সারা দেশের মতো রংপুরেও ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়েছে। রংপুরে বর্তমানে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছেন ১১ জন। তবে ডেঙ্গু আক্রান্তরা সবাই ঢাকা ফেরত বলে জানিয়েছেন রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও কলেজের উপাধ্যক্ষ প্রফেসর ডা. মাহফুজুর রহমান।
সরেজমিনে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডে দেখা যায়, সাধারণ রোগীদের সঙ্গে গাদাগাদি করে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদেরও রাখা হয়েছে। ডেঙ্গু রোগীরা মশারি টানানো অবস্থায় থাকলেও সাধারণ রোগীদের মাঝে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগী ও স্বজনদের অভিযোগ, ডেঙ্গু রোগীদের জন্য আলাদা ইউনিট না খোলায় সাধারণ রোগীদের সঙ্গে গাদাগাদি করে রাখা হচ্ছে। এতে অন্য রোগীদের মাঝে আক্রান্ত হওয়ারও ঝুঁকি বাড়ছে। দ্রুত ডেঙ্গু রোগীদের জন্য আলাদা ওয়ার্ড চালুর দাবি জানান তারা।
চিকিৎসাধীন কুড়িগ্রাম জেলার ফরহাদ হোসেন জানান, তিনি ঢাকায় একটি বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। ঈদের ছুটিতে বাড়িতে এসে অসুস্থ হয়ে পড়লে এ হাসপাতালে ভর্তি হন। পরীক্ষার পর ডেঙ্গু ধরা পড়েছে চিকিৎসকরা জানান।
ঢাকা থেকে ঈদের ছুটিতে আসা শিক্ষার্থী সৌখিন জানান, তিন দিন ধরে প্রচন্ড জ্বরের কারণে লালমনিরহাটে হাসপাতালে ভর্তি হন। সেখানে অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। এখানে সাতদিন ধরে মেডিসিন ওয়ার্ডে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
ডেঙ্গু আক্রান্ত রংপুর নগরীর মাহিগঞ্জ এলাকার সালেকুজ্জামান অভিযোগ করে বলেন, হাসপাতালে ঠিকমতো ডাক্তার আসেন না। প্রয়োজনীয় চিকিৎসাও মিলছে না। এখানে ডেঙ্গু রোগীদের কোনো ওষুধ দেয়া হয় না। ডাক্তাররাও ঠিকমতো আসেন না। ডেঙ্গু রোগীদের আলাদা ইউনিটে রাখার ব্যবস্থা করেনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সাধারণ রোগীদের সঙ্গে গাদাগাদি করে থাকতে হচ্ছে।
মেডিসিন ওয়ার্ডের সাধারণ রোগী রমজান আলী বলেন, অবাক করার মতো ঘটনা, এত বড় হাসপাতালে কয়েকজন ডেঙ্গু রোগী রাখার জায়গা নেই। একসঙ্গে রাখলে অন্য কারও তো ডেঙ্গু হতে পারে এ বিষয়টি জানার পরও আলাদা ইউনিট খুলছে না। ডেঙ্গু রোগীদের সঙ্গে সাধারণ রোগীরা থাকায়, কেউ ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হলে এর দায় কে নেবে? একই অভিযোগ সাধারণ রোগী রবিন মিয়ার। এ নিয়ে ওয়ার্ডজুড়ে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে রোগী, স্বজন এবং অন্যদের।
এ ব্যাপারে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও কলেজের উপাধ্যক্ষ প্রফেসর ডা. মাহফুজুর রহমান জানান, ডেঙ্গু রোগীদের বেডগুলো মশারি টানানো যাতে অন্য কেউ আক্রান্ত না হয়। তারপরও ডেঙ্গু রোগীদের জন্য আলাদা ওয়ার্ড হলে ভালো হতো। বিকল্প ব্যবস্থার কথা মাথায় নিয়ে কাজ করা হচ্ছে।
তিনি আরো জানান, চিকিৎসাধীন এবং চেম্বারে যারা চিকিৎসা নিচ্ছেন সবাই ঢাকা থেকে আসা। রংপুরে ডেঙ্গুর প্রকোপ নেই।
এর মধ্যে গত মঙ্গলবার ডেঙ্গুতে মারা যান রংপুর সদর হাসপাতাল কলোনির বাসিন্দা হরিজন মানু লালের ছেলে বুলেট লাল (৩৮)। তিনি ঢাকা হাইকোর্ট এলাকায় পরিছন্নকর্মী হিসেবে কাজ করতেন। সেখানে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে বাড়ি চলে আসেন এবং অবস্থার অবনতি হলে তাকে সোমবার রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. ইউনুছ আলী জানান, হাসপাতালে ১১ জন রোগী ভর্তি আছেন। তারা সবাই ঢাকায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে রংপুরে এসে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তবে দ্রুত ডেঙ্গু রোগীদের জন্য আলাদা ওয়ার্ডের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে।
রংপুর সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর কবির জানান, ডেঙ্গু বিষয়ে ঈদের আগে থেকে রংপুর সিটি করপোরেশন, রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে সচেতনতা করা হয়েছে।
রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা জানান, নগরীতে বর্তমানে এডিস মশা কিংবা ডেঙ্গু নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। রংপুরে ডেঙ্গু নাই বললেই চলে। ঢাকায় আক্রান্তরাই রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এসে ভর্তি হয়েছে। তবুও রংপুর সিটি করপোরেশন ডেঙ্গু রোধে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। মশক নিধন ও পরিচ্ছন্নতা কাজে প্রায় দুই শতাধিক কর্মী সার্বক্ষণিক নিয়োজিত রয়েছে।
আমরা এ বিষয়ে সজাগ রয়েছি।
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য