এসি রুমে বসে ওয়ান হেলথ বাস্তবায়ন করা যাবে না বলে মন্তব্য করেছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ.ম রেজাউল করিম।
তিনি বলেন, ওয়ান হেলথ ধারণার সুফল পেতে বিষয়টি নিয়ে দেশের প্রত্যন্ত এলাকায় মাঠ পর্যায়ে কাজ করতে হবে। নইলে শুধু সভা, সেমিনার করে কাজ হবে না।
তিনদিনব্যাপী ১১তম ওয়ান হেলথ বাংলাদেশ-এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। সোমবার রাজধানীর রেডিসন ব্লু হোটেলে এ কনফারেন্স শুরু হয়েছে। যা চলবে আগামী বুধবার পর্যন্ত।
মানুষ, প্রাণী এবং প্রকৃতির মধ্যে সম্পর্ক ঠিক রেখে সবার স্বাস্থ্য ঠিক রাখার ধারণাই ওয়ান হেলথ। প্রতি দুই বছর পর পর ওয়ান হেলথ বাংলাদেশ কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়। করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে ২০১৯ সালের পর এবারই ওয়ান হেলথ বাংলাদেশ কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
এই কনফারেন্সে দেশ-বিদেশের কয়েকশজন চিকিৎসক, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, মৎস্য ও প্রাণিস্বাস্থ্যের চিকিৎসক, পরিবেশবিদরা অংশ নিয়েছেন।
কনফারেন্সের প্রথম দিনের উদ্বোধনী সেশনের সভাপতির বক্তব্যে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী বলেন, ওয়ান হেলথ ধারণা কতটা গুরুত্বপূর্ণ সবশেষ কোভিড মহামারীর সময় মানুষ দেখেছে।
তিনি বলেন, মানুষকে এটা স্বীকার করতেই হবে এবং বৈজ্ঞানিকভাবে এটা প্রমাণিত বিশ্বের অন্তত ৭০ শতাংশ সংক্রামক রোগ প্রাণীদেহ থেকে উৎপত্তি হয়, পরে মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। এজন্য সবাইকে একসঙ্গে কাজ করা দরকার।
“প্রাণীর অসুস্থতা মানে শুধু তারাই নয় প্রকারান্তরে মানুষের অসুস্থতা। এজন্য প্রাণীর চিকিৎসা শুধু তাদের জন্য নয়, মানুষের জন্যও।”
ওয়ান হেলথ সার্ভিস আরও শক্তিশালী করতে হবে উল্লেখ করে শ. ম. রেজাউল বলেন, ‘এটাকে প্রত্যন্ত এলাকায় মাঠ পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে। শুধু ঢাকা এবং বিভাগীয় শহরের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত রুমে বসে মিটিং করে ওয়ান হেলথ সার্ভিসের লক্ষ্য অর্জন করা যাবে না। আমি আশা করি ওয়ান হেলথের সঙ্গে জড়িত দেশ-বিদেশের সব মন্ত্রণালয়, সংস্থার মধ্যে কার্যকর সমন্বয় সাধন করতে হবে। একটি জোরালো লজিস্টিক সাপোর্ট প্রয়োজন, হাজারো সেমিনার, হাজার পরামর্শ কোনো কাজে আসবে না। এজন্য আমরা একসঙ্গে কাজ করতে পারি।’
অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম বলেন, মৎস্য বা প্রাণী স্বাস্থ্য, মানুষের স্বাস্থ্য কিংবা পরিবেশ-একটা আরেকটার ওপরে নির্ভরশীল। সবটা মিলিয়েই পৃথিবীর স্বাস্থ্য, মানুষের স্বাস্থ্য। সেই ধারণাকে ধারণ করেই আজ ওয়ান হেলথ প্ল্যাটফর্ম কাজ করছে।
ডা. খুরশীদ আলম বলেন, বাংলাদেশ এরইমধ্যে ওয়ান হেলথের অনেকগুলো কাজ করেছে। আরও কিছু কাজ শক্তভাবে করা উচিত। সার্ভিলেন্স এবং ওয়ান হেলথের সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন মন্ত্রণালয় বা স্টেকহোল্ডার তাদের মধ্যে তথ্য আদানপ্রদান ও প্রকৃত ব্যবস্থাপনা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে ইনটিগ্রেশন করা। স্টেকহোল্ডার, বিশেষ করে জনস্বাস্থ্য, প্রাণিস্বাস্থ্য, বন্যপ্রাণি, এনভায়রনমেন্টাল হেলথের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের প্রশিক্ষণে জোর দেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘আমরা যে লক্ষ্যে পৌঁছুতে চাই সেটা স্থির করে একটা সময় নির্ধারণ করে দেওয়া যে সময়ের মধ্যে আমরা যেটা অর্জন করব। অ্যান্টিমাইক্রোবায়াল রেজিস্ট্যান্সের কার্যকারিতা আমরা এখনও পরিপূর্ণভাবে অর্জন করতে পারিনি। আমরা আশা করবো অ্যান্টিমাইক্রোবায়াল পলিসি এবং প্রিন্সিপল আপনারা বাস্তবায়ন করতে পারবেন। সংক্রমণ প্রতিরোধ এবং নিয়ন্ত্রণ অত্যন্ত জরুরী ব্যাপার। সংক্রমণের জন্য চিকিৎসা ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। রোগীকে হাসপাতালে বেশি সময় থাকতে হচ্ছে, বেড অকুপেন্সি বাড়ছে, রোগী ভুগছে, অ্যান্টিবায়োটিক একটার পর একটা দেওয়া হচ্ছে যার ফলে খরচ বেড়ে যাচ্ছে।’
উদ্বোধনী সেশনে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু বিষয়ক মন্ত্রী শাহাব উদ্দিন, বাংলাদেশে ইউনিসেফের প্রতিনিধি শেলডন ইয়েট, ডা. নিতিশ চন্দ্র দেবনাথ, আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরিন, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এমদাদুল হক তালুকদার, প্রধান বন সংরক্ষক মো. আমির হোসেন চৌধুরী, বাংলাদেশে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিনিধি বর্ধন জং রানা বক্তব্য রাখেন।
ভোরের আকাশ/আসা
মন্তব্য