কমিউনিটি ক্লিনিক শেখ হাসিনার উদ্ভাবনী নেতৃত্বের ফসল

নিখিল মানখিন ও আরিফ সাওন
কমিউনিটি ক্লিনিক শেখ হাসিনার উদ্ভাবনী নেতৃত্বের ফসল

কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টের সভাপতির দায়িত্বে আছেন প্রখ্যাত চক্ষু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ এবং সমাজকল্যাণবিষয়ক উপদেষ্টা ছিলেন। বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিলের চেয়ারম্যান তিনি। কমিউনিটি ক্লিনিকের সামগ্রিক বিষয় নিয়ে তিনি দৈনিক ভোরের আকাশের সঙ্গে খোলাখুলি কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বিশেষ প্রতিনিধি নিখিল মানখিন ও নিজস্ব প্রতিবেদক আরিফ সাওন

 

দৈনিক ভোরের আকাশ: বিশ্ববাসীকে কমিউনিটি ক্লিনিকের ধারণা অনুসরণ করার আহব্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ। উন্নত দেশগুলোকে পেছনে ফেলে কীভাবে এ প্রকল্প বিশ্বের রোলমডেল হিসেবে স্বীকৃতি পেল?

 

অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী: কমিউনিটি ক্লিনিক আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চিন্তাপ্রসূত কার্যক্রম এবং বর্তমান সরকারের সাফল্যের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত, যা দেশে এবং বিদেশে সর্বক্ষেত্রেই প্রশংসিত হয়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিক প্রকল্পবিষয়ক রেজ্যুলেশন পাস করানোর মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অসামান্য উদ্ভাবনী নেতৃত্বকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দিয়েছে জাতিসংঘ। এ কার্যক্রমের মাধ্যমে দরিদ্র এবং সুবিধাবঞ্চিত গ্রামীণ জনগোষ্ঠী নিকটস্থ কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে সমন্বিত স্বাস্থ্য, পরিবার পরিকল্পনা এবং পুষ্টিসেবা গ্রহণ করে থাকে।

 

তিনি বলেন, বিশ্বের কোনো দেশই দেশের সব জনগণকে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার আওতায় আনতে পারেনি। ১৯৭৮ সালে আলমাআটাতে, তখন সবাই মিলে বসেছিল, সেখানে সকলের জন্য স্বাস্থ্যসেবার বিষয়টি বিশেষভাবে আলোচনায় আনা হয়। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তখন বুঝতে পেরেছিলেন যে, প্রাথমিক পর্যায়ে এ ধারণা কার্যকর করে তোলা সম্ভব নয়। বঙ্গবন্ধুর কাছ থেকে যে আদর্শ, দর্শন পেয়েছিলেন তিনি তা বাস্তবে রূপ দেয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করেন।

 

ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী বলেন, কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কীভাবে নিজের দর্শন প্রয়োগ করলেন এখন সেদিকে আসি। একটা হচ্ছে, সার্বজনীন চিকিৎসা ব্যবস্থা সম্প্রসারিত করলেন। কমিউনিটি ক্লিনিকের প্রথম দিক হচ্ছে সার্বজনীন স্বাস্থ্য ব্যবস্থা যেটা বিশ্ববাসী চায়, কিন্তু এটার বাস্তব মডেল ছিল না, যা দেখে বাস্তবায়ন করা যাবে। কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে তিনি সেই মডেলটা সৃষ্টি করলেন। ছয় থেকে ৮ হাজার লোক এবং বাড়ি থেকে ২৫ মিনিটের পথ পাড়ি দিয়েই তারা প্রাথমিক চিকিৎসা পাবে এবং অনেকেই প্রাথমিক পর্যায়ের সিরিয়াস অবস্থা থেকে রেহাই পাবেন।

 

ভোরের আকাশ: কমিউনিটি ক্লিনিক ব্যবস্থায় চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যসেবার পাশাপাশি আরো কী কী বিষয় যুক্ত হয়েছে?

 

ডা. মোদাচ্ছের আলী: কমিউনিটি ক্লিনিক ইতোমধ্যে সমাজে সৃষ্টি করেছে সামাজিক আন্দোলন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে গ্রামের বেকার মানুষের বিশেষ করে মেয়েদের চাকরির বন্দোবস্ত করলেন। চাকরির শিক্ষাগত যোগ্যতা এইচএসসি উত্তীর্ণদের মধ্যে রাখা হয়। এতে চাকরির আশায় গ্রামের মেয়েদের মধ্যে স্কুলে যাওয়ার প্রবণতা বেড়ে গেল। কমে যায় বাল্যবিয়ে। ইচ্ছা করলে প্রধানমন্ত্রী মেয়েদের জন্য মাইক্রো ক্রেডিটের ব্যবস্থা করতে পারতেন। কিন্তু তা করলেন না। মাইক্রো ক্রেডিটের ব্যবস্থা করলে গ্রামের মেয়েদের সামাজিক সচেতনতা ও মর্যাদা বাড়বে না। কমিউনিটি ক্লিনিকে যেসব মেয়ে কাজ করবে পরিবার ও সমাজে তাদের আলাদা অবস্থান তৈরি হবে। স্বামীরা তাদের ইচ্ছামতো নির্যাতন করার সাহস করবে না।

 

এভাবে এই কমিউনিটি ক্লিনিক প্রকল্পের মাধ্যমে তিনি সমাজের বাল্যবিয়ে কমিয়ে দিলেন এবং স্কুলে যাওয়া শিক্ষার্থীদের সংখ্যা বাড়ালেন। আর তাদের সামাজিক মর্যাদা বাড়িয়ে দিলেন। এই প্রকল্প চালু করার মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সামগ্রিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সঙ্গে সবাইকে যুক্ত করলেন। প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষকে তিনি মূলধারায় নিয়ে এলেন। নারীদের সম্মান বাড়ালেন।

 

ডা. মোদাচ্ছের আলী আরো বলেন, কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে দলমত নির্বিশেষে একসাথে বসার, আলোচনা করার এবং দেখা-সাক্ষাতের পরিবেশ ও জায়গা তৈরি হলো। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ বৃদ্ধি পেয়েছে। এলাকায় মিলন ও শান্তিময় পরিবেশের মাত্রা বেড়ে যায়। এভাবে কমিউনিটি ক্লিনিক কিন্তু অনেক কাজ করল।

 

শুধু স্বাস্থ্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকল না। এখন এই ক্লিনিকের মাধ্যমে তৈরি হচ্ছে স্বাস্থ্য সেক্টরের ডাটাভিত্তিক নানা পরিসংখ্যান। তৈরি হয় একটি সামাজিক বিপ্লব। এই বিপ্লবের সুবিধা গ্রহণকারীদের মধ্যে স্বাস্থ্যের পরই রয়েছে সাম্য স্থাপন। এই মডেল বিশ্বের প্রত্যক দেশকে অনুসরণ করতে নির্দেশনা দিতে বাধ্য হলো জাতিসংঘ। এরচেয়ে বড় অর্জন আর কিছু হতে পারে না।

 

ভোরের আকাশ: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সৃষ্টি কমিউনিটি ক্লিনিক ইতোমধ্যে পাড়ি দিয়েছে দীর্ঘ পথ। এই পথচলার ঘাত-প্রতিঘাত সম্পর্কে কিছু বলুন।

 

ডা. মোদাচ্ছের আলী: আমি মনে করি মূলত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হলেন একজন দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক। সুতরাং তিনি একটা দর্শন নিয়ে কাজ করেন। এটার পেছনের দিক টেনে বলতে হয়, ১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্ট যখন বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের প্রায় সব সদস্য এবং অনেক নিকট আত্মীয়স্বজনকে হত্যা করা হয়, সেদিন শুধু বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়নি, সাথে সাথে তার যে দর্শন তা ভেঙেচুরে দেয়া হয়।

 

১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফিরে নেত্রী শেখ হাসিনা দলের সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। সেই সঙ্গে তিনি বঙ্গবন্ধুর ভেঙেচুরে যাওয়া দর্শনের জোড়া লাগানোর চেষ্টা করেন। দর্শনের মূল বিষয়টা তিনি নিজের হৃদয়ে ধারণ করে তা বাস্তবে কীভাবে বাস্তবায়ন করা যাবে, সেই পন্থা গ্রহণ করলেন। যেগুলোকে প্রাধিকার প্রকল্প বলা হয়। তার মধ্যে কমিউনিটি ক্লিনিকও অন্যতম।

 

ডা. মোদাচ্ছের আলী বলেন, ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসেই তিনি কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে সকলের জন্য সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা দেয়ার বন্দোবস্ত করলেন। সেটা শুরু হয়েছিল ১৯৯৮ সাল থেকে। দুর্ভাগ্যবশত তা ২০০১ সালে বিএনপি যখন ক্ষমতায় আসে, তখন ক্লিনিকের কার্যক্রম থমকে যায়। বিএনপি ভেবেছিল আওয়ামী লীগের গড়া ক্লিনিকের কার্যক্রম চালু রাখলে জনগণ আওয়ামী লীগের প্রশংসা করবে। শেখ হাসিনাকে আর ক্ষমতা থেকে সরানো যাবে না।

 

এমন চিন্তা করে তারা ক্লিনিকের কার্যক্রম বন্ধ করে দিল। বিএনপির এমন চিন্তাধারা পরবর্তীতে হিতে বিপরীত হয়ে যায়। চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হয়ে বিএনপির এমন সিদ্ধান্তের প্রতি অসন্তুষ্ট প্রকাশ করল দেশের মানুষ।

 

রাজনৈতিক আদর্শ ও দর্শনে বিএনপির সাথে আওয়ামী লীগর পার্থক্য থাকতেই পারে। কিন্তু চিকিৎসাসেবা থেকে জনগণকে তো বঞ্চিত করা যায় না। কিন্তু বিএনপি জনগণকে সাজা দিল, সেবা থেকে বঞ্চিত করল। ২০০১ সালেও তারা নির্বাচনে জয়ী হয়ে জনগণকে সাজা দিয়েছিল। আসলে এদিক থেকে পাকিস্তানের ইয়াহিয়া খান ও খালেদা জিয়ার আচরণের মধ্যে কোনো পার্থক্য দেখা যায় না। তাদের আদর্শ হলো জমি থাকলেই হলো, জনগণ না থাকলেও চলবে।

 

২০০৮ সালে যখন আবার ক্ষমতায় এলেন, তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এটা কার্যকর মডেল হিসেবে শুরু করলেন। তিনি একের পর এক ক্লিনিক গড়তে শুরু করলেন। এটা হচ্ছে জনগণের সঙ্গে সরকারের অংশীদারিত্ব। এই অংশীদারিত্বকে স্থায়ী রূপ দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি ট্রাস্ট গঠন করে তা সংসদে পাস করালেন।

 

ভোরের আকাশ: আমরা যতদূর শুনেছি, এই প্রকল্পটি প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকারভিত্তিক প্রকল্পগুলোর মধ্যে একটি এবং এই প্রকল্পে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ নজর আছে, তিনি সার্বক্ষণিক মনিটরিং করেন। বর্তমানে এই প্রকল্পটির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কেমন নজর রাখেন ?

 

ডা. মোদাচ্ছের আলী: কমিউনিটি প্রকল্পটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসনিার অতি আদরের একটি প্রকল্প। আর একটি কাজ শুরু করে তা ভুলে যান না তিনি। তিনি তা সার্বক্ষণিক মনিটরিং করেন। কমিউনিটি ক্লিনিকের ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রম নয়। তিনি অনেক সময় নির্দেশনা দেন যে, কমিউনিটি ক্লিনিকের এই ব্যাপারটাকে আরেকটু উন্নতি করতে হবে। আর তিনি এমনভাবে নির্দেশনা দেন যে, ওটাকে নির্দেশনা মনে হয় না। মনে হয় যেন আমাদেরও তিনি কমিউনিটি ক্লিনিকের একজন হিসেবে নানা দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন। মানে আমরা শুধু এই দার্শনিকের কর্মী না। তিনি দার্শনিক হয়েও এই কর্মযজ্ঞের সঙ্গে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন। এটা হচ্ছে আমাদের সবচেয়ে বড় পাওনা। এটা আমার মনে হয় একমাত্র বঙ্গবন্ধুর কন্যার পক্ষেই সম্ভব।

 

ডা. মোদাচ্ছের আলী আরো বলেন, আমরা কয়জন আমাদের ড্রাইভারের, বাড়ির লোকের খোঁজ রাখি ? তিনি নিজে ফোন করে আমাদের কাজের খোঁজখবর নিয়ে থাকেন। এতে আমাদের কাজের যে আগ্রহ এবং কাজ সঠিকভাবে করার যে দায়িত্ববোধ তা অনেকগুণ বেড়ে যায়।

 

ভোরের আকাশ: কমিউনিটি ক্লিনিক প্রকল্পবিষয়ক রেজ্যুলেশন পাস করানোর মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অসামান্য উদ্ভাবনী নেতৃত্বকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দিয়েছে জাতিসংঘ। বিশ্ব মডেল এখন কমিউনিটি ক্লিনিক। কমিউনিটি ক্লিনিক ট্রাস্টের সভাপতি হিসেবে আপনার অনুভূতি জানতে চাই?

 

ডা. মোদাচ্ছের আলী: এ বিষয়ে আমার অনুভ‚তি প্রকাশ করে শেষ করা যাবে না। সকল প্রশংসা ও কৃতিত্বের দাবিদার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আমি তার কর্মীমাত্র। ট্রাস্টের প্রথম সভাপতি করা হলো আমাকে এবং দ্বিতীয়বারও আমিই সভাপতি হলাম। আসলে ১৯৯৬ সাল থেকেই এই কমিউনিটি ক্লিনিকের সঙ্গে কর্মী হিসেবে আমাকে যুক্ত করেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কাজ করার একটা সুবিধা হলো, তিনি নির্দেশ দিয়েই বসে থাকেন না, তিনি সবকিছুতে নিজেই খেয়াল রাখেন।

 

অর্থাৎ এই কমিউনিটি ক্লিনিকের যত সফলতা, তার প্রতিটি জায়গায় এই দার্শনিক রাষ্ট্রনায়কের সরাসরি নজর ও তদারকি আছে। তিনি যাদের বিশ্বাস করেন, তাদের দ্বারা তদারকি করিয়েছেন। এজন্য ক্লিনিক প্রকল্পে এসেছে সফলতা।

 

তিনি বলেন, আমি এখন জীবনের শেষ প্রান্তে চলে এসেছি। এমন অর্জন দেখার পর আমাকে কেউ যদি প্রশ্ন করে, আপনার আর কোনো অতৃপ্তি আছে নাকি? সময় না নিয়ে আমি বলে দেব, আমার আর কোনো অতৃপ্তি নাই। কারণ, দার্শনিক শেখ হাসিনার একটি মডেল বিশ্বসভার মাধ্যমে বিশ্বে ছড়িয়ে দিতে পেরেছেন।

 

তিনি প্রতিটি কাজ যেভাবে তদারকি করেন, আমি ইচ্ছা করলেও পিছিয়ে থাকতে পারব না। যেকোনো কর্মীই একই তালে কাজ করতে বাধ্য হবেন। কাজের গতি একটু কম বা বেশি হতে পারে। প্রতিটি স্তরে দার্শনিক শেখ হাসিনার অবদান রয়েছে। কারণ, শত প্রতিকূল অবস্থার মাঝেও তিনি ক্লিনিক প্রকল্প ছেড়ে দেননি। সাংবাদিক সমাজও ব্যাপক অবদান রেখেছে।

 

ভোরের আকাশ: কমিউনিটি ক্লিনিকের বর্তমান সেবা কার্যক্রম সম্পর্কে কিছু বলুন।

 

ডা. মোদাচ্ছের আলী: জাতিসংঘে প্রথমবারের মতো কমিউনিটিভিত্তিক স্বাস্থ্যসেবাবিষয়ক একটি রেজ্যুলেশন সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হওয়ার বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফল নেতৃত্বের আরেকটি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি।

 

এই ক্লিনিক প্রকল্পটি ইতোমধ্যে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার রোলমডেল হিসেবে বিশ্বে সুনাম অর্জন করেছে। কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে ইপিআই টিকা ও কোভিড ভ্যাকসিন প্রদানসহ সারা দেশের প্রান্তিক জনগণের স্বাস্থ্য, পরিবার পরিকল্পনা ও পুষ্টিসেবা দেয়ার জন্য বিনামূল্যে ৩০ ধরনের ওষুধ এবং স্বাস্থ্যসেবা সামগ্রী দেয়া হচ্ছে।

 

বাড়ির পাশেই মিলছে স্বাস্থ্যসেবা। দেশের মানুষকে নিরবচ্ছিন্ন স্বাস্থ্যসেবা দেয়ার লক্ষ্যে সরকার এ পর্যন্ত সারা দেশে পাবলিক-প্রাইভেট অংশীদারিত্বে ১৪ হাজারেরও বেশি কমিউনিটি ক্লিনিক প্রতিষ্ঠা করেছে। বিনামূল্যে সেবাদান সহজ করার জন্য কর্মরত সব সিএইচসিপিকে ল্যাপটপ ও মডেম দেয়া হয়েছে। বর্তমানে সব কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে ডিজিটালি অনলাইন রিপোর্টিং করা হচ্ছে। সেবা সহজীকরণের জন্য মাল্টিপারপাস হেলথ ভলান্টিয়ারের মাধ্যমে সিসিকর্ম এলাকায় অবস্থানরত খানার প্রত্যেক সদস্যের ডিজিটালি হেলথ ডাটা সংগ্রহ করা হয়েছে।

 

এ পর্যন্ত ১১ লাখ গ্রামীণ জনগণকে হেলথ আইডি কার্ড দেয়া হয়েছে। ১০৭টি উপজেলায় এ কার্যক্রম চলমান। পর্যায়ক্রমে সারা দেশে হেলথ আইডি কার্ড দেয়া হবে। সেবাগ্রহীতার সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি সেবার পরিধি সম্প্রসারিত হওয়ার প্রেক্ষাপটে ৫ শতাংশের পরিবর্তে বর্তমানে ৮ শতাংশ জমিতে চার কক্ষবিশিষ্ট নতুন নকশার ভিত্তিতে কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণ করা হচ্ছে। এ পর্যন্ত মোট ১৪ হাজার ২২৩টি কমিউনিটি ক্লিনিকের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে।

 

তিনি আরো বলেন, কমিউনিটি ক্লিনিকের একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো এটি সরকার ও জনগণের সম্মিলিত অংশীদারিত্বের একটি সফল কার্যক্রম; যার ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখা এবং স্থায়িত্বের লক্ষ্যে আমাদের সরকার ‘কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্ট আইন’ জাতীয় সংসদে পাস করেছে।

 

ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী বলেন, চার হাজারেরও অধিক কমিউনিটি ক্লিনিকে স্বাভাবিক প্রসবের ব্যবস্থা রয়েছে এবং এই সাড়ে ১৪ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিকের প্রতিটি ক্লিনিকে প্রতি মাসে বাচ্চাদের জিপিআই কর্মকান্ডের মাধ্যমে টিকা প্রদান করা হয়ে থাকে। আমাদের কমিউনিটি ক্লিনিকে যে রোগীগুলো জটিল এবং দুরারোগ্য রোগ নিয়ে আসে কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে তাদের নিকটস্থ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে অথবা বিশেষায়িত হাসপাতালে পাঠানো হয়।

 

ভোরের আকাশ: কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যক্রমে কী কী নতুন সেবা যুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে।

 

ডা. মোদাচ্ছের আলী: কমিউনিটি ক্লিনিকে দৈনিক সেবাগ্রহণকারীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। বর্তমানে প্রতিটি ক্লিনিকে একজন কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) কাজ করছেন। সেবাগ্রহণকারীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার তাদের ওপর চাপ বেড়েছে। সে জন্য চিন্তা করছি, একজন কমিউনিটি হেলথ ওয়ার্কার দিয়ে হবে না। প্রতিটি ক্লিনিকে আরেকজন কমিউনিটি হেলথ ওয়ার্কার নিয়োগ দেয়া দরকার। কারণ নেত্রীর যে দর্শন সেটা ঠিক রাখতে হবে, যাতে কেউ চিকিৎসার বাইরে না থাকে।

 

তিনি আরো বলেন, স্থানীয় জনগণ যাতে এই কমিউনিটি ক্লিনিককে কেন্দ্র করে আরো সমাজের উন্নতি করতে পারে, সে বিষয়টিও গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে হলে স্মার্ট জনগণ লাগবে। জনগণের স্বাস্থ্য ঠিক থাকতে হবে। স্মার্ট জনগণ সুস্বাস্থ্যের অধিকারী না হলে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার কার্যক্রম ব্যাহত হবে। তাই স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য নেত্রীর যে চিন্তাধারা সেটা কিন্তু কমিউনিটি ক্লিনিক পালন করে চলেছে।

 

স্বাস্থ্যসেবায় যারা নিয়োজিত তারা বিশেষ করে আমাদের ব্যাপারে যেটা বিশেষভাবে প্রযোজ্য, কমিউনিটি ক্লিনিকও স্মার্ট হতে হবে। সেই কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপের ওষুধও ক্লিনিক থেকে দেয়া হচ্ছে।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য