-->
শিরোনাম

অভিযোগ দিয়ে ফাঁসলেন ছাত্রলীগ নেতা

আরিফ সাওন
অভিযোগ দিয়ে ফাঁসলেন ছাত্রলীগ নেতা

আরিফ সাওন: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ব বিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ভিসি প্রফেসর ডা. শারফুদ্দিন আহমেদের পিএস-১ সহযোগী অধ্যাপক ডা. রাসেলের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর কাছে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি এমআর মামুনের দেয়া অভিযোগের প্রমাণ পায়নি তদন্ত কমিটি। সেজন্য কমিটি ডা. রাসেলকে দায় মুক্তি দেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।

 

তবে একান্ত সচিব পদটি স্পর্শকাতর বিধায় ডা. রাসেলকে তার কার্যক্রমে আরো সচেতন হওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এছাড়া ডা. রাসেলের বিরুদ্ধে অভিযোগকারীকে ভবিষ্যতে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ না দেয়ার জন্যও সুপারিশ করা হয়েছে।

 

চলতি বছরের গত ২৯ জানুয়ারি ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি এমআর মামুন প্রধানমন্ত্রীর কাছে ডা. রাসেলের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দেন। তার অভিযোগ ছিল, চাকরি দেয়ার কথা বলে ডা. রাসেল তার সঙ্গে প্রতারণা করেছে। চাকরির প্রত্যাশায় তিনি ডা. রাসেলের সঙ্গে বিএসএমএমইউ এবং তার চেম্বারে বিনা পারিশ্রমিকে সময় দিয়েছেন।

 

এছাড়া বিভিন্ন সময়ে ডা. রাসেল ও তার স্ত্রীকে উপঢৌকন দিয়েছেন। এ অভিযোগের পর গত ৭ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় কর্ক্ষৃপক্ষ এ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোভিসি (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মো. মনিরুজ্জামান খানকে সভাপতি করে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে।

 

তদন্ত কমিটিতে সদস্য সচিব করা হয় বিএসএমএমইউর অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার মুহাম্মদ সালাহ উদ্দিন সিদ্দিককে। অন্য দুজন সদস্য হলেন ফিজিক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. একেএম সালেক ও জেনারেল সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. মো. আবুল কালাম চৌধুরী।

 

এ কমিটি তদন্ত শেষে গত ২৯ মে বিএসএমএমইউর রেজিস্ট্রারের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। বিএসএমএমইউর অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার মুহাম্মদ সালাহ উদ্দিন সিদ্দিক স্বাক্ষরিত ছয় পাতার ওই তদন্ত প্রতিবেদনের ডা. রাসেলেকে দায়মুক্তি দেয়া ও সচেতন থাকার সুপারিশের পাশাপাশি অভিযোগকারী মামুনের বিষয়েও মতামত দিয়েছে তদন্ত কমিটি।

 

প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘এমআর মামুন অনৈতিকভাবে কার্যক্রমে সম্পৃক্ত হয়ে স্বীয় স্বার্থ হাসিলের (চাকরি গ্রহণ) চেষ্টা করেন এবং মিথ্যা অভিযোগ উপস্থাপন করায় ভবিষ্যতে তাকে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ না দেয়ার জন্য সুপারিশ করা হলো।’

 

এ প্রসঙ্গে অভিযোগকারী সাবেক ছাত্রলীগ নেতা এমআর মামুন ভোরের আকাশকে বলেন, তদন্ত কমিটি যে রিপোর্ট দিয়েছে, আমি তা পাইনি। কী দিয়েছে, তা-ও জানি না। সুপারিশের বিষয়ে তাকে অবহিত করা হলে তিনি বলেন, এ রিপোর্ট মনগড়া। ডা. রাসেলকে বাঁচাতে নিজেদের মতো করে প্রতিবেদন তৈরি করেছে। ডা. রাসেলের বিচার এক দিন হবে। আমি একটু ঝামেলায় আছি। ঝামেলা শেষ হলে ২ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে মামলা করব।

 

সুপারিশের আগে তদন্ত কমিটি তাদের পৃথক ১১টি মতামত দিয়েছে। মতামতে বলা হয়, ‘যেহেতু এম আর মামুনের ভাষ্যমতে ডা. রাসেলের সঙ্গে টাকা পয়সা লেনদেনের বিষয়ে পূর্বে কখনোই কোনো আলাপ হয়নি। তাছাড়া টাকার অঙ্কের বিষয়ে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত না নিয়ে কেউ কোনোদিন লেনদেন করে না বলে কমিটির নিকট প্রতীয়মান হয় বিধায় কমিটি মনে করেন এমআর মামুন নিজ দায়িত্বে প্রথমে ৫ লাখ টাকা এবং পরের দিন ৬ লাখ টাকা নিয়ে ডা. রাসেলকে ঈড়হারহপবফ করতে চেষ্টা করেছিলেন। তিনি এ টাকা গ্রহণ না করে চিৎকার চেচামেটি করে এমআর মামুনকে গালমন্দ করেছেন।’

 

‘ডা. রাসেলের ৫ সদস্যের পরিবারের জন্য কার্টন কার্টন ফল প্রেরণ করার অভিযোগ কমিটির নিকট সঠিক বলে প্রতীয়মান হয় না। কারণ এত বেশি পরিমাণ ফল, মাছ/মাংস সাধারণত কেউ কারো বাসায় নিয়ে আসে না। উদ্দেশ্যমূলকভাবে মাছ/মাংস ও ফলের পরিমাণ উল্লেখ করা হয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়। তাছাড়া এমআর মামুনের ভাষ্যমতে তিনি কখনো ডা. রাসেলের বাসায় যাননি বা তাকে যাওয়া অনুমতি দেয়া হয়নি।’

 

‘আজিমপুর হতে বিএসএমএমইউতে আসা যাওয়ার ক্ষেত্রে এমআর মামুন একটানা ১ বছর ৪ মাস (৪৮০ দিন) প্রতিদিনের হিসাব দিয়েছেন। এ ১ বছর ৪ মাসের মধ্যে ডা. রাসেল ওমরাহসহ বিদেশ সফর ও সরকারি ছুটির দিনে ক্যাম্পাসে আসা গ্রহণযোগ্য অভিযোগ নয়। আজিমপুর হতে আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালেও দৈনিক সময় দিয়ে ১ বছর ৪ মাসের (৪৮০ দিন) হিসাব গ্রহণযোগ্য নয়।

 

কারণ ডা. রাসেল সপ্তাহে ৫ দিন চেম্বারে যান এবং হজসহ বিদেশেও দীর্ঘদিন ছিলেন বিধায় এমআর মামুনের দাবি সত্য বলে প্রতীয়মান হয় না।’ ‘দামি পোশাক উপটোকন হিসেবে প্রদান করার অভিযোগও সঠিক নয়। কারণ বাসায় প্রবেশ করতে না পেরে এমআর মামুন বাসার নিচতলায় সিকিউরিটি গার্ডের নিকট রেখে যাওয়া পোশাক যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাকসুদুর রহমান ও ছাত্রলীগ নেতা ইয়াজ আল রিয়াদের উপস্থিতিতে ফিরিয়ে দেয়া হয়। বিষয়টি দুজনের সঙ্গে কথা বলে ও নিশ্চয়তা পাওয়া যায়।’

 

‘ডা. রাসেলের চাহিদা ব্যতীত কিংবা কোনো প্রকার লিখিত বা মৌখিক চুক্তি ব্যতীত কখনো এত বড় অঙ্কের টাকা লেনদেন গ্রহণযোগ্য নয়। তাছাড়া ডা. রাসেল এ টাকা গ্রহণ না করার কথা এমআর মামুন নিজেই জানান।’ ‘বর্তমান প্রশাসনের সময়কালে প্রায় ২ হাজার জন জামায়াত-শিবির/স্বাধীনতাবিরোধী কর্মচারীকে ডা. রাসেলের সুপারিশে নিয়োগ দেয়ার অভিযোগ সঠিক নয়।

 

কারণ এত বড়সংখ্যক কর্মচারী কর্মকর্তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে এ সময়ে নিয়োগই দেয়া হয়নি। এমআর মামুন কমিটিতে উপস্থিত হয়ে এ প্রশাসন কর্তৃক নিয়োগকৃত ২ হাজার জন জামায়াত-শিবির/মুক্তিযুদ্ধবিরোধী কর্মচারীর তালিকা প্রদানের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করলেও কোনো তালিকা দেখাতে পারেননি। কমিটির পক্ষ হতে বারবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি পরবর্তীতে সাড়া দেননি। এতে প্রতীয়মান হয়, প্রশাসনকে বিব্রত করার উদ্দেশ্যে তিনি এ কৌশলী অভিযোগ করেন।’

 

‘ডা. রাসেলের স্ত্রী কর্তৃক সপ্তাহে ২ হাজার টাকা ড্রাইভারের মাধ্যমে গ্রহণ করা এবং খাদ্যদ্রব্যের ডিমান্ড করার বিষয়টিও গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ এমআর মামুন ও ডা. রাসেলের স্ত্রী কর্তৃক কিছু লিখিত চ্যাটিংয়ের মাধ্যমে দেখা যায় যে, এমআর মামুন উপহার সামগ্রী প্রদান করার বিষয়ে আকৃতি প্রকাশ পায়। চ্যাটিংয়ে এমআর মুমুন কর্তৃক ডা. রাসেলের স্ত্রীকে কনভিন্সড করার প্রবণতা দেখা যায়।’ ‘এমআর মামুন কর্তৃক এর পূর্বেও প্রধানমন্ত্রী বরাবর সংসদ সদস্য আব্দুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকড কে নিয়েও অভিযোগ করার একটি আবেদন পাওয়া যায় (যাহা অভিযুক্ত ডা. রাসেল কর্তৃক প্রদানকৃত)।

 

এতে প্রতীয়মান হয় যে, উচ্চপর্যায়ে কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ কিংবা মিথ্যা প্রচার করার প্রবণতা দেখা যায়। বিষয়টি প্রকৃত সত্য হলে তিনি ভিসির বরাবর অভিযোগ দিতে পারতেন। তিনি সরাসরি সরকারপ্রধান বরাবর আবেদন করেন, যা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে প্রতীয়মান হয়।

 

প্রাপ্ত অভিযোগ, জবানবন্দি এবং পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিশ্লেষণ করে কমিটির নিকট প্রতীয়মান হয়, এমআর মামুন কমিটিতে তার অভিযোগ প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছে।’

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version