-->
৪৮ হাজার কোটি টাকা

বছরে বৈদেশিক স্বাস্থ্যসেবা ব্যয়

ভোরের আকাশ প্রতিবেদক
বছরে বৈদেশিক স্বাস্থ্যসেবা ব্যয়

ঢাকা চেম্বার অডিটোরিয়ামে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) বলছেন, স্বাস্থ্যসেবার অপ্রতুলতার কারণে বিদেশে গিয়ে স্বাস্থ্যসেবা খাতে বাংলাদেশিদের ব্যয় হয় প্রায় ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বা প্রায় ৪৮ হাজার কোটি টাকা। গত শনিবার ঢাকা চেম্বার অডিটোরিয়ামে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘স্বাস্থ্য খাতে বিদেশমুখিতা কমাতে দেশীয় সক্ষমতা বৃদ্ধি’ বিষয়ক সেমিনারে এ তথ্য উঠে আসে।

প্রবন্ধে আরো বলা হয়, বর্তমানে বাংলাদেশে ৫ হাজার ৪৬১ বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক রয়েছে; যার মধ্যে ১ হাজার ৮১০টি ঢাকা বিভাগে অবস্থিত। পাশাপাশি ৩৬টি স্পেশালাইজড হাসপাতালের মধ্যে ১৯টি ঢাকাতে অবস্থিত হওয়ায় দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসবাসকারী লোকজন উন্নত স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এবং প্রতিনিয়ত ঢাকার ওপর চাপ বাড়ছে। উন্নত স্বাস্থ্য সেবার প্রতিবন্ধকতা হিসেবে অবকাঠামোর স্বল্পতা, দক্ষ ডাক্তার, নার্স ও টেকনিশিয়ানের অভাব, সরকারি হাসপাতালে সেবা প্রাপ্তিতে দীর্ঘসূত্রিতা, উন্নত সেবার জন্য ইন্স্যুরেন্স কাভারেজের অনুপস্থিতি প্রভৃতি অন্যতম কারণ।

অনুষ্ঠানে মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডিসিসিআই ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি মালিক তালহা ইসমাইল বারী। মূলপ্রবন্ধে তিনি বলেন, স্বাস্থ্য খাতে বাংলাদেশের মাথাপিছু ব্যয় ১১০ মার্কিন ডলার, যেখানে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশে ব্যয় হয় ৪০১ মার্কিন ডলার। তিনি উল্লেখ করেন, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ ছিল ৩০ হাজার ১২৫ কোটি টাকা; যা মোট বাজেটের মাত্র ৩.৭৮ শতাংশ। তিনি জানান, প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবার অপ্রতুলতার কারণে দেশের একটি বৃহৎ জনগোষ্ঠী বিশ্বের অন্যান্য দেশের সেবা নিয়ে থাকে এবং ২০১২ সালে বিদেশে স্বাস্থ্যসেবা নেওয়ায় বাংলাদেশিদের ব্যয়ের পরিমাণ ছিল প্রায় ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

স্বাগত বক্তব্যে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি আশরাফ আহমেদ বলেন, ডব্লিউটিও-এর তথ্য মতে বাংলাদেশের ৪৯ শতাংশ মানুষই মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা পায় না, সেই সঙ্গে স্থানীয় সেবায় প্রয়োজনীয় আন্তর্জাতিক মান না থাকায় বিদেশে স্বাস্থ্যসেবা নেওয়ার প্রবণতা প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এখাতের উন্নয়নে বিশেষ করে উন্নত অবকাঠামো ও আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিতকরণ, বাজেট সহায়তা বাড়ানো, আন্তর্জাতিক হাসপাতালগুলোর চেইন কার্যক্রম বাংলাদেশে চালুকরণ, বিদেশি ডাক্তার ও নার্সদের বাংলাদেশে কার্যক্রম পরিচালনার রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া সহজীকরণসহ স্বাস্থ্য খাতের সব ধরনের লাইসেন্স প্রাপ্তি ও নবায়নের প্রক্রিয়াগত জটিলতা নিরসন এবং ডিজিটাল ব্যবস্থা প্রবর্তন, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বেসরকারি খাতে হাসপাতাল কার্যক্রম চালু উৎসাহিতকরণে কর অব্যাহতি সুবিধা দেওয়ার ওপর জোরারোপ করেন ডিসিসিআই সভাপতি।

ডিসিসিসিআইয়ের সভাপতি আশরাফ আহমেদ বলেন, ক্রমবর্ধমান হারে মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো সম্প্রতি বিদেশে চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করতে যাচ্ছে। যদিও অনেক চিকিৎসা স্থানীয়ভাবেও পাওয়া যায়। আমাদের মনে রাখতে হবে, গ্রাহক সন্তুষ্টি কেবল চিকিৎসা থেকে আসে না; বরং পুরো হাসপাতালের ইকোসিস্টেম যথাÑ নার্স, প্রশাসন, টেকনোলজিস সবাই এর সঙ্গে সম্পৃক্ত। মানের ক্ষেত্রে ইতিবাচক ব্র্যান্ডিংয়ের জন্য, বিদেশি ডাক্তার, নার্স ও টেকনোলজিস দেশে আসার প্রক্রিয়া আরো সহজতর করতে হবে।

সেমিনারের অনুষ্ঠানের নির্ধারিত আলোচনায় বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক এ কে খান আজাদ বলেন, পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা স্বল্পতা, চিকিৎসা ব্যবস্থায় আস্থার স্বল্পতা, সর্বোপরি কমফোর্টের অভাবে অসংখ্য লোক দেশের বাইরে চিকিৎসাসেবা নিচ্ছে। এগুলো যথাযথভাবে চিহ্নিতকরণ ও সমাধানের মাধ্যমে রোগীদের বিদেশমুখিতা কমানো সম্ভব। দেশে পরিচালিত ল্যাবরেটরিগুলোর মান উন্নয়ন করা দরকার।

তিনি উল্লেখ করেন, যেহেতু প্রযুক্তির ক্ষেত্রে চিকিৎসা বিজ্ঞান একটি সর্বদা পরিবর্তনশীল প্রক্রিয়া। এমতাবস্থায় বর্তমানে আমরা যা প্রত্যক্ষ করছি আগামী ২৫ বছর পর এক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন আসবে। তাই সেরা প্রযুক্তিগত অগ্রগতি গ্রহণ করার জন্য আমাদের একটি সঠিক পাঠ্যক্রম থাকা জরুরি।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক এবং বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিসিয়ান্স অ্যান্ড সার্জন্স-এর সেক্রেটারি ডা. আবুল বাসার মো. জামাল বলেন, বাংলাদেশ এখন ওষুধ উৎপাদনকারী দেশ এবং আমরা বিভিন্ন দেশে রপ্তানিও করি, কিন্তু চিকিৎসা যন্ত্র উৎপাদনে আমরা এখনো পিছিয়ে আছি, এমতাবস্থায় এ খাতে আরো ভালো করতে হলে দক্ষ জনশক্তি ও প্রশিক্ষণের ওপর জোর দিতে হবে। তিনি জানান, বাংলাদেশে ১ লাখ ৩৪ হাজার চিকিৎসক রয়েছে এবং এর মধ্যে মাত্র ৩৩ হাজার সরকারি চিকিৎসক। তবে এটা সন্তোষজনক যে এখানে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ১০ হাজারের বেশি বিদেশি মেডিকেল শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছে।

 

ভোরের আকাশ/রন

মন্তব্য

Beta version