-->
শিরোনাম

প্রান্তিক মানুষের জন্য শেখ হাসিনার ভালোবাসা ‘কমিউনিটি ক্লিনিক’

নিখিল মানখিন ও আরিফ সাওন
প্রান্তিক মানুষের জন্য শেখ হাসিনার ভালোবাসা ‘কমিউনিটি ক্লিনিক’

কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টের কমিউনিটি গ্রুপ অ্যান্ড কমিউনিটি সাপোর্ট গ্রুপের ন্যাশনাল কো-অর্ডিনেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন শাহানা পারভীন। কমিউনিটি ক্লিনিকের সামগ্রিক বিষয় নিয়ে তিনি দৈনিক ভোরের আকাশের সঙ্গে খোলাখুলি কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বিশেষ প্রতিনিধি নিখিল মানখিন ও নিজস্ব প্রতিবেদক আরিফ সাওন

 

দৈনিক ভোরের আকাশ : বিশ্বে বেশ সাড়া জাগিয়েছে কমিউনিটি ক্লিনিক প্রকল্প। প্রকল্পটির কার্যক্রম দেখতে বিদেশি প্রতিনিধিদের আগমনও বেড়েছে। এর পেছনের রহস্যটা কী?

 

শাহানা পারভীন: কমিউনিটি ক্লিনিক এ মুহূর্তে বিশ্বে স্বাস্থ্যসেবার রোলমডেল। গোটা বিশ্ব এটির পেছনে ছুটছে। তার উদাহরণ আপনারা দেখবেন গত তিন থেকে চার দিন ধরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অনেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও স্বাস্থ্য সেক্টরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গা ঘুরে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো পরিদর্শন করছেন। আমি গত ১২ জুলাই নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের জিন্দা কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধন ও পরিদর্শন অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম।

 

অনুুষ্ঠানে চারটি দেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও স্বাস্থ্য সেক্টরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। তার আগে রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে জনস্বাস্থ্য ও ক‚টনীতিবিষয়ক দুই দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলোর মন্ত্রী, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ তিন শতাধিক প্রতিনিধি অংশ নেন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্ভাবনী নেতৃত্বের সফল কমিউনিটি ক্লিনিকের ধারণা ও কার্যক্রমের ভূয়সী প্রশংসা করেন।

 

তিনি বলেন, কমিউনিটি ক্লিনিক নিয়ে বিশ্ববাসীর এমন আগ্রহের পেছনের রহস্যটা কী? বাংলাদেশ কীভাবে স্বাস্থ্যসেবায় এগিয়ে গেল? কীভাবে গোটা বাংলাদেশের মানুষকে তারা একত্রিত করে সমপর্যায়ে নিয়ে এসে সব প্রান্তিক মানুষকে বিশেষ করে দেশের মানুষকে সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবার আওতায় আনার প্রক্রিয়া আবিষ্কৃত হলো, তা বিশ্ববাসীকে হতবাক করে দিয়েছে।

 

জাতিসংঘ পরিপূর্ণভাবে সার্থকতার সাথে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বাস্থ্যসেবার এই দর্শন ও উদ্ভাবনী নেতৃত্বের মূল্যায়ন করেছেন। কমিউনিটি ক্লিনিক প্রকল্পবিষয়ক রেজ্যুলেশন পাস করানোর মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অসামান্য উদ্ভাবনী নেতৃত্বকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দিয়েছে জাতিসংঘ। এই রহস্য উদ্ঘাটন করতেই বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে ছুটোছুটি করছেন বিভিন্ন দেশের স্বাস্থ্য সেক্টরের কর্তাব্যক্তিরা।

 

ভোরের আকাশ: কমিউনিটি ক্লিনিক প্রকল্পের ধারণা কীভাবে উদ্ভাবিত হলো, বিশ্বের কোনো দেশের স্বাস্থ্যসেবা মডেলের সঙ্গে প্রকল্পের মিল রয়েছে কি?

 

শাহানা পারভীন: আমাদের গর্বের বিষয় হচ্ছে এই জায়গাটাতে। বিশ্বে এই প্রথম একজন রাষ্ট্রনায়ক, দার্শনিক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অদ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছেন। এটি একেবারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চিন্তাপ্রসূত। বিশ্ব ও নিজের দেশের বাস্তবতা থেকে অর্জিত অভিজ্ঞতায় প্রকল্পটি তৈরি করেছেন প্রধানমন্ত্রী। এটি একদম তার মাথার ভেতর থেকে সৃষ্টি হয়েছে, কারো কাছ থেকে প্রাপ্ত মডেল নয়। যা নিয়ে জাতিসংঘ গর্ববোধ করেছে, স্বীকৃতি দিয়েছে।

 

এটির পেছনে কয়েকটি কারণ আছে। প্রথমত, আপনি যদি বলতে চান যে কী সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ? সেটি হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিজস্ব দর্শন। প্রধানমন্ত্রী নিজে একজন দার্শনিক। তার দর্শনটি হচ্ছে, সুবিধাবঞ্চিত মানুষগুলোকে দেশের অন্যতম প্রধান মৌলিক অধিকার ‘স্বাস্থ্যসেবা’ নিশ্চিত করা, যে মৌলিক অধিকার নিশ্চিতকল্পে আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান উদ্যোগ নিয়েছিলেন।

 

আপনি দেখবেন যে, মাত্র সাড়ে তিন বছরে সংবিধানে জাতির পিতা এই অধিকার প্রতিষ্ঠা করে গেছেন। সেই প্রতিষ্ঠিত সংবিধান থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এটিকে বয়ে নিয়ে চলেছেন। এখন শুধু বয়ে নিয়ে চলা নয়, এটি এখন বিশ্বের মানুষের নজরে পড়েছে। প্রকল্পটির দর্শনটি অনুসরণ করার জন্য পরামর্শ দিয়েছে জাতিসংঘ। বিশ্বনেতারা প্রকল্পটি নিয়ে রীতিমতো ইতিবাচক আলোচনা করছেন। বিভিন্ন দেশের উচ্চপর্যায়ের স্বাস্থ্যমন্ত্রী থেকে শুরু করে উপমন্ত্রী পর্যায়ের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা আমাদেরকে কীভাবে প্রকল্পটি সফলতা পেল তার ওপর নানা প্রশ্নে জর্জরিত করেছেন। আমরা তাদেরকে সুন্দরভাবে বুঝিয়ে দিয়েছি। কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো ঘুরে দেখিয়েছি। পরিদর্শন করে ক্লিনিকগুলোর কার্যক্রম প্রত্যক্ষ করে তারা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।

 

ভোরের আকাশ : আপনারা বলছেন, প্রকল্পটি মূলত পাবলিক-প্রাইভেট অংশীদারিত্বে গড়ে উঠেছে। বিষয়টি ব্যাখ্যা করুন।

 

শাহানা পারভীন: দেশের মানুষকে নিরবচ্ছিন্ন স্বাস্থ্যসেবা দেয়ার লক্ষ্যে সরকার এ পর্যন্ত সারা দেশে পাবলিক-প্রাইভেট অংশীদারিত্বে ১৪ হাজারেরও বেশি কমিউনিটি ক্লিনিক প্রতিষ্ঠা করেছে। ‘কমিউনিটিভিত্তিক প্রাথমিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থা: সার্বজনীন স্বাস্থ্য পরিষেবা অর্জনের লক্ষ্যে একটি অংশগ্রহণমূলক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক পদ্ধতি’ শিরোনামের ঐতিহাসিক রেজ্যুলেশনটি সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বে বাংলাদেশে কমিউনিটি ক্লিনিকভিত্তিক মডেল প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অসামান্য উদ্ভাবনী নেতৃত্বকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দিয়েছে জাতিসংঘ। বাংলাদেশ কর্তৃক প্রস্তাবিত রেজ্যুলেশনটিতে জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলো কমিউনিটি ক্লিনিক প্রতিষ্ঠায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফল উদ্ভাবনী উদ্যোগের ব্যাপক স্বীকৃতি দিয়ে এই উদ্যোগকে ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে উল্লেখ করে।

 

তিনি বলেন, কমিউনিটি ক্লিনিক আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চিন্তাপ্রসূত কার্যক্রম এবং বর্তমান সরকারের সাফল্যের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত, যা দেশে এবং বিদেশে সর্বক্ষেত্রেই প্রশংসিত হয়েছে। এ কার্যক্রমের মাধ্যমে দরিদ্র এবং সুবিধাবঞ্চিত গ্রামীণ জনগোষ্ঠী তারা নিকটস্থ কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে সমন্বিত স্বাস্থ্য, পরিবার পরিকল্পনা এবং পুষ্টিসেবা গ্রহণ করে থাকে।

 

কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যক্রমকে গতিশীল এবং টেকসই করার লক্ষ্যে মহান জাতীয় সংসদে কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্ট আইন অনুমোদন করা হয় এবং এই আইনের বলে কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্ট একটি সংবিধিবদ্ধ সংস্থা হিসেবে কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টের আওতাধীন সিবিএসসি অপারেশন প্ল্যানের মাধ্যমে কমিউনিটি ক্লিনিকসমূহ পরিচালিত হচ্ছে।

 

শাহানা পারভীন বলেন, সফলতার পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে জনসম্পৃক্ততা। জনসম্পৃক্ততা ছাড়া আপনি কোনো কিছু করতে পারবেন না। যদি আপনি বুঝিয়ে দিতে পারেন, এই সম্পত্তিটা হচ্ছে আপনার। অর্থাৎ ক্লিনিকের জমিদাতা হলেন জনগণ। ক্লিনিক ভবন ও কার্যক্রম তদারকি করার দায়িত্বও তাদের। অর্থাৎ এখানে জোরালো জনসম্পৃক্ততা রয়েছে। সৃষ্টি হয়েছে পারস্পরিক দায়বদ্ধতা। কমিউনিটি হেলথ প্রোভাইডারদের (সিএইচসিপি) দায়িত্বহীন হওয়ার সুযোগও কম।

 

কারণ, চোখ-কান খোলা রাখেন ক্লিনিক ভবনটির মালিক, জনগণ ও সংশ্লিষ্ট কমিটির সদস্যরা। ফলে সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে অসুবিধায় পড়তে হয় না। এখানে আমার নিজের লেখা একটা গান আছে। গানটির একটা চমৎকার লাইন আমি উচ্চারণ করি, সেটি হচ্ছে আমরা জনগণকে বারবার বলে দিচ্ছি ‘ভূমিখানি হচ্ছে তোমার পাহারা দিবে তুমি। শরীরখানি হচ্ছে তোমার যত্ন নেবে তুমি...’।

 

প্রধানমন্ত্রী নিজে কী করছেন? কমিউনিটি ক্লিনিকের যত সফলতা, তার প্রতিটি জায়গায় এই দার্শনিক রাষ্ট্রনায়কের সরাসরি নজর ও তদারকি আছে। জনগণের দেয়া জমিতে ক্লিনিক ভবন করে দিচ্ছে সরকার। নিয়োগ দেয়া হয়েছে সিএইচসিপি। তাদেরকে দেয়া হয়েছে প্রশিক্ষণ ও চিকিৎসক উপকরণ। সরকারের পাঠানো ওষুধগুলো জমির মালিক, কমিটির সদস্যরা প্রথমে খুলে দেখেন। করো চুরি করার সুযোগ নেই। ক্লিনিক যেন জনগণের সম্পত্তি। পাহারাও দেন তারা। এমন পারস্পরিক দায়বদ্ধতা তৈরি করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

 

শাহানা পারভীন আরো বলেন, এখানে আমার মাঝে মাঝে মনে হয়, আল্লাহতায়ালা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমাদের দেশের সেবা করার জন্যই বাঁচিয়ে রেখেছেন। তিনি বহুবার হত্যাচেষ্টার শিকার হয়েছে। ১৫ আগস্টে সবাই আপনারা জানেন যে দুঃখের কাহিনী, সেখান থেকে ভাগ্যক্রমে নেত্রী বেঁচে গেছেন এবং তার ছোট বোন। এই বাঙালিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য বেঁচে আছেন তিনি। শেখ হাসিনা আত্মমর্যাদা আর ভালোবাসা জনগণকে দিয়ে যাচ্ছেন। সেই ভাবনার জায়গাটাতে ভাবতে হবে বাংলাদেশ কোন পথে হাঁটছে, বাংলাদেশ সত্যিই এগিয়ে যাওয়ার পথে থাকছে।

 

সোনার বাংলা গড়ার যে পথটা নেত্রী তৈরি করছেন সেখানে আমি বলব এই কমিউনিটি ক্লিনিকই গণতন্ত্রের বাস্তব উদাহরণ। এখানে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান কোনো ভেদাভেদ নেই। সবাই আসছে, সবাই চিকিৎসা নিচ্ছে। সেখানে কী বলা আছে যে, যদি আওয়ামী লীগের কেউ আসে চিকিৎসা দিবা এবং বিএনপির কেউ আসলে তাদের তোমরা চিকিৎসা দিবা না এ ধরনের কোনো বৈষম্য নেই কমিউনিটি ক্লিনিকের স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রমে। আমরা মানুষ হিসেবে দেখছি। মানুষ হিসেবে তাদেরকে আমরা চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছি। এজন্যই জাতিসংঘ মুগ্ধ হয়ে এই প্রথম পৃথিবীতে একজন রাষ্ট্র নায়কের নামে ‘শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ স্বীকৃতিটি দিয়েছে। সেবা ও গণতন্ত্রের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আমাদের এটা বয়ে নিয়ে চলতে হবে। অনেক দূরে যেতে হবে।

 

ভোরের আকাশ: কমিউনিটি ক্লিনিককে নিয়ে কী ধরনের সুদূর প্রসারী পরিকল্পনা রয়েছে?

 

শাহানা পারভীন: কমিউনিটি ক্লিনিকের সুদূর প্রসারী ভাবনার শেষ নেই। তৃণমূল পর্যায়ের জনগণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে সময়ের চাহিদা অনুযায়ী পরিকল্পনাসমূহ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। সুদূর প্রসারী যে চিন্তাটা সেটি হচ্ছে আরো ১০ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক গড়ে তোলা হবে। ছয় হাজার মানুষের জন্য একটি ক্লিনিক গড়ে তোলার উদ্দেশ্য অনেকটা সফলতা পেয়েছে। যেখানে জনসংখ্যা বেশি সেখানে গড়ে তোলা হবে নতুন ক্লিনিক ভবন।

 

আর একটি বিষয় হচ্ছে, সিএনইচসিপিদের যে সমস্যাটা সেটি অতি দ্রুত সমাধান হয়ে যাচ্ছে। তাদের বেতন-ভাতা, ইনক্রিমেন্ট অতি দ্রুত সমাধানের পর্যায়ে। শিগগির এই সমস্যাসমূহের সমাধান হবে বলে আমরা আশা করছি। এটি একটি আশার বাণী আপনাদেরকে শোনালাম। সেই সাথে আরেকটি আশার বাণী হলো, প্রতিটি ক্লিনিকে আরেকজন সিএইচসিপি নিয়োগ দেয়া হবে। কমিউনিটি ক্লিনিকে দৈনিক সেবাগ্রহণকারীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে।

 

বর্তমানে প্রতিটি ক্লিনিকে একজন কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) কাজ করছেন। সেবাগ্রহণকারীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় তাদের ওপর চাপ বেড়েছে। সে জন্য চিন্তা করছি, একজন কমিউনিটি হেলথ ওয়ার্কার দিয়ে হবে না। প্রতিটি ক্লিনিকে আরেকজন কমিউনিটি হেলথ ওয়ার্কার নিয়োগ দেয়া দরকার। কারণ নেত্রীর যে দর্শন সেটা ঠিক রাখতে হবে, যাতে কেউ চিকিৎসার বাইরে না থাকে।

 

শাহানা পারভীন বলেন, অনেক চ্যানেলে গেলে ক্লিনিকে ডাক্তার নেয়ার বিষয়ে নানা প্রশ্ন করে থাকেন। ক্লিনিকে ডাক্তার দিচ্ছেন না কেন? উত্তরে আমি বলি, ক্লিনিকের ধারণা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্ভাবনী নেতৃত্বের একটি কার্যকর দর্শন। রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই একজন দার্শনিক। তার দর্শন হলো কমিউনিটি ক্লিনিকে কোনো ডাক্তার থাকবে না। আমাদের দেশে কতজন ডাক্তার আছে? সাড়ে ১৪ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিকে কি আমরা এখন ডাক্তার দিতে পারব? আর সবচাইতে যে বড় কথা যে, কনসেপশনটা আমি আপনাদের কাছে পরিষ্কার করতে চাই- এটি হচ্ছে প্রাথমিক স্ক্রিনিং কেন্দ্র। এখানে তো আমরা জটিল রোগের চিকিৎসা করছি না। রেফার সিস্টেমের মাধ্যমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আমরা রোগীকে রেফার করছি।

 

ভোরের আকাশ: নারীর ক্ষমতায়ন ও উন্নয়নে কমিউনিটি ক্লিনিক কীভাবে ভূমিকা রাখছে?

 

শাহানা পারভীন: সবচাইতে বড় জিনিস হচ্ছে কি জানেন? বাংলাদেশের এই যে উন্নয়নটা, এই উন্নয়নের সবচাইতে বড় যে চাবিকাঠি সেটি হচ্ছে নারী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একজন নারী। তিনি প্রত্যেকটি নারীর কান্না শুনতে পান। আমি আপনাদেরকে এ কথাটা প্রমাণ দিতে পারব না। এটি একটি অনুভূতির ব্যাপার। একটা ভাবনার জায়গা তৈরি হয়। এই একজন নারী হিসেবে আমাদের ভাবনার জায়গাটা থেকে আমি এটা বিশ্বাস করছি এবং প্রমাণ থেকে বলছি। তিনি বাংলাদেশের প্রত্যেকটা নারীর কান্না শুনতে পান। তিনি নারীদেরকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।

 

কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপিদের মধ্যে ৫০ শতাংশ নারী। দেখেন জাতির মানে প্রত্যেকটা জাতির প্রধান হলেন মা। আপনাকে আপনার মা বড় করেছে। আমাকে আমার মা তৈরি করেছে। সেই মায়ের যদি আমরা যত্ন না নিই তাহলে বিশুদ্ধ জাতি কীভাবে তৈরি করব। এজন্য নারীর প্রতি সহানতভূতিশীল, নারীর নিরাপত্তার হাত এগিয়ে দিতে হবে, যা আমাদের প্রধানমন্ত্রী করে চলেছেন। আর সেই জায়গাটাতে আমি আকাশজুড়ে গর্বিত একজন নারী হিসেবে। নারী পান, বিড়ি ও সিগারেট কিছু খায় না। তারা তাদের কাজটাকে অনেক চ্যালেঞ্জিং হিসেবে নেয়। আপনাদের হাতটাও নারীদের প্রতি এগিয়ে দেবেন।

 

ভোরের আকাশ : সেবা গ্রহণকারী, কমিউনিটি সাপোর্ট গ্রুপ এবং সিএইচসিপিদের উদ্দেশে কিছু বলেন।

 

শাহানা পারভীন: সাপোর্ট গ্রুপের সদস্যদের উদ্দেশে বলতে চাই, আপনাদের ক্লিনিক দেখেশুনে রাখার দায়িত্ব আপনাদের। আমরা কমিউনিটি ক্লিনিককে নিজেদের মনে করে থাকি। তাই আপনি আপনার আলোক থেকে কমিউনিটি ক্লিনিকে যাবেন।

 

প্রয়োজনে সিএসসিপিকে বলেন যে, আপনার এই জায়গাটা ঠিক হচ্ছে না, আপনি এই জায়গাটা একটু ঠিক করুন। আপনার এই যে সিঁড়ির জায়গাটা মানুষ পড়ে গিয়ে ভেঙে যেতে পারে, তা ঠিক করুন। আমিও সাপোর্ট গ্রুপে জড়িত। এজন্য আমি বলি কমিউনিটি সাপোর্ট গ্রুপের সদস্যের কোনো হিসাব নাই। আর সেই জায়গাটায় কাজ করতে পেরে আমি নিজেকে ভীষণ ভাগ্যবান মনে করি এই ভেবে যে, প্রান্তিক মানুষ যে মানুষগুলোর কোনো সুযোগ-সুবিধা ছিল না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। প্রান্তিক অঞ্চলের জনগণকে তিনি কেন্দ্রে যুক্ত করে দিয়েছেন।

 

শাহানা পারভীন বলেন, এটি চমৎকার একটি দর্শন। আর সেই জায়গাটাতে সবচাইতে বড় দায়িত্ব হচ্ছে সিএইচসিপিদের। তারা শুধু যে তাদেরকে ওষুধ দেবে তা না। এই গ্রামের মানুষগুলোর প্রতি আমাদের অনেকগুলো দায়-দায়িত্ব আছে। শুধু চিকিৎসা প্রদান নয়, নারী নির্যাতন ও বাল্যবিবাহ প্রতিরোধেও তারা ভূমিকা রাখেন।

 

কমিউনিটি ক্লিনিকের সেবাগ্রহীতাদের উদ্দেশে বলতে চাই, আপনারা দুই হাত তুলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য আল্লাহতায়ালার কাছে দোয়া চাইবেন, তিনি যেন এই উন্নয়নকে স্থিরতার সাথে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেন। তিনি যেন সুস্থ থাকেন, সবল থাকেন, অনেক, অনেক, অনেক দিন বেঁচে থাকেন। আমি আসলে খুব বেশি লেখালেখি করি না। অনেকে আমাকে দোষ দেয়। আমি নাকি বঙ্গবন্ধু আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়েই কবিতা লিখি।

 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে লেখা একটি কবিতার কয়েকটি লাইন দিয়ে সাক্ষাৎকার শেষ করতে চাই। সেটি হচ্ছে “হে জননী তোমার বন্ধ চোখ সেও তো ঘুমায় না, সে ঘুমের বদলে তুমি বাংলাদেশকে ভাবো, সে ঘুমের বদলে তুমি বাঙালিকে ভাবো, সে ঘুমের বদলে জাগ্রত তোমার মানবতার দিঠি...”।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version