সেন্ট্রাল হসপিটালের প্রতারণা ও ভুল চিকিৎসায় নবজাতকসহ প্রসূতি মাহবুবা রহমান আঁখির মৃত্যু ঘটনায় সেন্ট্রাল হসপিটাল এবং ডা. সংযুক্তা সাহার বাংলাদেশ মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) নিবন্ধন বাতিলের দাবি জানিয়েছেন স্বামী ইয়াকুব আলী সুমন। একইসঙ্গে স্ত্রী ও নবজাতকের মৃত্যুতে দুই কোটি ক্ষতিপূরণের দাবিও জানিয়েছেন তিনি।
রোববার (২৫ জুন) বেলা ১১টায় বিএমডিসি প্রেসিডেন্ট এবং রেজিস্ট্রার বরাবর জমা দেওয়া এক আবেদনে এসব দাবির কথা জানান ইয়াকুব আলী সুমন।
আবেদনে ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, আমার প্রয়াত স্ত্রী মাহবুবা রহমান (আঁখি) সন্তান গর্ভধারণের পর অধ্যাপক ডা. সংযুক্তা সাহার ব্যথামুক্ত নরমাল ডেলিভারি বিষয়ক ফেসবুক ভিডিও দেখে তার কাছে চিকিৎসাসেবা ও ডেলিভারি করাবেন বলে সিদ্ধান্ত নেন। সেই হিসেবে আঁখি কয়েক দফা সংযুক্তা সাহার চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করে।
এরপর গত ৯ জুন রাত ৯টায় আমার স্ত্রীর প্রসব ব্যথা হলে আমি প্রথমে সংযুক্তা সাহার অ্যাসিস্টেন্ট জমিরকে ফোন করে জানাই। এসময় ডা. সংযুক্তা সাহা চেম্বারে আছেন বলে জমির ও সংযুক্তা সাহার একজন অ্যাসিস্টেন্ট ডাক্তার আমাকে নিশ্চিত করে আঁখির অ্যাপয়েন্টমেন্ট নেয়।
আঁখির স্বামী ইয়াকুব বলেন, অ্যাপয়েন্টমেন্ট দেওয়ার পর আমরা রাত ১২টা ২৫ মিনিটে সেন্ট্রাল হাসপাতালে পৌঁছাই। এ সময় ডা. সংযুক্তা সাহার চেম্বারে গেলে কিছু স্টাফ ডা. সংযুক্তা সাহা ওপরে লেবার ওয়ার্ডে আছেন বলে আমাদের লেবার ওয়ার্ডে নিয়ে যায়। আমি ডা. সংযুক্তা সাহার সঙ্গে দেখা করতে চাইলে লেবার ওয়ার্ডে ডা. সংযুক্তা সাহার একজন অ্যাসিস্টেন্ট চিকিৎসক আমার স্ত্রী মাহবুবা রহমানকে ভেতরে নিয়ে যায় এবং আমাকে বাইরে অপেক্ষা করতে বলে।
‘এর কিছুক্ষণ পর আমাকে নিচে এডমিশন ফি দিতে বলে। আমি নিচে গিয়ে ডা. সংযুক্তা সাহার নামে এডমিশন নিই। মানি রিসিট এনে ডা. সংযুক্তার সঙ্গে কথা বলতে চাইলে বলা হয় আপনার স্ত্রীর ডেলিভারি হচ্ছে, সংযুক্তা সাহা সেখানে ব্যস্ত আছেন, পরে কথা বলবে। এরপর আমার পারমিশন না নিয়েই ডা. সংযুক্তা সাহার টিমের সদস্য ডা. মুনা সাহা, ডা. শাহজাদী মুস্তাশিদা সুলতানা আমার স্ত্রীকে ৪৫ মিনিট ব্যায়াম করায় এবং সাইড কাটতে গিয়ে মুত্রনালি ও মলদ্বারসহ অন্যান্য অর্গান কেটে ফেললে মারত্মক রক্তক্ষরণ হয়, যা বন্ধ করতে তারা ব্যর্থ হয়।’
সুমন আরও বলেন, আমার আনুমতি ছাড়াই অজ্ঞান অবস্থায় আঁখিকে ওটিতে নিয়ে সিজার করে বাচ্চা বের করে। পরবর্তী সময়ে আমি ডা. মাকসুদা আক্তার মিলি, ডা. এহসানকেও ওটিতে দেখতে পাই। আমি ডা. সংযুক্তা সাহাকে খোঁজাখুঁজি করলে তারা সকালে আমাকে জানায় ডা. সংযুক্তা সাহা নেই। শাহজাদী মুস্তাশিদা সুলতানা স্বীকার করেন যে তিনি ডা. সংযুক্তা সাহার নির্দেশে এ কাজ করেছেন। এরপর রোগীকে জরুরিভাবে ঢাকা মেডিকেল নিয়ে যেতে আমাকে বলে, কিন্তু আমি তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশের সহযোগিতা নিয়ে ল্যাবএইড হাসপাতালে নিয়ে সিসিইউতে ভর্তি করাই।
আঁখির স্বামী আরও বলেন, ল্যাবএইড হাসপাতালে ভর্তি করানোর পর সেন্ট্রাল হাসপাতাল থেকে জানানো হয় আমার সন্তান মারা গেছে এবং তারা মর্গে রেখেছে। এরপর গত ১৮ জুন দুপুরে আমার স্ত্রী মাহবুবা রহমানও ইন্তেকাল করেন। পরে ১৯ জুন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পোস্ট মর্টেম শেষে রাত ১০টায় কুমিল্লার লাকসামে আমার স্ত্রী ও সন্তানকে দাফন করা হয়।
পারিবারিক অবস্থার বর্ণনা দিয়ে ইয়াকুব আলী বলেন, আমার স্ত্রী মাহবুবা রহমানের বাবা, ভাই, বোন কেউই নেই। বিধবা মা তার একমাত্র সন্তান মাহবুবা রহমানকে খুব কষ্ট করে লেখাপড়া করিয়েছেন। মাহবুবা রহমান চাকরি করে মায়ের কষ্ট লাঘব করবেন এমন প্রত্যাশা ছিল। মাহবুবা রহমান রাজধানীর সরকারি ইডেন মহিলা কলেজের গণিত বিভাগের মাস্টার্সে অধ্যয়নরত ছিলেন। একমাত্র সন্তানকে হারিয়ে আঁখির মাও এখন মৃতপ্রায়।
তিনি বলেন, আমি গত তিন বছর ধরে আমার স্ত্রী মাহবুবা রহমানকে নিয়ে খুব সুখে শান্তিতে দাম্পত্য জীবন অতিবাহিত করছিলাম। আমাদের সন্তানকে নিয়ে অনেক পরিকল্পনা, অনেক আয়োজন, অনেক কেনাকাটা হয়েছিল, কিন্তু সেন্ট্রাল হাসপাতালের ভুল চিকিৎসায় নিমিষেই যেন সবকিছু শেষ হয়ে গেল। আমি এখন বেঁচে থাকার সাহসটুকু হারিয়ে ফেলেছি।
আমার স্ত্রী ও নবজাতককে হত্যা করা হয়েছে, এজন্য আমি দুই কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করছি। একইসঙ্গে সেন্ট্রাল হাসপাতালের রেজিস্ট্রেশন এবং ডা. সংযুক্তা সাহার রেজিস্ট্রেশন বাতিলের দাবি করছি।
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য