চিকিৎসক ছাড়া অন্য কোনো স্বাস্থ্য কর্মীদের সাদা অ্যাপ্রোন পরা ও নামের আগে ডাক্তার পদবি লেখার কোনো অধিকার নেই বলে জানিয়েছেন আন্দোলনরত চিকিৎসকরা।
তাদের দাবি, বিএমডিসি থেকে ম্যাটস, ডিএমএফ ও টুএমপি পাস করা এবং মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্টদের ডিপ্লোমা মেডিকেল প্র্যাক্টিশনার হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে সরকার। যে কারণে এটি আমাদের নিজেদের অস্তিত্ব ও অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে পরিণত হয়েছে। এখান থেকে আমাদের ফিরে যাওয়ার কোনো উপায় নেই।
বুধবার (২১ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সাধারণ চিকিৎসক ও চিকিৎসা শিক্ষার্থী সমাজের ব্যানারে আয়োজিত ‘লংমার্চ টু বিএমডিসি’ শীর্ষক কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে চিকিৎসকরা এসব কথা বলেন।সমাবেশে বক্তারা বলেন, বিএমডিসি ম্যাটস, ডিএমএফ, এলএমএফ পাস করা মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্টদের 'ডিপ্লোমা মেডিকেল প্র্যাকটিশনার' হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করছি এবং নিজেদের অস্তিত্ব ও অধিকারের লড়াই হিসেবে আজকের এই কর্মসূচিতে নেমেছি। আমরা হুঁশিয়ার করে বলে দিতে চাই, চিকিৎসক ছাড়া অন্য স্বাস্থ্য কর্মীদের সাদা অ্যাপ্রোন পরা ও নামের আগে ডাক্তার পদবি লেখার কোনো অধিকার নেই৷
সমাবেশে সাপ্পোরো মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. নুরুল আমীন বলেন, ‘চিকিৎসক শুধু পরিচয় দেওয়ার বিষয় না, এটা যোগ্যতার বিষয়। যাদের এ যোগ্যতা নেই তারা চিকিৎসক হিসাবে পরিচয় দিতেই পারে না। টেকনোলজিস্টরা সহায়ক। তারা কোনোক্রমেই চিকিৎসক নন।
চিকিৎসকরা আরও বলেন, অনেক মেডিকেল কলেজ চিকিৎসকদের বেতন ভাতা দিচ্ছে না। এসব মেডিকেলকে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে৷ প্রয়োজনে তাদের বন্ধ করে দিতে হবে। এছাড়াও ডিপ্লোমাদের জন্য আলাদা কাউন্সিল করতে হবে৷
এ সময় বিএমডিসি অ্যাক্ট পরিবর্তনের দাবি জানান তারা। সে পর্যন্ত বিএমডিসিকে নিষ্ক্রিয় রাখারও আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
এদিকে লংমার্চ টু বিএমডিসি কর্মসূচিতে বিএমডিসি কর্তৃক মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্টদের ডিপ্লোমা মেডিকেল প্র্যাক্টিশনার হিসেবে বিবেচনা করার প্রতিবাদে ৯ দফা দাবিও তুলে ধরেছেন চিকিৎসকরা।
দাবিগুলো হলো,
১. এমবিবিএস ও বিডিএস ছাড়া ডাক্তার পদবি ব্যবহার করা যাবে না।
২. স্বাস্থ্যসেবা উন্নত করার লক্ষ্যে ডাক্তার ব্যতীত স্বাস্থ্যসেবা বন্ধ করতে হবে।
৩. ইউনিয়ন পর্যায়ে ডাক্তার দ্বারা স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে হবে।
৪. প্রেসক্রিপশন ছাড়া কোনো ফার্মেসি ওষুধ বিক্রি করতে পারবে না।
৫. বেসরকারি চিকিৎসকদের বেতন কাঠামো নিশ্চিত করতে হবে (মেডিকেল অফিসার, সিনিয়র মেডিকেল অফিসার, সহকারী রেজিস্ট্রার, রেজিস্ট্রার)।
৬. অভিজ্ঞতার আলোকে পদোন্নতি নিশ্চিত করতে হবে।
৭. বিএমডিসি ব্যতীত ভুল চিকিৎসা বলার অধিকার কারোর নেই।
৮. বেসরকারি হাসপাতালে ডাক্তার দ্বারা চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে হবে।
৯. স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন/নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে।
এর আগে বুধবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে সাধারণ চিকিৎসক ও চিকিৎসা শিক্ষার্থী সমাজের ব্যানারে চিকিৎসকরা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জড়ো হতে থাকেন। এ সময় তারা বিএমডিসি কর্মকর্তাদের অপসারণের দাবি জানান।
কর্মসূচি প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ডক্টরস ফাউন্ডেশনের আহ্বায়ক ডা. মো. শাহেদ রফি পাভেল বলেন, আমরা শুরুতে বিএমডিসিতে জড়ো হওয়ার কর্মসূচি দিয়েছিলাম। কিন্তু সেখানে ডিপ্লোমাধারীরাও পাল্টা কর্মসূচি দেয়। আমরা দেখতে পাচ্ছি এই কর্মসূচিকে ঘিরে অনেকেই আছেন ঘোলা পানিতে মাছ ধরার চেষ্টা করছেন। দেশের সাধারণ চিকিৎসক ও ছাত্র ছাত্রীদের এই মুভমেন্টকে আওয়ামী লীগের ষড়যন্ত্র বানাতে চান কেউ কেউ। আমরা চাই চিকিৎসক ও ছাত্র সমাজ তাদের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে এমন কোন কালিমা না পাক যা ভবিষ্যতের পথগুলো বন্ধ করে দেয়।
তিনি বলেন, আশা করব এই সরকার , বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দসহ সকলেই দেশের সাধারণ চিকিৎসক ও ছাত্রদের দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করবেন। আমরা সকলের সহযোগিতা চাই।
ভোরের আকাশ/মি
মন্তব্য