রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কর্মরত নার্স দম্পতিকে বাংলাদেশ নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিলে আটকে রাখার ঘটনায় শাহবাগ থানায় অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।
বুধবার রাতে নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিলের ৬ জনের নাম উল্লেখ করে সিনিয়র স্টাফ নার্স আনন্দ কুমার দাস এ অভিযোগ দাখিল করেন।
বৃহস্পতিবার সকালে বাংলাদেশ নার্সেস এসোসিয়েশনের (বিএনএ) সভাপতি খাঁন মো. গোলাম মোরশেদ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
অভিযুক্তরা হলেন- রাব্বি (৩০), অলোক কুমার দাশ (৩৫), খন্দকার শাকিল আহম্মেদ (৪০), মো. মুরাদ শিকদার (৩৫), মো. হাসান আল মিরাজ (৩৬) ও রাশিদা আক্তার (৫০)। সকলে নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিলে কর্মরত। এদের মধ্যে রাশিদা আক্তার নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিলের রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব)।
তদন্তকারী কর্মকর্তা শাহবাগ থানার এসআই আরিফ নেওয়াজ বলেন, তাদের একটি অভিযোগ ওসি স্যার আমাকে তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছেন। তদন্তে সত্যতা পেলে মামলা রেকর্ড করা হবে।
জানা গেছে, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স আনন্দ কুমার দাস ও তার স্ত্রী একই প্রতিষ্ঠানের সিনিয়র স্টাফ নার্স সুজেলা রাণী বুধবার ( ০৩ মে) দুপুর ২টায় নার্সিং রেজিষ্ট্রেশন কার্ড সংগ্রহের জন্য নার্সিং কাউন্সিলে যান। নার্সিং রেজিষ্ট্রেশন কার্ড পাঁচ বছর পর পর পুন: নবায়ন করতে হয়। সেখানে সুজেলা রাণী রায়ের রেজিষ্ট্রেশন নবায়নের আবেদনের তারিখ বলতে না পারায় রাব্বি নামে এক কর্মকর্তা রেজিস্ট্রেশন কার্ড প্রদানে অপারগতা প্রকাশ করেন। আনন্দ কুমার দাস বারবার অনুরোধ করলে ঐ কর্মকর্তা তাকে দালাল বলায় তিনি ক্ষুব্ধ হন। উভয়ে বাক বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। কাউন্সিলের অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারিরা তখন এই নার্স দম্পতির ওপর চড়াও হন। এরপর কাউন্সিলে ভাংচুরের অভিযোগে আলাদা দুটি কক্ষে তাদের আটকে রাখেন।
বাংলাদেশ নার্সেস এসোসিয়েশনের (বিএনএ) সভাপতি খাঁন মো. গোলাম মোরশেদ বলেন, নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের পরিচালক (শৃঙ্খলা) রাশেদুল মান্নাফ কবিরের জিম্মায় বুধবার রাত ১০ টা ১০ মিনিটে তাদের ছেড়ে দেয়। এরপর রাতেই মামলা দায়ের করা হয়।
তবে বাংলাদেশ নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিল এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তারা বলছে, সেখানে কোনো নার্স আটকে রাখার ঘটনা ঘটেনি।
আনন্দ কুমার দাস বলেন, দুপুর দুইটার সময় আমার স্ত্রীকে নিয়ে তার রেজিষ্ট্রেশন কার্ড সংগ্রহের জন্য কাউন্সিলে আসি। সেখানে কবে আবেদন করেছিলাম সেই তারিখ বলতে না পারায় রাব্বী নামে এক কর্মকর্তা আমার সঙ্গে বিতর্কে জড়ায়। অসৌজন্যমূলক আচরণ করে। তার কথার প্রতিবাদ জানালে অন্যরা এসে চড়াও হন। আমার স্ত্রীর ওপর শারীরিক এবং মানসিকভাবে নির্যাতন করেন। এরপর কাউন্সিলে ভাংচুড়ের অভিযোগ দিয়ে মামলা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে তুলে দেওয়ারও ভয়ভীতি প্রদর্শন করেন। এরপর থেকে কোনো কারণ ছাড়াই আমাদের দুজনকে আটকে রাখেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নার্স দম্পতিকে আটকে রাখার পেছনে নার্সদের দুটি গ্রুপের বিবাদ অন্যতম মূল কারণ। গ্রাজুয়েট নার্স ও ডিপ্লমা নার্স নামে তাদের মধ্যে দুটি গ্রুপ রয়েছে। আনন্দ কুমার দাস গ্রাজুয়েট নার্স নেতা। তিনি বাংলাদেশ নার্সেস এসোসিয়েশনের অর্থ সম্পাদক। অন্যদিকে বাংলাদেশ নার্সিং কাউন্সিলের শীর্ষ ব্যক্তি ডিপ্লোমা নার্স। ফলে তুচ্ছ বিষয়ে আনন্দকে শায়েস্তা করার চেষ্টা করেন তিনি।
তাদের আটকে রাখার খবর পেয়ে সেখানে যান বাংলাদেশ নার্সেস এসোসিয়েশনের (বিএনএ) সভাপতি খাঁন মো. গোলাম মোরশেদ।তিনি বিষয়টি মিমাংসার চেষ্টা করেন। ওই দম্পতিকে ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ করেন। কিন্তু কাউন্সিলের ওই কর্মকর্তারা তার অনুরোধ রাখেননি।
নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিলের রেজিষ্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) রাশিদা আক্তার এই ঘটনা অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, আমার জানামতে নার্সিং কাউন্সিলে আজ এই রকম কোনো ঘটনা ঘটেনি। আনন্দ কুমার দাস ও সুজেলা রাণী রায়ের নাম উল্লেখ্য করে তাদের দুজনকে কেনো আটকে রাখা হয়েছে এই প্রতিবেদক জানতে চাইলে তিনি বলেন, আপনাকে কেউ হয়তো ভুল তথ্য দিয়েছে। এখানে কোনো নার্স আটকের ঘটনা ঘটেনি।
এ ঘটনায় নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মাকসুরা নুরকে একাধিকবার ফোন করা হলে তিনি সাড়া দেননি।
এদিকে এঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন স্বাধীনতা নার্সেস পরিষদের কেন্দ্রীয় মহাসচিব নেতা মো. ইকবাল হোসেন সবুজ। তিনি নার্সিং কাউন্সিলের সংশ্লিষ্টদের বিচারের দাবি জানিয়েছেন।
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য