বছরের শেষ দিকে এসে ভয়ঙ্কর রূপ দেখাচ্ছে ডেঙ্গু। গত এক সপ্তাহ ধরে বেড়েছে মৃত্যুর হার। সবশেষ ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে; যা চলতি বছর একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যু। একই সময়ে হাসপাতালে রেকর্ড ১ হাজার ২২১ জন ডেঙ্গুরোগী ভর্তি হয়েছেন। গত শনিবার ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা ছিল ৭।
এডিস মশার বিস্তার রোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হলে আগামী মাসে ডেঙ্গু আরও ভয়াবহ রূপ নেবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
গায়ে প্রচণ্ড জ্বর আর শরীর ব্যথা নিয়ে প্রতিদিনই রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন ডেঙ্গু রোগী। এতে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে রোগীর চাপ বাড়ছে। চিকিৎসকরা জানান, এবার নতুন কিছু উপসর্গ দেখা দিচ্ছে। অনেকের প্লাটিলেট দ্রুত নেমে যাচ্ছে। দ্রুত সময়ে হাসপাতালে না আসায় পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করেছে। প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলা জরুরি।
রোগীদের অভিযোগ, রাজধানীর অনেক এলাকাতেই মশা নিধনের ওষুধ ঠিক মতো দেওয়া হচ্ছে না। স্প্রে করার কিছুক্ষণ না যেতেই শুরু হয় মশার উপদ্রপ। ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মীর খায়রুল আলম জানান, ডেঙ্গু বিষয়ে আগে যেসব পরিকল্পনা করা ছিল, সেই অনুযায়ীই কাজ করছেন তারা। কাউন্সিলর না থাকার কারণে একটু সমস্যা হচ্ছে বলে স্বীকার করেছেন তিনি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরিস্থিতি শিগগিরই নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে আসছে অক্টোবরে আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করবে ডেঙ্গুর প্রকোপ। বিশেষ করে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে বেশ কিছু জেলা উচ্চঝুঁকিতে আছে। বিশেষ করে কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের কারণে সৃষ্ট ঘনবসতি ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ চোখ রাঙাচ্ছে কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের দিকে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক ড. আতিকুর রহমান জানান, ডেঙ্গু প্রতিরোধে মশা নিরোধক ওষুধ ব্যবহারের পাশাপাশি সিটি করপোরেশনে পক্ষ থেকে সব জায়গায় প্রচার-প্রচারণা চালাতে হবে। একইসঙ্গে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে।
কীটতত্ত্ববিদ ড. মনজুর চৌধুরী বলছেন, মশানিধনে শুধু জেল-জরিমানা আর জনসচেনতনা বাড়িয়ে কাজ হবে না। সঠিকভাবে জরিপ চালিয়ে দক্ষ জনবল দিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।
এদিকে, গতকাল রোববার স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, এ বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ২৯ হাজার ৭৮৬ জন। শনিবার সকাল ৮টা থেকে রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত হাসপাতালে নতুন ভর্তিদের মধ্যে বরিশাল বিভাগে ৭৪ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ১৮৩ জন, ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ২৬৭, ঢাকা উত্তর সিটিতে ২০৬, ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ২২৮, খুলনা বিভাগে ১৩৪ জন রয়েছেন। এছাড়া রাজশাহী বিভাগে ৫৩ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ৪৮ জন এবং রংপুর বিভাগে ২৮ নতুন রোগী ভর্তি হয়েছেন।
গত বছর দেশে ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন ডেঙ্গুরোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেন। এর মধ্যে ঢাকায় ১ লাখ ১০ হাজার ৮ জন এবং ঢাকার বাইরে চিকিৎসা নেন ২ লাখ ১১ হাজার ১৭১ জন। মারা যান ১ হাজার ৭০৫ জন।
ভোরের আকাশ/ সু
মন্তব্য