-->
শিরোনাম

শীতে কেমন হবে ত্বকের যত্ন

অর্পিতা জাহান
 শীতে কেমন হবে ত্বকের যত্ন
ছবি-সংগৃহীত

অর্পিতা জাহান: সারাবছরই আমাদের ত্বকের যত্ন নিতে হয়, কিন্তু শীতের মৌসুমে ত্বকের প্রতি একটু বিশেষ যত্নশীল হতে হয়। কারণ বছরের অন্যান্য মৌসুমের তূলনায় শীতে বাতাসের আদ্রতা কম হয় এবং বাতাসে ধূলাবালির পরিমান বেড়ে যায়। যা সহজেই ত্বককে ক্ষতিগ্রস্ত করে। তাই আমাদের ত্বক শুষ্ক হয়ে ফেটে যায়। রুক্ষ হয়ে পড়ে স্বভাবিকভাবে উজ্জলতা হারায় ত্বক। হয়ে পড়ে মলিন। এজন্য এসময় সাধারন যত্ন নিলে চলে না। নিতে হয় বাড়তি যত্ন। আর তা যদি হয় ঘরোয়া উপায়ে, তাহলে খুব সহজেই সমাধান পাওয়া যায়। চলুন জেনে নেই ত্বকের যত্নে কার্যকরী প্রাকৃতিক ঘরোয়া কিছু উপাদানের ব্যবহার।

 

১. নারিকেল তেল

মানব সভ্যতার বহু বছর ধরে ত্বকের যত্ন, সৌন্দর্য রক্ষা, চর্চা ও বৃদ্ধিকরণে মানুষ নির্ভর করে আসছে প্রকৃতির উপর । সৌন্দর্য চর্চায় অন্যতম একটি উপাদান হচ্ছে নারিকেল। এটি প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার ও টোনার হিসেবে ত্বকে দারুণ কাজ করে এবং ত্বকের আদ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করে । নারিকেল তেল শুধু ত্বকের জন্য নয়; চুলের যত্নেও সমান তালে ব্যবহার হয়। এছাড়াও বয়স ধরে রাখতে ও বয়সের ছাপ কমাতে এর ভূমিকা ব্যাপক।

 

২. অলিভ অয়েল

মেয়েদের রূপ চর্চায় অলিভ অয়েলের ব্যবহার বহূল প্রচলিত। আলিভ অয়েলে থাকে প্রচুর পরিমানে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, এসেনশিয়াল ফ্যাটি এসিড, ভিটামিন ই, সি থাকে। যা ত্বকে পুষ্টি যোগাতে সহায়ক। এই তেল ত্বকে আলতো করে ম্যাসাজ করলে ত্বকের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায়। ফলে ত্বকে পুষ্টি যোগায় ভিতর থেকে এবং ত্বকের আদ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করে। যার কারণে ত্বক হয়ে যায় আরও নরম, কোমল, উজ্জল ও প্রাণবন্ত। এছাড়া ও বয়স ৩০ পেরুলেই ত্বকে দেখা মেলে বয়সের ছাপ। আর শীতের মৌসুমে এটি আরও দৃশ্যমান হয়। তাই এইসময় যত্নটা একটু বেশী নিতে হয়। অলিভ অয়েলের ব্যবহারে অনেকটাই সমাধান মেলে । অলিভ অয়েলের আরও অনেক ব্যবহার আছে। যেমন মেকআপের উপাদান তুলতে, শরীরের অবাঞ্চিত লোম তুলতে এবং স্ট্রেচ মার্ক দূরে ব্যাপক ভূমিকা রাখে।

 

৩. অ্যালোভেরা

বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে ত্বকে দেখা দেয় বয়সের দাগছোপ, বলিরেখাসহ নানা সমস্যা। বয়স জনিত ত্বকের এই সমস্যা সমধানে এবং বয়স ধরে রাখতে এ্যালোভেরার ব্যবহার ব্যাপক। অ্যালোভেরা এমন একটি উপাদান, যার জেলে রয়েছে প্রচুর পরিমানে অ্যািন্টঅক্সিডেন্ট, যা প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার হিসেবে ত্বকে কাজ করে । এটি নিয়মিত ব্যবহারে ত্বকের গভীরে পুষ্টি পৌছায় আর ত্বক পর্যাপ্ত পুষ্টি পেলে ভালো থাকে। এছাড়া এটি সানবার্ন থেকে ত্বককে রক্ষা করতে, ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে এবং ব্রন থেকে পরিত্রাণে খুবই কার্যকরী।

 

৪. হলুদ

আপনার ত্বকের দাগ দূর করতে এক চামচ হলুদের গুড়ার কোন বিকল্প নেই, আর সঙ্গে যদি এক চামচ বেসন ও লেবুর রস মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরী করে দাগের স্থানে লাগিয়ে ২০-৩০ মিনিট অপেক্ষা করে আলতো ভাবে ম্যাসাজ করে, ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে নেন, সঙ্গে সঙ্গেই দেখবেন ম্যাজিকের মত কাজ করেছে এই মিশ্রনটি । দাগ তো দূর করবেই পাশাপাশি একই সঙ্গে ত্বককে করবে টানটান ও উজ্জ্বল।

 

৫. চালের গুড়া

কর্মক্ষেত্র শেষে বাসায় ফিরে আয়নার দিকে তাকালেই আমাদের মন খারাপ হয়ে যায়। বাহিরের ধূলাবালি, ঘাম, তেল সবকিছু মিলে মুখের অবস্থা তামাটে রং ধারন করে। এই অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে চালের গুড়া সহজ সমাধান। এটি ত্বকের যত্নে অনেক কার্যকরী উপাদান। এতে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেরটি ফেরুলিক অ্যাসিড এবং ফাইটিক অ্যাসিড। যার কারণে এই উপাদানটি ফেইস প্যাক বানিয়ে নিয়মিত ব্যবহারে শুধু যে ত্বকের প্রতিরক্ষাই বাড়িয়ে তোলে না বরং ত্বক উজ্জ্বল ও পরিষ্কার করতে এবং ত্বকের কোলাজেন বাড়াতে সমান ভাবে কাজ করে। চালের গুড়ার সঙ্গে বিভিন্ন উপাদান মিলিয়ে ব্যবহারে দ্রুত ফলাফল মিলবে । যেমন: এক চামচ চালের গুড়া, আধা চামচ মূলতনি মাটি ও সামান্য টমেটোর রস সব উপাদান একসাথে মিশিয়ে মুখে গলা ও হাতে লাগিয়ে শুখানো পর্যন্ত অপেক্ষা করে আলতো করে ধুয়ে ফেলতে হবে, মুহূর্তেই দেখবেন ত্বকের অতিরিক্ত তেল ময়লা পরিস্কার করে ত্বক উজ্জ¦ল করবে ভীষনরকম। সপ্তাহে ৩-৪ দিন ব্যবহারে আপনার ত্বককে করবে আরও উজ্জল ও মসৃন ।

 

৬. পাকা পেপে

আমাদের প্রত্যেকের বাসায় এমন কিছু উপকরণ থাকে। যা নিয়মিত ব্যবহারে ত্বক হবে উজ্জ¦ল মসৃন ও প্রানবনÍ। তার মধ্যে পাকা পেপে অন্যতম। পাকা পেপের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরমিানে আ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ফ্লেবানয়েড, লুটেইন, লাইকোপেন, ভিটামিন এ ও সি। যা ত্বকের পুষ্টি যোগাতে, ত্বকের তৈলাক্ত ভাব দূর করতে, তারুণ্যতা ধরে রাখতে, বলিরেখা দূর করতে যথেষ্ট সক্ষম। তাই রুপচর্চায় সহজেই আপনি ভরসা করতে পারেন পাকা পেপের উপর। বানিয়ে নিতে পারেন চটজলদি ফেইস প্যাক। যেমন, পরিমান মত পাকা পেপে ও পাকা কলা একসাথে পেস্ট বানিয়ে নিন। এতে সামান্য পরিমান লেবুর রস যোগ করে মিশ্রনটি মুখ গলা ও হাতে লাগিয়ে ২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। এতে ত্বকের যাবতীয় সমস্যা দূর হবে।

 

৭. কাঁচা দুধ

দুধের উপকারিতা সম্পর্কে কম বেশী আমাদের সবার জানা । দুধ যে শুধু শরীরের বিভিন্ন ঘাটতি পূরন করে তা না, ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা তাৎক্ষনিৎ দূর করতে সমান ভাবে কার্যকরী। তাই ত্বকের যত্নে বহু বছর থেকে অভিজাত রমনীরা কাঁচা দুধের ব্যবহার করে আসছে । চলুন কাঁচা দুধের ফেইস প্যাক তৈরীর কয়েকটি প্রনালী জানা যাক-

 

১ চামুচ মুলতানি মাটি, ১ চামচ বেসন ও সামান্য কাঁচা দুধ ভালো করে মিশিয়ে মিশ্রনটি মুখে লাগিয়ে ১৫-২০ মিনিট অপেক্ষা করে হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটি নিয়মিত ব্যবহারে ত্বককে প্রাকৃতিক ভাবে ময়েশ্চাইজ করবে ও হারানো জেল্লা ফিরিয়ে নিয়ে আসবে।

 

কাঁচা দুধের এতবেশী গুন, যা একাই ত্বকের অনেক কাজ করে। তাই আপনার কাছে যদি অন্যান্য উপকরন মিশিয়ে প্যাক তৈরী করা ঝামেলা মনে হয়, তাহলে সামান্য কাঁচা দুধ মুখে লাগিয়ে ১৫-২০ মিনিট অপেক্ষা করে পানি দিয়ে ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে । যদি প্রতিদিন এই কাজ টি করতে পারেন, তাহলে ধীরে ধীরে আপনার ত্বক এত উজ্জল হবে, আয়নার সামনে গেলে আপনি অবাক হতে বাধ্য।

 

ভোরের আকাশ/আসা

মন্তব্য

Beta version