-->
শিরোনাম

মৎস্য-পশু-পোল্ট্রি শিল্পে ১৯ ধরণের এন্টিবায়োটিকের ব্যবহার, বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি

নিজস্ব প্রতিবেদক
মৎস্য-পশু-পোল্ট্রি শিল্পে ১৯ ধরণের এন্টিবায়োটিকের ব্যবহার, বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি

মৎস্য, পশু ও পোল্ট্রি শিল্পে ১৯ ধরণের এন্টিবায়োটিকের ব্যবহার করা হচ্ছে। কৃষিখাতও এর আশঙ্কার আওতামুক্ত নয়। এসকল খাবার খেয়ে মানুষের শরীর সহজেই এন্টিবায়োটিক রেজিস্টেন্স হয়ে উঠছে। চিকিৎসকের দেওয়া এন্টিবায়োটিক সেবনে হচ্ছে না রোগীর রোগ নিরাময়। অনেক সময় চিকিৎসকদের হিমসিম খেতে হচ্ছে। রোগীর মৃত্যুও হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে এন্টিবায়োটিক রেজিস্টেন্সের কারণে ২০৫০ সাল নাগাদ করোনার চেয়ে দ্বিগুণ সংখ্যক মানুষের মৃত্যু হতে পারে। তাই মৎস্য, পশু ও পোল্ট্রি শিল্প ও কৃষিখাতে মাত্রাতিরিক্ত এন্টিবায়োটিকের ব্যবহার রোধের পাশাপাশি রেজিস্ট্রার চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কেউ যাতে এন্টিবায়োটিক ক্রয় বিক্রয় করতে না পারে তা নিশ্চিতের তাগিদ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

 

রোববার সকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) ‘এন্টিমাইক্রোবায়াল স্টুওয়ার্ডশিপ’ শীর্ষক মাসিক সেন্ট্রাল সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। সেমিনারে ‘এন্টিমাইক্রোবায়াল স্টুওয়ার্ডশিপ প্রোগ্রামস ফর ইনফেকশন কন্ট্রোল ইন এ টার্শিয়ারি কেয়ার হসপিটাল’ প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ফার্মাকোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. জহিদুল ইসলাম।

 

প্রবন্ধ উপস্থাপনে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিইউতে চিকিৎসা নেয়া রোগীদের মাঝে সর্বোচ্চ শতকরা ৫২ শতাংশ রোগীদের অ্যান্টিমাইক্রোবায়াল রেজিস্টেন্স পাওয়া গেছে। হৃদরোগ, কিডনী, শিশু ও নবজাতক বিভাগের রোগীদের মাঝে এই হার ছিল ২১. ৫ শতাংশ। বর্তমানে বিশ্বে বছরে অ্যান্টিমাইক্রোবায়াল রেজিস্টেন্স ভোগা রোগীদের মৃত্যুর হার ৭ লাখ। ২০৫০ সাল নাগাদ এই মৃত্যু হার বৃদ্ধি ১ কোটিতে পৌঁছাবে বলে আশঙ্কা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

 

অ্যান্টিমাইক্রোবায়াল রেজিস্টেন্স প্রতিরোধ শুধু চিকিৎসকদের একার পক্ষে সম্ভব নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, কারণ পোল্ট্রি শিল্পে উৎপাদিত খাদ্য সামগ্রীতে বিশেষ করে মুরগীর মাংসে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্টেন্স ব্যাকটেরিয়া দ্বারা আক্রান্ত ৫৫ শতাংশ। মৎস্য, পশু ও পোল্ট্রি শিল্পে ১৯ ধরণের এন্টিবায়োটিকের ব্যবহার করা হচ্ছে। কৃষিখাতও এর আশঙ্কার আওতামুক্ত নয়। এসকল খাবার খেয়ে মানুষের শরীর সহজেই এন্টিবায়োটিক প্রতিরোধী হয়ে উঠছে। ফলে এন্টিবায়োটিক সেবনে রোগ নিরাময় হচ্ছে না। ফলে রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হচ্ছে। একইসঙ্গে সমগ্র বিশ্বে রোগীদের স্বাস্থ্য ব্যয় বছরে প্রায় ২০ বিলিয়ন ডলার অতিরিক্ত ব্যয় হচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থার আশঙ্কা ২০৫০ সাল নাগাদ এই ব্যয় ১০০ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে।

 

তিনি বলেন, এন্টিমাইক্রোবায়াল রেজিটেন্সের মতো বৈশ্বিক সমস্যা বিশ্ব নেতাদের সমন্বিত, সুপরিকল্পিত, বাস্তবসম্মত ও সময়োপযোগী উদ্যোগের মাধ্যমে এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব। এন্টিমাইক্রোবায়াল রেজিটেন্স থেকে মুক্তির লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্ব নেতাদের সাথে উপস্থিতিতে যে ‘ওয়ান হেলথ সলিউশন’ প্রবর্তনের উদ্যোগ নিয়েছেন তার সফল বাস্তবায়ন জরুরি। একই সাথে এই বিষয়ে গণসচেতনতা বৃদ্ধিও জরুরি।

 

বিএসএমএমইউর এ ব্লক অডিটোরিয়ামে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডক্যিাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্ট্রাল সাব কমিটি এই সেমিনারের আয়োজন করে।

 

সহযোগী অধ্যাপক ডা. জহিদুল ইসলাম ছাড়া সেমিনারে মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. সাঈদা আনোয়ার,  ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. নাজমুল হাসান,  এন্টিবায়োটিকের উপর পৃথক দুটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।

 

সহযোগী অধ্যাপক ডা. সাঈদা আনোয়ার এন্টিমাইক্রোবায়াল স্টুওয়ার্ডশিপ কমিটির কাঠামো ও মাইক্রোবায়োলজীর ভূমিকা নিয়ে আলোকপাত করেন।

 

তিনি বলেন, পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোর হাসপাতালসমূহে এন্টিমাইক্রোবায়াল স্টুওয়ার্ডশিপ প্রোগ্রাম চালু হয়েছে। বিএসএমএমইউতেও এই প্রোগামটি অতিদ্রুত চালু করা প্রয়োজন। এটি সফলভাবে চালু করতে পারলে হাসপাতালে রোগী মৃত্যুর হার, রোগীর হাসপাতালে অবস্থানের সময়কাল কমানো সম্ভব হবে এবং এন্টিবায়োটিক প্রতিরোধী হয়ে উঠার প্রবণতা কমানো সম্ভব হবে। এর জন্য দরকার রোগের জীবাণু শনাক্ত এবং এন্টিবায়োটিকের কার্যক্ষমতা নির্ণয় করে সঠিক এন্টিবায়োটিক প্রয়োগ করা। এর জন্য তিনি মাইক্রোবায়োলজিস্ট, ক্লিনিক্যাল চিকিৎসবক, হাসপাতাল প্রশাসন, নার্সসহ সংশ্লিষ্টদের সমন্বিত কার্যক্রম গ্রহণের আবান জানান। এন্টিবায়োটিকের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত অবশ্যই করতে হবে। কারণ নিকট ভবিষতে বাজারে আর নতুন কোন এন্টিবায়োটিক আসবে না।

 

সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. নাজমুল হাসান ‘ রেশনাল ইউজ অফ এন্টিবায়োটিকস: ক্লিনিশিয়ান্স রোল ইন এন্টিমাইক্রোবায়াল স্টুওয়ার্ডশিপ’ শীর্ষক প্রবন্ধে অপ্রয়োজনে আন্টিবায়োটিক ব্যবহার না করার উপর অতি গুরুত্ব আরোপ করেন।

 

তিনি বলেন, সঠিক ঔষধ, সঠিক মাত্রায় নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ব্যবহার না করার কারণে এ্যান্টিবায়োটিক এর কার্যকারিত কমে যাচ্ছে। তাই এর সঠিক ব্যবহার নিশ্চিতকল্পে যত দ্রুত সম্ভব নীতিমালার বাস্তবায়ন জরুরি। তিনি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নীতিমালাটি অনুসরণেওর পরামর্শ দেন দেন। তিনি পশুপালন ও কৃষি ক্ষেত্রে এ্যান্টিবায়োটিক এর ব্যবহার নিমন্ত্রণের উপর জোর দেন।

 

সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মোঃ শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, আশঙ্কার বিষয় হলো বর্তমানে রোগীদের শরীরে আইসিইউতে রাখা রিজার্ভ এন্টিবায়োটিক যেমন মেরোপেনাম কাজ করছে না। অবশ্যই আমাদেরকে এন্টিবায়োটিকের অপব্যবহার রোধ করতে হবে এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। এটা বাস্তবায়ন না করতে পারলে, ২০৫০ সাল নাগাদ মানুষের শরীর এন্টিবায়োটিক প্রতিরোধী হওয়ার ফলে করোনার চাইতে দ্বিগুণ সংখ্যক মানুষ মৃত্যুবরণ করবে। তাই রেজিস্ট্রার চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কেউ যাতে এন্টিবায়োটিক ক্রয় বিক্রয় করতে না পারে তা অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে।

 

সেমিনারে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক ডা. একেএম মোশাররফ হোসেন, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. ছয়েফ উদ্দিন আহমদ প্রমুখসহ বিভিন্ন অনুষদের ডিন, বিভিন্ন বিভাগের চেয়ারম্যান, বিভিন্ন স্তরের শিক্ষক, কনসালটেন্ট, চিকিৎসক ও রেসিডেন্টগণ উপস্থিত ছিলেন। সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় সেন্ট্রাল সাব কমিটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. বেলায়েত হোসেন সিদ্দিকী। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন মনোরোগবিদ্যা বিভাগরে সহকারী অধ্যাপক ডা. ফাতিমা জোহরা।

 

ভোরের আকাশ/আসা

মন্তব্য

Beta version