। এছাড়া আপনি আরেক দিকে যদি যান, তাহলে ইলেকট্রিসিটি প্রোডাকশনও করতে পারেন।

 

জানা গেছে, হাসপাতাল বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় মাইক্রোওয়েভ বিশ্বে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি। বর্তমানে অস্ট্রেলিয়া, মিয়ানমার, নেপাল, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, চীন, কম্বোডিয়া, তুর্কিস্তান, ইজবেকিস্তান, রাশিয়া, তাজাকিস্তান, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ ৬০টিরও অধিক দেশে এ প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয়।

 

টাঙ্গাইল সদর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের আরএমও ডা. এস কে এম শুয়াইবুর রহমান বলেন, এই মেশিন ব্যবহার করার ফলে পরিবেশ ও স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি কমে এসেছে। তাই মাইক্রোওয়েভ প্রযুক্তিতে দেশের সব হাসপাতালের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার তাগিদ দেন তিনি।

 

শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আবাসিক সার্জন ডা. পার্থ শংকর পাল বলেন, মাইক্রোওয়েভ প্রযুক্তি ব্যবহার খুবই ভালো। সব বর্জ্য একদম ক্রাশ করে জীবাণুমুক্ত করে সিটি করপোরেশনের ডাস্টবিনে ফেলে দেয়া হয়।

 

এতে কোনো ধরনের ঝুঁকি থাকে না।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version