-->

চিকিৎসক সংকটে সেবা নেমেছে অর্ধেকে

ভোরের আকাশ প্রতিবেদক
চিকিৎসক সংকটে সেবা নেমেছে অর্ধেকে

সরকারি পর্যায়ে হৃদরোগীদের জন্য দেশের একমাত্র বিশেষায়িত চিকিৎসা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে চিকিৎসা সংকটে সেবা নেমেছে অর্ধেকে। গত তিন মাস ধরে তিন কোটি টাকার বেশি বেশ কিছু যন্ত্রাংশ অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকার পরিবর্তনের পর হাসপাতালের ইউনিট অর্ধেক কমানো হয়েছে। আগের তুলনায় এনজিওগ্রাম ও এনজিও প্লাস্টি নেমে এসেছে অর্ধেকে। এমনকি অধ্যাপক ও সহযোগী অধ্যাপকদের একটি বড় অংশকে দায়িত্ব পালন থেকে বিরত রাখা হয়েছে। ফলে হাসপাতালের স্বাভাবিক পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। তবে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক বলছেন, ইনস্টিটিউটের সামগ্রিক পরিস্থিতি আগের তুলনায় ভালো হয়েছে।

আগস্টের ছাত্র জনতা অভ্যুত্থানের পর থেকে ইনস্টিটিউটের চিকিৎসা ও শিক্ষা কার্যক্রম অনেকটা শিথিল হয়ে পড়েছে। দুই দফা হাসপাতাল প্রশাসনে বদল হওয়ায় সামগ্রিক কার্যক্রমে পরিবর্তন এসেছে। ফলে চিকিৎসা পেতে রোগীরা বেসরকারি হাসপাতালের দিকে ঝুঁকছে।

জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে বর্তমানে সাতটি ক্যাথল্যাব থাকলেও পুরোপুরি কার্যকর মাত্র তিনটি। একটি আংশিকভাবে চলছে। বাকী ৩ টি পুরোপুরি নষ্ট। কিন্তু রোগীর হিসেবে কমপক্ষে ১০টি ক্যাথল্যাব থাকা প্রয়োজন। কারণ প্রাপ্তবয়স্ক রোগীর এনজিওগ্রাম ও এনজিও প্লাস্টি ছাড়াও শিশু হৃদরোগীদের চিকিৎসায় ক্যাথল্যাব প্রয়োজন হয়। এছাড়া পেসমেকার স্থাপন ও ভাসকুলার (রক্তনালির) ব্লকের চিকিৎসায়ও ক্যাথল্যাব প্রয়োজন। ক্যাথল্যাব নষ্ট থাকায় শিশু রোগীদের চিকিৎসা ব্যাহত হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা জানান, গত ৫ আগস্টের আগে তিনটি ক্যাথল্যাবে দৈনিক কমপক্ষে ৬০টি এনজিওগ্রাম হতো। সেই হিসেবে মাসে (সাপ্তাহিক ছুটির দিন বাদে) প্রায় এক হাজার ৫০০ এনজিওগ্রাম হতো। বর্তমানে সেই সংখ্যা ৯০০ থেকে এক হাজারে নেমে এসেছে। একইভাবে বিগত সময়ে প্রতি মাসে গড়ে প্রায় পাঁচ শতাধিক এনজিওপ্লাস্টি ও স্ট্যান্টিং হতো। বর্তমানে এটি নেমে এসেছে ২০০ থেকে ২৫০ টিতে। এক হাজার ৪০০ শয্যার এই হাসপাতালে আগে ইউনিট ছিল ২১টি। এর মধ্যে কার্ডিওলজি বিভাগের রোগী ছিল দুই তৃতীয়াংশের বেশি। বর্তমানে ইউনিট কমিয়ে ১১ টি করা হয়েছে। সারাদেশে থেকে রোগীরা হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসার জন্য আসে কিন্তু সেবা পাচ্ছেন না। ফলে চিকিৎসা জন্য তাদের যেতে হচ্ছে বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে। চলতি বছরের ২৯ আগস্ট তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত পরিচালক অধ্যাপক ডা. মহসিন হোসেন চিকিৎসকরে একটি গ্রুপের নির্শেনায় আগের ২১টি ইউনিট থেকে ১০ ইউনিট বাতিল করেন। এই বিষয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় বা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কোন অনুমোদন তিনি নেননি। পরে স্থায়ী পরিচালক নিয়োগ হলেও ইউনিটে কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি।সারা দেশের সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালের ৮৮টি ক্যাথল্যাব থেকে জটিল রোগীর জাতীয় হৃরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে এনজিও প্লাস্টি ও স্ট্যান্টিং এর জন্য রেফার্ড হয়। এই জটিল কার্যক্রম ৫ আগস্টের পর অনেকটা বন্ধ। তিন কোটি টাকার বেশি দামের আইবিইউএস, ওসিটি, এফএফআরআই রোটব্লাটর যন্ত্রাংশগুলো গত ৩ মাস ধরে অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে। এভাবে পড়ে থাকলে শিগগিরিই সেগুলো নষ্ট বা বিকল হয়ে যাবে। সিনিয়র ও অভিজ্ঞ অধ্যাপকদের ইউনিট বাতিল করায় এগুলো ব্যবহার করার কেউ নেই।

জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে এমডি, এমএস, ডিপ্লোমা, এফসিপিএস কোর্স চালু আছে। কিন্তু ১০ জন অভিজ্ঞ অধ্যাপক ও সহযোগী অধ্যাপককে শিক্ষা কার্যক্রম থেকে বিরত রাখায় শিক্ষা কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। ইনস্টিটিউটের কয়েকজন চিকিৎসক জানান, জাতীয় হৃদরোগ হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের কার্ডিওলজি বিভাগের ছয়জন অধ্যাপক ও চারজন সহযোগী অধ্যাপকের ইউনিট বাতিল করা হয়েছে। এ ছাড়া বাতিল করা হয়েছে কার্ডিয়াক সার্জারি বিভাগের আটটি ইউনিটও। ইনস্টিটিউটের ছয়জন পূর্ণাঙ্গ অধ্যাপক এবং চারজন সহযোগী অধ্যাপকের ইউনিট বাতিল করে সেখানে ১৪ জন সহযোগী অধ্যাপককে দায়িত্ব দেওয়া হয়। এ ছাড়া একজন অধ্যাপকের দায়িত্বে চারটি ইউনিট রাখা হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন অধ্যাপক জানান, এতে হৃদরোগীদের জন্য দেশের একমাত্র বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠানটিতে সিনিয়র ও অভিজ্ঞ চিকিৎসকের শূন্যতা সৃষ্টি হবে। ফলে স্বাস্থ্যসেবা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ডা. আব্দুল ওয়াদুদ চৌধুরী বলেন, আগে প্রয়োজন ছাড়াই অতিরিক্ত ইউনিট করা হয়েছিল। সেগুলো কমানো হয়েছে। এই হাসপাতালে ১০টির বেশি ইউনিটের প্রয়োজন নেই। যেসব অধ্যাপক ও সহযোগী অধ্যাপককে শিক্ষা কার্যক্রম থেকে বিরত রাখা হয়েছে তারা যোগ্য নন। তাদের জায়গায় যোগ্যদের পদায়নের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সামগ্রিকভাবে প্রতিষ্ঠান আগের চেয়ে ভালো চলছে।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের প্রাক্তন পরিচালক ও কার্ডিয়াকি সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ডা. শাফি আল মজুমদার বলেন, হাসপাতালের স্বাভাবিক কার্যক্রম কিছুটা ব্যাহত হয়েছে বলে শুনেছি। তবে সরেজমিন না দেখে মন্তব্য করা ঠিক হবে না।

 

ভোরের আকাশ/রন

মন্তব্য

Beta version