-->
শিরোনাম

মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারের সদস্যদের স্বাস্থ্য সেবা কার্ড, কল করলেই মিলবে ডাক্তারী পরামর্শ

নিজস্ব প্রতিবেদক
মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারের সদস্যদের স্বাস্থ্য সেবা কার্ড, কল করলেই মিলবে ডাক্তারী পরামর্শ

কুমিল্লা জেলার দেবিদ্বার উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারের সদস্যদের দেওয়া হয়েছে স্বাস্থ্য সেবা কার্ড । এই কার্ডের নাম্বারে কল করলে ২৪ ঘন্টাই মিলবে ডাক্তারী পরামর্শ।

 

মঙ্গলবার কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার ডা. ফেরদৌস খন্দকার কারিগরি স্কুল অডিটরিয়ামে অনুষ্ঠান করে মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারের সাড়ে ছয়শতাধিক সদস্যকে এই স্বাস্থ্য সেবা কার্ড দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানের আয়োজন করে শেখ রাসেল ফাউন্ডেশন, ইউএসএ ইনক।

 

এর আগে স্থানীয়দেরও স্বাস্থ্য সেবা কার্ড দেওয়া হয়। এনিয়ে পর্যন্ত দেড় হাজার ব্যক্তিকে স্বাস্থ্য সেবা কার্ড দেওয়া হয়েছে।

 

অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা ছিলেন, শেখ রাসেল ফাউন্ডেশন, ইউএসএ ইনক এর সভাপতি ডা. ফেরদৌস খন্দকার। সভাপতিত্ব করেন, মুক্তিযুদ্ধ অলিম্পিয়াড ২০২৩ এর আহবায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান আওয়াল বক্তৃতা করেন, শেখ রাসেল ফাউন্ডেশন, ইউএসএ ইনক এর সাধারণ সম্পাদক আলামিন বাবুসহ অনেকে।

 

ডা. ফেরদৌস বলেন, আমরা ইতিমধ্যেই মানুষের কাছে স্বাস্থ্য সেবা কার্ড পৌঁছে দিয়েছি। এরই ধারাবহিকতার অংশ হিসেবে আজকে দেবিদ্বার উপজেলার সাড়ে ছয়শ বীর মুক্তিযোদ্ধার কাছে এই কার্ড তুলে দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও আমার নিজ গ্রামের সাড়ে তিনশো পরিবার, দেবিদ্বারের প্রতিটি ইউনিয়নে ১০ জন করে মোট ১৬০ জন ওয়ার্ড মেম্বার, এবং আমাদের ফাউন্ডেশনের যারা রেজিস্টার্ড কর্মকর্তা-কর্মচারি আছেন, তারাও প্রায় আছেন ১৬০ জনের মতো। তাদের সবাই এই স্বাস্থ্য সেবা কার্ডের আওতাভুক্ত হবেন।

 

তিনি বলেন, কার্ডগুলোতে চিকিৎসকের নাম্বার দেওয়া আছে, যেকোন রোগের ক্ষেত্রে ওই নাম্বারে ফোন করে আইডি নম্বর বলে সমস্যার কথা বললেই একজন ডাক্তারের সাথে তাকে সমন্বয় করে দেওয়া হবে। সাধারণ কোন বিষয় হলে তখন তাকে নির্ধারিত একটা সময় বলে দেওয়া হবে যে, ওই সময়ে চিকিৎসক আপনাকে ফোন দেবে। আর রোগী যদি বলে আসার জ্বর, পেটে ব্যাথা বা জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসকের সাথে কথা বলতে হবে, তাহলে তাৎক্ষণিক একজন চিকিৎসকের সাথে তাকে কথা বলিয়ে দেওয়া হবে। এই চিকিৎসা সেবার জন্য রোগীকে কোন টাকা দিতে হবে না। আমার এই কার্যক্রমের উদ্দেশ্য হলো, মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্য সেবাটি পৌঁছে দিতে চাই এবং সাধারণ মানুষের জন্য স্বাস্থ্য সেবাকে সহজলভ্য করতে চাই।

 

ডা. ফেরদৌস বলেন, কোন রোগীকে যদি পরিস্থিতি বুঝে হাসপাতালে পাঠানোর প্রয়োজন হয়, তাহলে আমাদের রেফারেল কিছু হাসপাতাল আছে, আমরা তাদেরকে সেখানে পাঠাবো। কুমিল্লায় আমাদের কো-অর্ডিনেটর আছে, ঢাকায় আমাদের অফিস এবং কো-অর্ডিনেটর আছে। আমরাই রোগীকে নির্ধারিত হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা করবো। এই ক্ষেত্রে রোগী যদি খরচ বহনে সক্ষম না হন, তাহলে সেটিও আমরা দেখবো। গত তিন বছর পর্যন্ত এরকম অসংখ্য রোগীকে আমরাই নিজ খরচে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দিয়েছি।

 

এই চিকিৎসক বলেন, চিকিৎসার ক্ষেত্রে আমরা যদি সমন্বয়টা করে দেই, তাহলে দেখা গেলো যে, আমাদের নেটওয়ার্কে ২০ হাজার টাকার সার্জারি সর্বোচ্চ সাড়ে ৪ থেকে ৫ হাজারের মধ্যে সেটি হয়ে যাবে। এরকম সেবা এখন পর্যন্ত আমরা হাজারেরও বেশি রোগীকে ইতোমধ্যে দিয়েছি। আমাদের আরেকটি পরিকল্পনা হলো প্রতিদিন আমাদের দুইজন বা একজন ডাক্তার বিভিন্ন ওয়ার্ডে গিয়ে ক্যাম্পেইন করবে। ক্যাম্পেইনে যেসব নারী চিকিৎসা বা পরামর্শ নিতে আসবে, তাদেরকে আমরা ওষুধসহ সেবা দেব। আমরা যদি এই চিকিৎসা সেবা কার্যক্রমটি চালু করতে পারি, তাহলে ওষুধের কোন সমস্যা হবে না। ইতোমধ্যেই আমাদের কাছে পর্যাপ্ত পরিমাণ ওষুধ আছে। আমি যখনই দেশে আসি, আমার এলাকার মানুষের জন্য বিদেশি ওষুধ নিয়ে আসি। আরও প্রয়োজন হলে আমরা ওষুধ কিনে নেব।

 

সার্বিক কার্যক্রমের পরিকল্পনা প্রসঙ্গে আলোচিত এই চিকিৎসক আরও বলেন, এখনও আমরা পরীক্ষামূলক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। সবমিলিয়ে প্রাথমিকভাবে দেড় হাজার পরিবারকে আমরা সেবা দিচ্ছি, ছয় মাস পরে আমরা পর্যালোচনা করে দেখবো আমরা কতটুকু সফলতা পেয়েছি। এমনকি পর্যালোচনা অনুযায়ী পরবর্তীতে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া যায়, সেটিও আমরা করবো। আমাদের প্রথম পরিকল্পনাই হলো কার্ডের আওতাভুক্ত সকল মানুষকে এই কনফিডেন্সটা দিতে চাই যে, তিনি একজন লাইসেন্সধারী ডাক্তারের অধীনে আছেন। এই ভরসাটি প্রত্যেকের মধ্যে তৈরি করতে চাই।

 

মুক্তিযোদ্ধাদের অগ্রাধিকার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মুক্তিযোদ্ধারা আমাদের জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। মুক্তিযুদ্ধের সময়ে আমার জন্ম হয়নি, কিন্তু তাঁদের যে বীরত্বগাঁথা গল্প আমি শুনছি, তাদের জন্য কিছু করা আমাদের জন্য কর্তব্য। সেই শুরু থেকেই মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য কিছু করে যাওয়ার পরিকল্পনা আমার ছিলো। এরই অংশ হিসেবে আমরা আমাদের স্মার্ট স্বাস্থ্য সেবায় তাদেরকে যুক্ত করেছি। প্রধানমন্ত্রী মুক্তিযোদ্ধাদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক মর্যাদা দিয়েছেন। কিন্তু তাদের স্বাস্থ্যসেবার বিষয়টি নিয়ে আক্ষেপ ছিল। আশা করছি এখন থেকে অন্তত আমার উপজেলায় তাদের আর কোন আক্ষেপ থাকবে না।

 

ভোরের আকাশ/আসা

মন্তব্য

Beta version