ভারতের মতো খরচে থাইল্যান্ডে চিকিৎসা সম্ভব?

ভোরের আকাশ ডেস্ক
ভারতের মতো খরচে থাইল্যান্ডে চিকিৎসা সম্ভব?

গত চার মাস ধরেই বন্ধ রয়েছে ভারতের ভিসা। মেডিকেল ভিসা দেওয়ার কথা বলা হলেও বাস্তব চিত্র হচ্ছে পূর্বের রোগীর ফলো-আপ ছাড়া করা যাচ্ছে না ভিসার আবেদন। এই অবস্থায়, অনেকেই ভাবছেন দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশ থাইল্যান্ডে চিকিৎসার কথা। তবে থাইল্যান্ডে চিকিৎসার খরচ কি হাতের নাগালে? সম্প্রতি থাইল্যান্ডে চিকিৎসা নিয়েছেন ঢাকার বাসিন্দা ইমরুল। তিনি বলেন, থাইল্যান্ডে চিকিৎসা যেমন ব্যয়বহুল তেমনি মানের দিক থেকেও অনেক উন্নত। আসলে এটা বাংলাদেশ বা ভারতের সঙ্গে তুলনা করা যায় না। এখানে কম খরচ বলে কোনো শব্দ নেই। কিছু খরচের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশে বায়োপসি করাতে খরচ হয় ৩৬ হাজার থেকে ৪০ হাজার টাকা। এখানে সেটা ২ লাখ ৭০ হাজার টাকা। বাংলাদেশে সিটি স্ক্যান, এমআরআই হোল এবডোমেন খরচ পড়ে ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা। এখানে সেটা প্রায় দেড় লাখ টাকা। ব্যাংককের সব হাসপাতালে প্রেশার মাপা, ওজন মাপা, উচ্চতা মাপার জন্যেও ৮০০ থেকে ১৫০০ টাকা খরচ হয় প্রত্যেকবার ডাক্তার দেখানোর আগে। উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থা এবং হসপিটালিটির কারণে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে রোগীরা আসেন ব্যাংককে চিকিৎসা করাতে। এখানে সবচেয়ে বেশি রোগী আসেন মধ্যপ্রাচ্যের আরব দেশগুলো থেকে। এরপর কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম, চীন, ভারত এবং বাংলাদেশের রোগীরা। এছাড়াও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পশ্চিমা রোগীতো রয়েছেই।

ব্যাংককের হাসপাতালগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের সর্বাধিক প্রচারিত নাম বামরুনগ্রাদ ও ব্যাংকক হাসপাতাল। নব্বই দশকের গোড়ার দিক থেকেই ঢাকা ও চট্টগ্রামে ব্যাপক নাম ছড়িয়ে পড়ে বামরুনগ্রাদ হাসপাতালের। পাঁচ তারকা মানের এই হাসপাতালের খরচও আকাশছোয়া। এখানে শুধু রক্তের হিমোগ্লোবিন আর ক্রিয়েটিন পরীক্ষা করতেই খরচ করতে হয় ৩৫ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা। তবে সেখানে রয়েছে বাংলাদেশি দোভাষী এবং সেরা মানের সেবা।

সম্প্রতি বাংলাদেশ থেকে একজন ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে আনা হয় বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে। রোগীর স্বজনরা জানান, প্রথম দিনেই ভর্তির সময় এক কোটি টাকার টিকা ডিপোজিট রাখতে হয়েছে। রোগীর ফাইনাল স্টেজ। এরপর তিন দিন পরেই আবার এক কোটি টাকা দেওয়ার জন্য বলা হয়।

থাইল্যান্ডে হাসপাতালগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় গ্রুপটির নাম বিডিএমএস। যার প্রধান হাসপাতালটি হচ্ছে ব্যাংকক হাসপাতাল। এছাড়াও রয়েছে প্রিঙ্ক হাসপাতাল গ্রুপ, থেপটারিন গ্রুপ ইত্যাদি। এসব হাসপাতালের খরচ বামরুনগ্রাদ বা মেডপার্ক হাসপাতালের মতো না হলেও ভারত বা বাংলাদেশের সঙ্গে তুলনা করার মতো নয়। যেমন এখানে যে কোনো হাসপাতালে হেলথ চেক আপের জন্য কমপক্ষে ৩০ হাজার টাকা খরচ করতে হবে। বাংলাদেশে একটি ভুল ধারণা হচ্ছে ব্যাংককের সেন্ট লুইস হাসপাতালটি চ্যারিটি হাসপাতাল! মূলত এখানে কোনো চ্যারিটি হসপিটাল নেই। সেন্ট লুইস একটি পূর্ণাঙ্গ বেসরকারি হাসপাতাল এবং খরচও পাওলো হাসপাতাল, ভিমুট, পিয়াথাইয়ের মতো হাসপাতালগুলোর কাছাকাছি। বরং সেখানে কোনো আন্তর্জাতিক সেবা না থাকায় দোভাষীর সুবিধা পাওয়া যায় না এবং পূর্বে থেকে এপয়েনমেন্টও নেওয়া যায় না।

থাইল্যান্ডের সরকারি হাসপাতালগুলো খুবই উচ্চ মানসম্পন্ন। এখানে সরকারি হাসপাতালেও চিকিৎসা করানো সম্ভব। তবে সেক্ষেত্রে হাতে পর্যাপ্ত সময় নিয়ে আসতে হবে। শুধু ডাক্তার দেখাতে হলেও কমপক্ষে ১০ থেকে ১৫ দিন হাতে সময় নিয়ে আসতে হবে। কারণ এখানে বহিঃবিভাগে রোগী দেখাতে হলে প্রথমে সরাসরি গিয়ে এপয়েনমেন্ট নিতে হয়। যেটার সময় পাওয়া যায় ৭ থেকে ১৫ দিন পর। কারণ জরুরি বিভাগ ছাড়া কাউকে এখানে তাৎক্ষণিক চিকিৎসা দেওয়া হয় না। আর সার্জারির মতো চিকিৎসার খরচ কিন্তু বাংলাদেশের বেসরকারি হাসপাতালের চেয়েও বেশি। আর দীর্ঘদিন থাকা খাওয়ার খরচতো রয়েছেই।

 

ভোরের আকাশ/রন

মন্তব্য