-->
শিরোনাম

শিশু ডেঙ্গু রোগী বৃদ্ধিতে চিকিৎসকদের উদ্বেগ

নিখিল মানখিন
শিশু ডেঙ্গু রোগী বৃদ্ধিতে চিকিৎসকদের উদ্বেগ

নিখিল মানখিন: শিশু ডেঙ্গু রোগী ও মৃত্যুহার বৃদ্ধি বেশ উদ্বেগজনক বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে ২০ শতাংশ শিশু রোগী। আক্রান্তের পাশাপাশি ডেঙ্গুতে মোট মৃত্যুর ১২ শতাংশ শিশু।

 

চিকিৎসকরা বলছেন, এক বছরের কম বয়সি শিশুরা বেশি ঝুঁকিতে আছে। জ্বর থাকলেই ডেঙ্গু পরীক্ষা করা উচিত; এটাকে ভাইরাল জ্বর বলে অবহেলা করা উচিত নয়। জ্বর চলে গেলে ভয় শুরু হয়, তখন আরো সতর্ক হতে হবে। ছোট শিশুদের ডেঙ্গুর চিকিৎসা করা কঠিন কারণ তাদের রক্তচাপ সঠিকভাবে মাপা যায় না বলে জানান চিকিৎসকরা।

 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, বয়সভিত্তিক পরিসংখ্যানে চলতি বছর মোট ডেঙ্গু রোগীর মধ্যে শূন্য থেকে ৫ বছর বয়সি ৬ শতাংশ, ৬ থেকে ১০ বছর বয়সি ৬ শতাংশ, ১১ থেকে ১৫ বছরের ৮ শতাংশ, ১৬ থেকে ২০ বছর বয়সি ১৩ শতাংশ, ২১ থেকে ২৫ বছরের ১৬ শতাংশ, ২৬ থেকে ৩০ বছরের ১৩ শতাংশ, ৩১ থেকে ৩৫ বছরের ৯ শতাংশ, ৩৬ থেকে ৪০ বছর বয়সি ৯ শতাংশ, ৪১ থেকে ৪৫ বছরের ৫ শতাংশ, ৪৬ থেকে ৫০ বছর বয়সি ৫ শতাংশ, ৫১ থেকে ৫৫ বছরের ৪ শতাংশ, ৫৬ থেকে ৬০ বছরের ৩ শতাংশ, ৬১ থেকে ৬৫ বছর বয়সি ২ শতাংশ, ৬৬ থেকে ৭০ বছরের ১ শতাংশ, ৭১ থেকে ৭৫ বছর বয়সি ১ শতাংশ, ৭৫ থেকে ৮০ বছর বয়সি শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ এবং ৮০ বছরের বেশি বয়সি শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ।

 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, বয়সভিত্তিক পরিসংখ্যানে চলতি বছর ডেঙ্গুতে মারা যাওয়া মোট রোগীর মধ্যে শূন্য থেকে ৫ বছর বয়সি ৪ শতাংশ, ৬ থেকে ১০ বছর বয়সি ৫ শতাংশ, ১১ থেকে ১৫ বছরের ৩ শতাংশ, ১৬ থেকে ২০ বছর বয়সি ৭ শতাংশ, ২১ থেকে ২৫ বছরের ৯ শতাংশ, ২৬ থেকে ৩০ বছরের ৮ শতাংশ, ৩১ থেকে ৩৫ বছরের ৯ শতাংশ, ৩৬ থেকে ৪০ বছর বয়সি ১০ শতাংশ, ৪১ থেকে ৪৫ বছরের ৮ শতাংশ, ৪৬ থেকে ৫০ বছর বয়সি ৭ শতাংশ, ৫১ থেকে ৫৫ বছরের ৫ শতাংশ, ৫৬ থেকে ৬০ বছরের ৭ শতাংশ, ৬১ থেকে ৬৫ বছর বয়সি ৭ শতাংশ, ৬৬ থেকে ৭০ বছরের ৪ শতাংশ, ৭১ থেকে ৭৫ বছর বয়সি ৩ শতাংশ, ৭৫ থেকে ৮০ বছর বয়সি ২ শতাংশ এবং ৮০ বছরের বেশি বয়সি শূন্য দশমিক ২ শতাংশ।

 

রাজধানীর মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. আবু শিমুল সাঈদ বলেন, একাধিক রোগী এক বিছানায় চিকিৎসা নিচ্ছেন আবার কেউ ফ্লোরে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এক বছরের কম বয়সি শিশুরা বেশি ঝুঁকিতে আছে। জ্বর থাকলেই ডেঙ্গু পরীক্ষা করা উচিত; এটাকে ভাইরাল জ্বর বলে অবহেলা করা উচিত নয়। জ্বর চলে গেলে ভয় শুরু হয়, তখন আপনাকে আরো সতর্ক হতে হবে। ছোট শিশুদের ডেঙ্গুর চিকিৎসা করা কঠিন কারণ তাদের রক্তচাপ সঠিকভাবে মাপা যায় না।

 

তিনি বলেন, শিশুদের দেহে ফ্লুইড ম্যানেজমেন্টও চ্যালেঞ্জিং। শিশুরা তাদের নিজেদের সমস্যা নিয়ে কথা বলতে পারে না এবং যেকোনো সময় শকে চলে যেতে পারে। এজন্য আপনাকে শিশুদের ব্যাপারে আরো সতর্ক থাকতে হবে।

 

বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের ডেঙ্গু সেলের মেডিকেল অফিসার ডা. সোহেল পারভেজ বলেন, হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশু রোগীর হার বাড়ছে। সব বয়সি শিশু রোগী পাচ্ছি আমরা। এক দুই দিনের জ্বরে যেসব রোগী আসছে তারা যদি মুখে খেতে পারে, তাহলে তাদের আমরা চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দিচ্ছি। কিন্তু দিনে তিন বারের বেশি বমি, মাথাব্যথা, ডায়রিয়া, পেটে ব্যথা নিয়ে আসা রোগীদের আমরা ভর্তি করছি।

 

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ব বিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের সাবেক ডিন, ইমেরিটাস অধ্যাপক এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. এবিএম আবদুল্লাহ বলেন, শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হওয়ার কারণে তাদের ঝুঁকি বেশি। শিশুরা দিনের বেলা ঘুমায়, আর এডিস মশাও দিনের বেলায় কামড়ায়। তাই তাদের জন্য মশারি ব্যবহার করা আবশ্যক। বিশেষ করে ডেঙ্গু মৌসুমে তাদের জন্য ফুল-লেংথ ট্রাউজার এবং ফুল-হাতা কাপড় পরানো উচিত।

 

বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটে (ঢাকা শিশু হাসপাতাল)। প্রতিষ্ঠানের সহযোগী অধ্যাপক ও উপপরিচালক প্রবীর কুমার সরকার বলেন, ‘এক্সপ্যানডেড ডেঙ্গু সিনড্রম’ নিয়ে শিশুরা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে; অর্থাৎ একাধিক অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত বা আক্রান্ত হওয়ার পর শিশুদের হাসপাতালে আনা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, হাসপাতালে আনার আগে এসব শিশুর হয় আগে ঠিক চিকিৎসা হয়নি, অথবা কোনো চিকিৎসাই হয়নি।

 

এদিকে, বুধবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের ইনচার্জ মো. জাহিদুল ইসলামের সই করা ডেঙ্গুবিষয়ক প্রতিবেদনে জানানো হয়, চলতি মাসের ৩০ দিনে ডেঙ্গুতে মৃত্যু ৩২৫ জনে পৌঁছে গেছে। ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২ হাজার ৩৬৭ জন। চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৭৬ জনে। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৮ হাজার ৪৪৬ জন।

 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, গত মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে বুধবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ২ হাজার ৩৬৭ জনের মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা ৮৯৯ জন ও ঢাকার বাইরের ১ হাজার ৪৬৮ জন। ২৪ ঘণ্টায় মৃত ৭ জনের মধ্যে ৫ জন ঢাকা সিটির এবং ২ জন ঢাকার বাইরের বাসিন্দা বলে জানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

 

চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৩০ আগস্ট পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ১ লাখ ২১ হাজার ৫০০ জন। তাদের মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা ৫৭ হাজার ১৪৬ জন। ঢাকার বাইরের হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হয়েছেন ৬৪ হাজার ৩৫৪ জন। একই সময়ে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন ১ লাখ ১২ হাজার ৪৭৮ জন। তাদের মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা ৫২ হাজার ৮১৬ জন এবং ঢাকার বাইরের ৫৯ হাজার ৬৬২ জন।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version