-->

হিটস্ট্রোকের বিষয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ

নিখিল মানখিন
হিটস্ট্রোকের বিষয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ

নিখিল মানখিন: তীব্র দাবদাহে ডায়রিয়া ও হিটস্ট্রোকের বিষয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। তারা বলছেন, তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে গেলেই দেশের মানুষের হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। যতটা সম্ভব প্রখর রোদ এড়িয়ে চলতে হবে।

 

বেশি সময় ধরে উচ্চ তাপমাত্রায় থাকলে ‘হিটস্ট্রোক’ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আর এই পর্যায়ে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে মস্তিষ্ক, হৃৎপিন্ড, বৃক্ব ও পেশির ক্ষতি হতে পারে। আর তীব্র তাপমাত্রায় ডায়রিয়ার জীবাণু সংক্রমণের মাত্রা বেড়ে যায় বলে জানান বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা।

 

গত এক সপ্তাহ ধরে সারা দেশে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা যেন রেকর্ড গড়েই চলেছে। এতে তীব্র দাবদাহে পুড়ছে সারা দেশ। বয়ে যাচ্ছে তীব্র তাপপ্রবাহ। গরমে অতিষ্ঠ জনজীবন। ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়েছে। খাঁ খাঁ করছে দেশের মাঠ-প্রান্তর। খাল-বিল, নদী-নালা ও জলাশয় ফের পানিশূন্য হয়ে পড়ছে। ঘরে-বাইরে সব জায়গাতেই বিরাজ করছে অস্বস্তিকর পরিবেশ।

 

হিটস্ট্রোকের বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ব বিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের সাবেক ডিন ও প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ ভোরের আকাশকে বলেন, ভ্যাপসা গরমে নানা রোগব্যাধি দেখা দেয়। এর মধ্যে হিটস্ট্রোক অন্যতম। এটি আমরা গুরুত্ব দিই না, যা বিপদের কারণ হতে পারে। একটু সতর্ক থাকলে আর নিয়ম মেনে চললে হিটস্ট্রোক থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব।

 

তিনি বলেন, হিটস্ট্রোক হচ্ছে যখন শরীরের তাপমাত্রা পরিবেশের অত্যধিক তাপমাত্রার কারণে বেড়ে যায়। কখনো কখনো এই তাপমাত্রা বেড়ে ১০৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা তার কাছাকাছিও যেতে পারে। এটা একটা জটিল পরিস্থিতি, যা হঠাৎ ঘটে। সাধারণত চার বছর বয়স পর্যন্ত শিশুরা এবং ৬০ বছরের ঊর্ধ্ব বয়সি বৃদ্ধরা, যাদের গরমে সহ্যক্ষমতা কম, কিডনি, হার্ট, লিভার, ডায়াবেটিসের রোগী, যথেষ্ট পানি পান করেন না বা যারা ক্রীড়াবিদ, ব্যায়ামবিদ এবং প্রচন্ড রোদে কাজ করেন এমন লোকেরা হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হতে পারেন।

 

এবিএম আব্দুল্লাহ বলেন, হিটস্ট্রোকে দেহে পানির পরিমাণ কমে যেতে পারে। শরীরের তাপমাত্রা হঠাৎ অনেক বেড়ে যায় (১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা তারও বেশি হতে পারে), এ সময় তেমন ঘাম হয় না এবং ত্বকের বর্ণ লালচে হয়, নিঃশ্বাস দ্রুত হয়, মাংসপেশির খিঁচুনি হয়, হাত-পা কাঁপে, হৃৎস্পন্দন দ্রুত বা ক্ষীণ হয় এবং রক্তচাপ কমে যায়, বমি বমি ভাব অথবা বমি হয়, প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যায়, তীব্র মাথাব্যথা, মাথা ঘোরা বা মাথা ঝিমঝিম করে, পেশি দুর্বল হয়ে আসে, অনেক সময় রোগী পুরো নিস্তেজ হয়ে পড়ে যায়, এমনকি আক্রান্ত ব্যক্তি কোমা বা শকে চলে যেতে পারে।

 

ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ বলেন, হিটস্ট্রোককে কোনোভাবেই অবহেলা করা উচিত নয়। দ্রুত ও সঠিকভাবে হিটস্ট্রোকের চিকিৎসা না করালে মৃত্যুও হতে পারে। কেউ যাতে এতে আক্রান্ত না হয়, সে ব্যাপারে আমাদের কিছু সতর্কতা মেনে চলা উচিত। যেমন আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরের তাপমাত্রা কমাতে ঠান্ডা বা বরফ মিশ্রিত পানি দিয়ে শরীর মুছে দিন।

 

বিশেষ করে রোগীর বগল, কুঁচকি, ঘাড়সহ নানা স্থান মুছে দিন। আক্রান্ত ব্যক্তিকে শুইয়ে দিন, পা একটু উঁচু করে দিন। মাথা একটু নিচের দিকে থাকা ভালো। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে বা ফ্যানের কাছে আনুন বা শীতল পরিবেশে আনুন। শরীরের কাপড় খুলে দিন বা আলগা করে দিন। মোজা-জুতা অবশ্যই খুলে দিন।

 

রোগীর জ্ঞান থাকলে পানি, ডাবের পানি, শরবত, জুস বা খাবার স্যালাইন দিন। রোগীকে গোসল করতে বলুন। শরীরে পানি ঢালার ব্যবস্থা করুন। যদি জ্ঞান হারিয়ে ফেলে, তবে দ্রুত স্থানীয় হাসপাতালে নিন। এ অবস্থায় ঘরে চিকিৎসা করার সুযোগ নেই। হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার আগেই বিশেষ সতর্ক থাকার ওপর বেশি জোর দিয়েছেন তিনি।

 

অব্যাহত খরতাপে দেশে বেড়েছে ডায়রিয়ায় আক্রান্তের হার। রাজধানীর মহাখালীতে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি) হাসপাতালসহ দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে দৈনিক ভর্তি হওয়া নতুন ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা স্বাভাবিক অবস্থা ছাড়িয়ে গেছে। আইসিডিডিআর,বি কর্তৃপক্ষ জানায়, স্বাভাবিক অবস্থায় এই হাসপাতালে দৈনিক গড়ে ২৫০ থেকে ৩০০ জন রোগী ভর্তি হয়। গত এক সপ্তাহ ধরে দৈনিক নতুন রোগী ভর্তির সংখ্যা ৬০০ ছাড়িয়ে গেছে।

 

আইসিডিডিআরবি'র তথ্য অনুযায়ী, বর্ষা মৌসুম শুরুর আগে রোগীর সংখ্যা বাড়ে। সাধারণত মার্চ মাসের শেষ সপ্তাহে রোগীর সংখ্যা দ্রæত বাড়তে থাকে। এপ্রিলের মাঝামাঝি সময় থেকে শেষ সপ্তাহে রোগী সংখ্যা সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে।

 

আইসিডিডিআরবি,র বিজ্ঞানী ড. মো. শাহাদাত হোসেন ভোরের আকাশকে বলেন, তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে গেলেই এ দেশের মানুষের হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থেকে যায়। যতটা সম্ভব প্রখর রোদ এড়িয়ে চলতে হবে। তীব্র তাপমাত্রায় ডায়রিয়ার জীবাণু সংক্রমণের মাত্রা বেড়ে যায় বলে জানান তিনি।

 

একই কথা জানালেন অধিদপ্তরের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. মাহমুদুর রহমান। তিনি বলেন, প্রধানত দূষিত পানির কারণেই ডায়রিয়া ও কলেরার আধিক্য দেখা দেয়। তবে গরম বেশি হলে ডায়রিয়ার জীবাণু সংক্রমণ ক্ষমতা এবং ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব বেড়ে যায়।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version