-->
শিরোনাম
বছরে ৪ লাখ মানুষ সাপের কামড়ের শিকার, মৃত্যু সাড়ে সাত হাজারের

সর্পদংশন বেশী ঘটে খুলনা- বরিশাল

নিজস্ব প্রতিবেদক
সর্পদংশন বেশী ঘটে খুলনা- বরিশাল

সর্পদংশন বেশী ঘটে খুলনা এবং বরিশাল বিভাগে। ২৫-৫৫ বছর বয়সী পুরুষেরা বাড়ীর আশে-পাশে সন্ধ্যা থেকে মধ্য রাতের ভিতরে সব চাইতে বেশী সর্পদংশনের শিকার হন। সর্পদংশন নিয়ে পরিচালিত জাতীয় জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে।

 

রোববার রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে ৪র্থ স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পুষ্টি সেন্টার কর্মসুচির প্রাপ্ত ফলাফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে এ জরিপ প্রকাশ করা হয়।

 

এই জরিপ অনুযায়ী বাংলাদেশে বছরে প্রতি লাখে ২৪৪ জন মানুষ সর্পদংশনের শিকার হন এবং প্রতি লাখে ৪ থেকে ৫ জন মানুষ মারা যান যার ৯৫ ভাগ হলো গ্রামে। গবেষণার এই ফলাফল থেকে অনুমান করা হয় বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় চার লক্ষ মানুষ সর্পদংশনের শিকার হন এবং দুর্ভাগ্য সাড়ে সাত হাজার মানুষ মারা যান।

 

জরিপে দেখা গেছে, সর্পদংশন বেশী ঘটে খুলনা এবং বরিশাল বিভাগে। ২৫-৫৫ বছর বয়সী পুরুষেরা বাড়ীর আশে-পাশে সন্ধ্যা থেকে মধ্য রাতের ভিতরে সব চাইতে বেশী সর্পদংশনের শিকার হন। শতকরা প্রায় ৮০ ভাগ মানুষ দংশনের পর দংশিত অঙ্গে গিঠ দেন এবং ৬৫ ভাগ মানুষ প্রথমেই 'ওঝা' বা প্রচলিত চিকিৎসকের নিকট চিকিৎসা নেন। সর্পদংশনের পরে প্রতি হাজারে ২ জন মানুষের অঙ্গ হানি ঘটে এবং ২-২৩ ভাগ মানুষ বিভিন্ন দীর্ঘ মেয়াদী শারীরিক অসুস্থতা ভোগ করেন। সর্পদংশনের পরে শতকরা প্রায় ১০ ভাগ মানুষ দীর্ঘ মেয়াদী অবসাদ গ্রস্ততায় আক্রান্ত হন। প্রতিটি সর্পদংশনের কারণে চিকিৎসার জন্য দংশিত ব্যক্তির প্রায় ২০০০ টাকা ব্যয় হয়।

 

এই জরিপে আরো জানা গেছে, প্রতি বছর প্রায় ১৯ হাজার গৃহপালিত পশু সর্পদংশনে আক্রান্ত হয় এবং এর মধ্যে ২৫০০ গৃহপালিত পশু মারা যায়, ফলে প্রতি বছর বিপুল পরিমান আর্থিক ক্ষতি হয়।

 

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, সর্পদংশন বাংলাদেশের একটি জরুরী অবহেলিত স্বাস্থ্য সমস্যা। সম্প্রতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সর্পদংশন কর্মকৌশল প্রণয়ন করেছে যাতে ২০৩০ সাল নাগাদ সর্পদংশন জনিত অসুস্থতা ও মৃত্যু ৫০ ভাগ কমিয়ে আনার লক্ষ্য ঘোষণা করেছে।

 

এরই সূত্র ধরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জাতীয় কর্মকৌশল প্রণয়ন করেছে। এই কর্মকৌশল বাস্তবায়ন এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। কর্তৃক প্রদত্ত লক্ষ্য অর্জনের জন্য বাংলাদেশে সর্পদংশনজনিত অসুস্থতা ও মৃত্যুর হালনাগাদ তথ্য জানা অত্যন্ত জরুরী। এই কারণে অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচী (এনসিডিসি) দেশব্যাপী একটি সর্পদংশন জরিপ করে।

 

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগ এবং সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন এন্ড রিসার্চ, বাংলাদেশ এর যৌথ নেতৃত্বে অনেকগুলি প্রতিষ্ঠান এবং সংস্থার অংশগ্রহণে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো এর সহায়তায় দেশব্যাপী দৈবচয়নের ভিত্তিতে নির্ধারিত ২০০টি পিএসইউ এর ৬২,০০০ খানাতে বাড়ী বাড়ী গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এর সাথে চট্টগ্রাম এবং রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পূর্বে চিকিৎসা গ্রহণ করা ৪০০ জন সর্পদংশন রোগীর বর্তমান শারীরিক ও মানসিক অক্ষমতা যাচাই করা হয়।

 

এনসিডিসি আয়োজিত এই জরিপ রিপোর্ট প্রকাশনা অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য মন্ত্রী , স্বাস্থ্য সচিব ও অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এবং দেশের বিশিষ্ট চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের উপস্থিতি ছিলেন।

 

এই জরিপ বাংলাদেশে বর্তমানে সর্পদংশনজনিত অসুস্থতা ও মৃত্যু সম্বন্ধে তথ্য হালনাগাদ করেছে। যা ভবিষ্যতে সর্পদংশনের বিভিন্ন বিষয় সমাধানে ও কর্মকৌশল প্রণয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা সংশ্লিষ্টদের।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version