শহরের মানুষের ক্যান্সার আক্রান্তের হার বেশি। গ্রামের মানুষের আক্রান্তের হার কম। কিন্তু শহরের আক্রান্তের হার বেশি হলেও মৃত্যুর হার বেশি গ্রামে।
বাংলাদেশ ক্যান্সার স্টাডি গ্রুপ এর গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে।
সোমবার (২৯ মে) বিকেলে রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত গোলটেবিল আলোচনায় এ তথ্য জানানো হয়।
বাংলাদেশ ক্যান্সার স্টাডি গ্রুপ এবং হেলথ রিপোর্টার্স ফোরাম যৌথ ভাবে এ সভার আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানে শুরুতেই মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ক্যান্সার স্টাডি গ্রুপের রিসার্চ ফেলো ডা. মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম।
তিনি বলেন, গ্রামে মৃত্যু বেশি কারণ গ্রামে শনাক্ত দেরিতে হয়। আর শহরে আরলি স্টেজে শনাক্ত হওয়ায় মৃত্যু হার কম।
২০২২ সালে ক্যান্সার চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যের বৈষম্য তুলে ধরে এই বিশেষজ্ঞ বলেন, বাংলাদেশে ক্যান্সার সেবা বিকেন্দ্রীকরণের প্রচেষ্টা সত্ত্বেও সমস্ত জনসংখ্যা গোষ্ঠীতে ক্যান্সারের সংক্রমণ এবং মৃত্যুর হার বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এমনকি শহুরে এবং গ্রামীণ জনসংখ্যার মধ্যে ক্যান্সার-সম্পর্কিত মৃত্যুর অসমতা বজায় রয়েছে, গ্রামীণ জনসংখ্যার সামগ্রিকভাবে ক্যান্সারের মৃত্যুর হার বেশি। কাঠামোগত বাধা এবং পদ্ধতিগত বৈষম্য ক্রমাগত দারিদ্র্য বা গ্রামীণ এলাকায় বসবাসকারীদের জন্য মানসম্পন্ন স্বাস্থ্যসেবার প্রাপ্যতাকে বাধা দেয়।
তিনি বলেন, ক্যান্সার স্বাস্থ্যের বৈষম্য অর্থনৈতিক ক্ষতিতে অবদান রাখে। বাংলাদেশে আনুমানিক ৫ লক্ষ লোক স্বাস্থ্যসেবার উচ্চ ব্যয়ের কারণে বার্ষিক দারিদ্র্য সীমার নিচে নেমে যায়। এমনকি করোনাভাইরাস মহামারী এই বৈষম্যকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
ক্যান্সার চিকিৎসায় প্রয়োজনের তুলনায় যন্ত্রপাতি ও লোকবল অপ্রতুল উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের দেশে ক্যান্সার চিকিৎসার ক্যাপাসিটি খুবই কম। একদিকে যেমন যন্ত্রপাতি কম, অন্যদিকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সংখ্যাও খুবই কম। ২০১৯-২০২০ গ্লোবকনের একটি জরিপে বলা হয়, দেশে রেডিয়েশন অনকোলোজিস্ট আছে মাত্র ২০৩ জন, মেডিকেল অনকোলোজিস্ট ৩০ জন, চেস্ট সার্জন ৩০ জন, রেডিওৰোজিস্ট ৫০১ জন, নিউক্লিয়ার মেডিসিন স্পেশালিষ্ট ১০০ জন, মেডিকেল ফিজিসিস্ট রয়েছেন ৩৩১ জন। এই অল্প জনবল দিয়ে বিশাল সংখ্যক রোগীর চিকিৎসা সম্ভব নয়।
বাংলাদেশে প্রতিবছর ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে সাড়ে চার লাখ মানুষের মৃত্যু হচ্ছে, যেখানে বহুল আলোচিত করোনাভাইরাস সংক্রমণে ৩০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। করোনায় মৃত্যুর চেয়ে ক্যান্সারে মৃত্যুর হার বেশি হওয়ার পরও মানুষের মধ্যে সচেতনতার ব্যপক অভাব রয়েছে। এমনকি সরকারি পর্যায়েও মরণঘাতী এই ক্যান্সার যথাযথ গুরুত্ব পাচ্ছে না বলে উল্লেখ করেন তিনি। এই অবস্থায় গবেষণায় গুরুত্বারোপ করে এই খাতে নিয়মিত বরাদ্দ চান সংশ্লিষ্টরা।
ডা. মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম বলেন, গত বছর ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউটের মাধ্যমে আমরা নামমাত্র একটা বরাদ্দ পেয়েছিলাম, যা গবেষণার জন্য একেবারেই অপর্যাপ্ত। এবছর শুনেছি আমাদের আর দেওয়া হচ্ছে না, কারণ এই বরাদ্দটা বাই-রোটেশনে (চক্রাকার পদ্ধতিতে) দেওয়া হয়। কিন্তু ক্যান্সার গবেষণায় এই অনিয়মিত ও নামমাত্র বরাদ্দ কোন কাজে আসে না। এভাবে তো ক্যান্সার গবেষণা হয় না। আমরা চাই আমাদেরকে একটা পার্মানেন্ট ফান্ড বরাদ্দ দেওয়া হোক।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট হাসপাতালের এপিডেমিওলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. জাহিরুল ইসলাম নাদিম বলেন, ক্যান্সার নিয়ে কাজ করতে চ্যালেঞ্জ, সমস্যা এবং সম্ভাবনা সবকিছুই আছে। যেকারণে বাংলাদেশ ক্যান্সারের চিকিৎসায় উপরের দিকে নেই। এর সবচেয়ে বড় কারণ হলো অর্থনৈতিক সমস্যা। এই সমস্যায় আমরা গবেষণা কাজও এগিয়ে নিতে পারি না।
তিনি বলেন, ক্যান্সার যদি শুরুতে ধরা যায়, তাহলে এর সফল চিকিৎসা করা যায়। প্রথমত হলো রোগীরা আমাদের কাছে আসে না। যখন কারও কোন একটা উপসর্গ দেখা দেয়, তখন সে নিজের মতো করে কিছু ওষুধ কিনে খায়। এভাবে সে কিছুদিন সময় পার করে। এরপর সে আবার হোমিওপ্যাথিতে যায়, সবশেষে সময় নষ্ট করে আসে আমাদের কাছে। তখন আসলে রোগটি অ্যাডভান্স স্টেজে চলে যায়, ফলে চিকিৎসা করেও সবসময় ভালো ফল আসে না। এক্ষেত্রে রোগীর অর্থনৈতিক সমস্যার পাশাপাশি সচেতনতাও একটা বড় কারণ।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ইউশিকাগো রিসার্চ বাংলাদেশের কান্ট্রি রিপ্রেসেন্টেটিভ সৈয়দ এমদাদুল হক, জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট হাসপাতালের হিস্টোপ্যাথলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. ফরিদা আরজুমান, বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টাস ফোরামের সভাপতি রাশেদ রাব্বীসহ আরও অনেকে।
ভোরের আকাশ/আসা
মন্তব্য