-->

রোগী মৃত্যুর ঘটনায় তদন্তে বিএমডিসি

আরিফ সাওন
রোগী মৃত্যুর ঘটনায় তদন্তে বিএমডিসি

আরিফ সাওন: ভয়ভীতি দেখিয়ে হার্টে রিং পরানোর কারণে রাজধানীর একটি নামকরা হাসপাতালে জাকির হোসেন খান নামের এক রোগীর মৃত্যুর অভিযোগে তিন চিকিৎসকের বিরুদ্ধে তদন্তে নেমেছে চিকিৎসকদের নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি)।

 

অভিযোগের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট তিন চিকিৎসকের বক্তব্য জানতে তাদের গত ২১ মে চিঠি দিয়েছে বিএমডিসি। চিঠিতে অভিযোগের বিষয়ে ১৫ দিনের মধ্যে বিএমডিসির রেজিস্ট্রারের কাছে লিখিত জবাব দাখিল করতে বলা হয়েছে।

 

যে তিন চিকিৎসকের বিরুদ্ধে বিএমডিসি তদন্তে নেমেছে তারা হলেন অধ্যাপক ডা. গোলাম আজম, সহযোগী অধ্যাপক ডা. রাশেদুল হাসান কনক ও ডা. শেখর কুমার মন্ডল।

 

ধানমন্ডি আবাসিক এলাকার বাসিন্দা মো. জাকির হোসেন খান অপচিকিৎসার শিকার হয়ে মৃত্যুবরণের অভিযোগ করেছেন তার স্বজনরা। রাজধানীর গ্রীন লাইফ হাসপাতালে জাকির হোসেনের অপারেশন ও মৃত্যু ঘটলেও দায়ী করা হয়েছে ওই তিন চিকিৎসককে। তিন চিকিৎসকের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দেয়া হলেও ঘটনার মূল হিসেবে অভিযুক্ত করা হয়েছে ডা. শেখর কুমার মন্ডলকে।

 

রোগীর চিকিৎসা নিয়ে যেভাবে অভিযোগ বর্ণনা করা হয়েছে, তা সিনেমাকেও হার মানিয়েছে। ওই তিন চিকিৎসকের বিরুদ্ধে গত ২৪ মার্চ মৃত রোগীর সহধর্মিণী নুরুননাহার কলাবাগান থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন। নুরুননাহার একই অভিযোগ দিয়েছেন বিএমডিসি ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে।

 

অভিযোগের বিষয়ে অধ্যাপক ডা. গোলাম আজম ভোরের আকাশকে বলেন, এ বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে। আমরা তদন্ত কমিটির কাছে লিখিত বক্তব্য দাখিল করেছি।

 

এ বিষয়ে নুরুননাহার বলেন, একজন চিকিৎসকের লোভের শিকার হয়েছেন তার স্বামী। এ বিষয়ে গ্রীন লাইফ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে অভিযোগ দেয়ার পর তারা রোগীর চিকিৎসার বিল মওকুফ করে ১৬ মার্চ লাশ হস্তান্তর করে। এবং এ নিয়ে পরবর্তীতে ১৮ মার্চ যেকোনো সময় বসে সমাধানের আশ্বাস দেন ওই হাসপাতালের জিএম।

 

কিন্তু পরবর্তীতে তারা অনাকাক্সিক্ষত শর্ত জুড়ে দেয়। এ অবস্থায় থানায় জিডি করেছি এবং পরবর্তীতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে লিখিতভাবে অভিযোগ দিয়েছি।

 

নুরুননাহারের লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে, ‘রোগী জাকির হোসেন বুকে ব্যথা নিয়ে গত ১২ মার্চ সকালে রাজধানীর গ্রীন রোডের গ্রীন লাইফ হাসপাতালে যান। সেখানে সহযোগী অধ্যাপক ডা. রাশেদুল হাসান কনককে দেখান। ব্যথা কমার পর ওই দিন বিকেলে ওই হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেয়া হয়।

 

এরপর তিনি (জাকির হোসেন) গ্রীন লাইফ হাসপাতাল ছাড়েন। পরবর্তীতে তিনি (রোগী) বিআরবি হাসপাতালে যান। সেখানে তার শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে একজন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞকে দেখানোর পরামর্শ দেয়া হয়। এই পরামর্শ অনুযায়ী বিআরবি হাসপাতালের ডা. শেখর কুমার মন্ডলকে (ক্লিনিক্যাল ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজিস্ট) দেখান।

 

এই চিকিৎসক ইসিজি ও ইকো করানোর পর রোগীর সামনেই বলেন, রোগী ৯০ মিনিটের বেশি বাঁচবে না। দ্রুত রোগীকে এনজিওগ্রাম করে হার্টে রিং পরাতে হবে।

 

এ কথা শোনার পর রোগীকে ইউনাইটেড হাসপাতালে নিয়ে যেতে চাইলে ডা. শেখর কুমার মন্ডল বলেন, এত সময় আপনার হাতে নাই। এরপর রোগী ল্যাবএইড হাসপাতালে যেতে চাইলেও ডাক্তার শেখর বলেন, ল্যাবএইডের ক্যাথল্যাব রেডি নাই। শুধু গ্রীন লাইফ হাসপাতালেই ক্যাথল্যাব রেডি আছে এবং সেখানে উনি নিজেই রিং পরাবেন।’

 

অভিযোগে আরো বলা হয়, ওই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী রোগীকে গ্রীন লাইফ হাসপাতালে নেয়ার পর আর কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করে এবং আমাদের অনুমতি না নিয়েই রোগীর হার্টে রিং পরানো হয়।

 

পরবর্তীতে হাসপাতালের একটি রুমে নিয়ে কম্পিউটার মনিটরে রোগীর রিং পরানোর আগে ও পরের অবস্থা ব্যাখ্যা করেন ডা. গোলাম আজম ও ডা. শেখর কুমার মন্ডল।

 

এর পর থেকে রোগীকে নিয়ে নানান টালবাহানা করেছেন ডা. শেখর কুমার মন্ডল। শেষ পর্যন্ত ১৫ মার্চ রোগী গ্রীন লাইফ হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করে। এ নিয়ে পরবর্তীতে রোগীর আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দেনদরবার হয়। এর পরই রোগীর চিকিৎসা বাবদ দাবি করা বিল ৬ লাখ ২৪ হাজার ৪৪৬ টাকা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মওকুফ করে লাশ হস্তান্তর করে।

 

অভিযোগে গত ১২ মার্চ থেকে ২১ মার্চ পর্যন্ত গ্রীন লাইফ হাসপাতালের প্রবেশদ্বার থেকে শুরু করে সি.সি.ইউ, ও.টি ও আই.সি.ইউসহ সংশ্লিষ্ট সকল স্থানের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহের অনুরোধ জানানো হয়।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version