সরকারি হাসপাতালে যন্ত্রপাতি সরবরাহকারী একটি প্রতিষ্ঠান মালিককে হয়রানির অভিযোগ পাওয়া গেছে। সঠিকভাবে দরপত্রে অংশগ্রহণের মাধ্যমে সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে কার্যাদেশ পেয়ে যন্ত্রপাতি সরবরাহ করার পরও তাকে মামলা দিয়ে বছরের পর বছর ধরে হয়রানি করা হচ্ছে। স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতিবাজ ঠিকাদার চক্র ও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট অনৈতিক এ কাজের সঙ্গে জড়িত। হয়রানি থেকে পরিত্রাণ পেতে তিনি সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।
কাগজপত্র ঘেঁটে দেখা যায়, সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে PACS মেশিনসহ বিভিন্ন প্রকার যন্ত্রপাতি ক্রয়ে ২০১৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক ডা. শেখ শাহজাহান আলী দরপত্র বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন। সর্বনিম্ন দরদাতাকে কার্যাদেশ প্রদান করা হয়। চুক্তি ও কার্যাদেশের স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী, ২০১৮ সালের ৪ সেপ্টেম্বর PACS মেশিন ও অন্যান্য যন্ত্রপাতি হাসপাতালে সরবরাহ করা হয়। নিয়ম অনুযায়ী ক্রয়কৃত যন্ত্রপাতি সার্ভে কমিটিকে সরবরাহকৃত যন্ত্রপাতি সার্ভে কাজ সম্পন্ন করার জন্য আদেশ প্রদান করেন কর্তৃপক্ষ।
সার্ভে কমিটির সভাপতি ছিলেন সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজের বর্তমান অধ্যক্ষ ডা. মো. রুহল কুদ্দুছ। তিনি ওই সময়ে হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ছিলেন। কমিটিতে অন্যদের মধ্যে ছিলেন তৎকালীন সহকারী অধ্যাপক ডা. নারায়ণ প্রসাদ সানলাল ও সহকারী অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ শামসুর রহমান। তিন সদস্যের ওই কমিটি চুক্তি ও কার্যাদেশের স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী PACS মেশিনটি বুঝে নিয়ে সার্ভে কমিটি কার্যক্রম সম্পন্ন করে হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট স্টোর কিপারকে স্টক লেজারে যথাযথ লিপিবদ্ধ করার নির্দেশ দেন। স্টোর কিপার কার্যাদেশের স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী মেশিনটি বুঝে নিয়ে স্টক লেজারে লিপিবদ্ধ করেন।
সার্ভে কমিটির সার্ভে রিপোর্টে বলা হয়, ‘অত্র ভাউচারে বর্ণিত সমুদয় মালামাল সঠিক ও ভালো অবস্থায় পাওয়া গেল এবং সংশ্লিষ্ট স্টোর কিপারকে স্টোক লেজারে যথাযথ লিপিবদ্ধ করার জন্য বলা হইল।’
স্টোর কিপার কর্তৃক সার্ভে কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী PACS মেশিনটি বুঝে নিয়ে স্টোক লেজারে লিপিবদ্ধ করেন। মজুদ বহি’র ৫০নং পাতায় PACS মেশিনটি বুঝে নিয়ে লিপিবদ্ধ করা আছে এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনায় স্থাপনের জন্য সরবরাহ করা হয়েছে বলে ওই সময়ের হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. আহমেদ আল-মারুফ স্বাক্ষর করেছেন।
পরবর্তীতে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধানে হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগের চিকিৎসক ও সংশ্লিষ্ট ব্যবহারকারীদেরকে PACS মেশিনটি পরিচালনার জন্য দেশি-বিদেশি দক্ষ প্রকৌশলীর মাধ্যমে প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করে তোলা হয়। প্রশিক্ষণে সন্তুষ্ট হয়ে হাসপাতালের ওই সময়ের প্রধান ডা. রফিকুল ইসলাম, ব্যবহারকারী ডা. রুহুল কুদ্দুস ও ডা. সুতপা চ্যাটার্জি কাস্টমার এক্সপেন্টস সনদ প্রদান করেন।
অথচ সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে PACS মেশিন ক্রয়ে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মামলার অভিযোগে বলা হয়, ‘অসৎ উদ্দেশ্যে একে অপরের সহায়তায় অপরাধমূলক বিশ্বাস ভঙ্গ ও অপরাধমূলক অসদাচরণকরতঃ ক্ষমতার অপব্যবহারপূর্বক প্রতারণা ও জাল জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে Picture Archiving And Comunication System (PACS) নামক সফটওয়্যারসহ সংশ্লিষ্ট মেশিনারিজ সরবরাহ না করে ভুয়া বিল দাখিল করে উক্ত বিলের ভিত্তিতে ৬,০৬,০০,০৯৯/- উত্তোলনপূর্বক আত্মসাৎ করার অভিযোগে দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের আওতায় মামলা করা হয়েছে।’
দুর্নীতি দমন কমিশন প্রধান কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. সামছুল আলম এক চিঠিতে ২০১৯ সালের ২ মে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যন্ত্রপাতি কেনাকাটায় অনিয়ম তদন্তে ৫ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেন। ওই কমিটিকে ২০১৯ সালের ১৫ মে’র মধ্যে হাসপাতালে উপস্থিত হয়ে পরিদর্শন করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।
তদন্ত কর্মকর্তার চাহিদার প্রেক্ষিতে পরিচালক সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে PACS মেশিনটি ক্রয় প্রক্রিয়া ও ইন্সটলেশনসহ সকল আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে ৩ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির প্রত্যায়নপত্র এবং মেশিনটি সচল অবস্থায় হাসপাতালের ৩টি বিভাগে সংযোগ স্থাপনের সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় প্রধানদের প্রত্যায়নপত্রসহ রোগীদের চিকিৎসা সেবায় ব্যবহৃত হচ্ছে উল্লেখ করে জবাবসহ চিঠি দেওয়া হয়।
PACS মেশিনটি সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. কাজী আরিফ আহমেদ, রেডিওলজি এ্যান্ড ইমেজিং বিভাগীয় প্রধান ডা. সুতপা চ্যাটার্জি, অর্থো সার্জারি ওটি বিভাগীয় প্রধান ডা. প্রবীর কুমার দাশ, ইএনটি বিভাগীয় প্রধান ডা. নারায়ন প্রসাদ সান্যাল, জেনারেল সার্জারি ওটি বিভাগীয় প্রধান ডা. আতিকুল ইসলাম এবং ইউরোলজি বিভাগীয় প্রধান ডা. মো. মোজাম্মেল হক গ্রহণপূর্বক সকল বিভাগে সংযোগ স্থাপন এবং রোগীদের সেবায় ব্যবহৃত হচ্ছে মর্মে প্রত্যয়নপত্র প্রদান করেছেন।
সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও অন্যান্য হাসপাতালে PACS মেশিন সরবরাহ:
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাহের উদ্দিন সরকার বলেন, আমার প্রতিষ্ঠান কর্তৃক সরবরাহকৃত সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে PSP Corporation, Japan ব্র্যান্ডের PACS মেশিনটি ৬ কোটি ৬ লাখ ৯৯ টাকায় National Compititive Bid (NCB) টেন্ডার পদ্ধতিতে ক্রয় করা হয়েছে। অথচ MNCH and Health System Improvement Project ৭টি বিভাগে JICA Loan Agreement no. BD-P83 এর মাধ্যমে ৭টি একই PACS মেশিন ক্রয় প্রক্রিয়াধীন, ক্রমিক নং-১০, যা International Compititive Bid (ICB) টেন্ডার পদ্ধতিতে ক্রয় করা হবে। উক্ত ৭টি PACS মেশিনের মোট প্রাক্কলিত মূল্য ৭৯ কোটি ৩৮ লাখ টাকা হিসাবে প্রতিটির মূল্য ১১ কোটি ৩৪ লাখ টাকা করে পড়বে। আর National Compititive Bid (NCB) টেন্ডার পদ্ধতিতে ক্রয় করা হলে প্রতিটির মূল্য হবে ১৭ কোটির টাকার ওপরে। এ থেকে প্রমাণ হয়, সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আমার প্রতিষ্ঠান অনেক কম মূল্যে PACS মেশিনটি সরবরাহ করেছে। অর্থাৎ, আমাদের প্রতিষ্ঠান কর্তৃক PACS মেশিন সরবরাহে সরকারি কোনো অর্থ আত্মসাৎ করা হয়নি। সরেজমিনে যে কেউ সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গেলে দেখতে পাবে যে, PACS মেশিনটি নিরবচ্ছিন্নভাবে অদ্যাবধি রোগীদের সেবায় ব্যবহৃত হচ্ছে।
PACS মেশিনটি সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এখনও চালু আছে। এছাড়া জাইকার অর্থায়নে সাত বিভাগীয় মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল প্রকল্পের আওতায় ডায়াগনস্টিক ইমেজিং সিস্টেমের আধুনিকায়নে সাতটি PACS মেশিন আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে ক্রয়ের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। সাতটি PACS মেশিনের মোট প্রাক্কলিত মূল্য ৭৯ কোটি ৩৮ লাখ টাকা হিসেবে প্রতিটির মূল্য ১১ কোটি ৩৪ লাখ টাকা পড়বে। ন্যাশনাল কমপিটিটিভ বিড (এনসিবি) টেন্ডার পদ্ধতিতে ক্রয় করা হলে প্রতিটির মূল্য হবে ১৭ কোটি টাকার ওপরে।
জাহের সরকার আরও বলেন, ‘আমি PACS মেশিন সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল ছাড়াও শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভারসহ দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে সরবরাহ করেছি। এসব মেশিন সবখানেই সচল রয়েছে। এরপরও দুদক আমার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মিথ্যা, বানোয়াট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে হয়রানিমূলক মামলা দায়ের করছে। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, তদন্তকালে দুদক প্রধান কার্যালয় ঢাকা হতে তদন্তকারী কর্মকর্তাগণ অনেকবার বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বিষয়ে আমাকে ও আমার প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য অধিযাচন পত্র প্রেরণ করেছেন। দুদক কর্তৃক সরেজমিনে তদন্তকালে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও আমার প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে চুক্তিপত্র ও কার্যাদেশের স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী কোনো যন্ত্রপাতি পাননি বা আমার প্রতিষ্ঠান হতে সরবরাহ করা হয়নি তা কেউ কখনও লিখিতভাবে এমনকি মৌখিকভাবেও অবহিত করেনি। অথচ দুর্নীতি দমন কমিশন, প্রধান কার্যালয়, ঢাকা হতে গত ৩১.১০.২০১৯ইং তারিখে এজাহারে PACS নামক মেশিন সরবরাহ না করেই ভুয়া বিল দাখিল করে ভ্যাট ট্যাক্স বাদে সরকারের ৬ কোটি ৬ লাখ ৯৯ টাকা প্রতারণা ও জাল-জালিয়াতিমূলকভাবে উত্তালন করে পরস্পরের যোগসাজশে আত্মসাৎ করার অভিযোগ এনে এ মামলাটি দায়ের করা হয়েছে। আমি সুবিচার চাই।’
শেখ রাসেল জাতীয় গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে PACS মেশিনের কার্যকারীতা ও গুণাগুণ বিষয়ে বিভাগীয় প্রধানের মতামত:
PACS মেশিনের ব্যবহারকারী রাজধানীর মহাখালীর শেখ রাসেল জাতীয় গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের রেডিওলোজি বিভাগের প্রধান ডা. মো. তারিকুল ইসলাম ভোরের আকাশকে বলেন, ‘আমরা যে PACS মেশিন ব্যবহার করছি তা খুবই ভালোমানের। রোগীর রোগ নির্ণয়ের আধুনিক পদ্ধতির জন্য এই মেশিন ব্যবহৃত হচ্ছে। এই মেশিনের সাহায্যে একটি কক্ষে বসেই কয়েকজন চিকিৎসক রোগীর রোগ নির্ণয় করতে পারেন। যেসব হাসপাতালে এই মেশিন রয়েছে, সেসব হাসপাতালে রোগীকে বিভিন্ন রোগ নির্ণয়ের জন্য আলাদা আলাদা কক্ষে আলাদা আলাদা চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হয় না।’
তিনি আরও বলেন, ‘রাজধানীর নিউরো সায়েন্স হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ব্যবহৃত হচ্ছে। সেসব হাসপাতালের তুলনায় আমাদের হাসপাতালে ব্যবহৃত মেশিনটি ভালোভাবেই চলমান রয়েছে। রোগ নির্ণয়ের জন্য বিশ্বে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন যন্ত্রপাতির উন্নত মডেল তৈরি হচ্ছে। যেমন মোবাইল ফোনের নতুন নতুন ভার্সনের মতো চিকিৎসা ক্ষেত্রেও যন্ত্রপাতির প্রতিনিয়নত নতুন নতুন ভার্সন আসছে। এ কারণে ৫-৬ বছর আগে যে ভার্সন বা মডেল পাওয়া যেতো এখন তার চেয়ে আরও উন্নত ভার্সন বাজারে আসছে। এ কারণে ৫-৬ বছর আগে সরবরাহ করা মডেলের সঙ্গে এখনকার মডেলের তুলনা করা যুক্তিসঙ্গত হবে না।’
একই হাসপাতালের একই বিভাগের সাবেক প্রধান অধ্যাপক ডা. হাসিনা বেগম ভোরের আকাশকে বলেন, PACS সাধারণত রেডিওলজিস্টদের দ্বারা সিটি স্ক্যান, এমআরআই, এক্স-রে মেশিন, আল্ট্রা সাউন্ডের রিপোর্টগুলোর থ্রি-ডি আকারে ছবি নিয়ে সেটা কমিউনিকেশনের মাধ্যমে সকল রিপোর্ট রিপোর্টিং রুমে চলে আসে। এরপর অনেকগুলো আধুনিক কম্পিউটারে অনেকজন ডাক্তার রোগীর রোগ নির্ণয়ের জন্য রিপোর্ট একসাথে বসে দেখতে পারেন এবং নির্দিষ্ট করে যেসব জায়গায় রোগীর সমস্যা সেসব জায়গাগুলো স্টল করে থ্রি-ডি আকারে খুব ভালো করে রোগের ডেনসিটি ও মেজারমেন্ট নিতে পারেন। এটি একটি রোগীর নির্ভুল রোগ নির্ণয়ের অত্যাধুনিক পদ্ধতি।
মিঠু ও জাহের উদ্দিন সরকারের বন্ধুত্ব:
দৈনিক সমকালে স্বাস্থ্য খাতের আলোচিত ও সমালোচিত ঠিকাদার মিঠুর বন্ধু জাহের উদ্দিন সরকার বলে উল্লেখ করা হয়েছে-এটি সঠিক নয় দাবি করে জাহের উদ্দিন সরকার বলেন, ‘আমি সব সময় সততা এবং ন্যায়ের সাথে কাজ করেছি। কখনো অন্যায় কাজকে প্রশ্রয় দেইনি। আমি ওই সমালোচিত ঠিকাদারের সাথে কখনো কোথাও কোনো কাজ করিনি বা তার সাথে আমার সখ্যতা ছিল না ও নেই। আমি স্বাস্থ্য সেক্টরে ভারী মেডিকেল যন্ত্রপাতি সরবরাহকারী হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা অনেকে আমাকে ব্যক্তিগতভাবে চিনেন এবং জানেন। মিঠুর সাথে আমার কাজের সখ্যতা ছিল এ ধরনের কোনো প্রমাণ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কিংবা কোনো স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানের কোনো ব্যক্তি কর্তৃক অদ্যাবধি উত্থাপিত হয়নি। বরং রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতি ও লুটপাটের মহাচক্র আমাকে ব্যক্তিগতভাবে অনেক হয়রানি ও ব্যবসায়িকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। একটি মহল যারা আমার ব্যবসায়িক প্রতিযোগীতায় টিকতে না পেরে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে মিথ্যা অভিযোগের ভিত্তিতে আমার প্রতিষ্ঠান বেঙ্গল সায়েন্টিফিককে কালো তালিকাভুক্ত করেছিল। কিন্তু মহামান্য হাইকোর্ট ওই কালো তালিকাভুক্তির সিদ্ধান্ত বেআইনি গণ্য করে স্থগিত করেছেন। ফলে এখন আর বেঙ্গল সায়েন্টিফিককে কালো তালিকাভুক্ত বলার আইনগত কোনো সুযোগ নেই।’
করোনাকালে কাজের অনিয়ম বিষয়ে বক্তব্য:
করোনাকালে কাজের অনিয়মের বিষয়ে সমকালের প্রতিবেদনের জবাবে জাহের সরকার বলেন, ‘করোনাকালে স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানসমূহে আমি কোনো কাজই করিনি। ওই সময় আমার ব্যবসায়িক প্রতিপক্ষ ও স্বাস্থ্য খাতের দুষ্টচক্র এবং স্বাস্থ্যসেবা খাতের কিছু দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা/ কর্মচারী মিলে অবৈধ পন্থায় করোনা রোগীর সরঞ্জামাদী ক্রয় দেখিয়ে কেবলমাত্র অর্থ আত্মসাত ও লুটপাটের কর্ম পরিকল্পনা তৈরী করে ক্রয় প্রক্রিয়ার কার্যক্রম শুরু করে। আমি সমন্বিত দুষ্টচক্রের এসব অপতৎপরতা ও কর্মকান্ড বুঝতে পেরে বিবেকের তাড়নায় জাতীয় স্বার্থে এ ধরনের লুটপাটের কার্যক্রম হতে নিজেকে সম্পূর্ণরূপে গুটিয়ে নিয়ে করোনাকালীন সময়ে কোনো সরবরাহ কাজে সম্পৃক্ত হইনি। আমি সে সময় শুধু স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলোতে পূর্বের সরবরাহকৃত মেডিকেল ভারী যন্ত্রপাতির আফটার সেলস সার্ভিস প্রদান করেছিলাম। যাতে করোনাকালীন সময়ে রোগীর চিকিৎসাসেবা ব্যাহত না হয়। অপরদিকে ঐ সময়ে দুষ্ট ঠিকাদারচক্র কয়েকগুণ বেশি দামে নিম্নমানের মেডিকেল সরঞ্জামাদি সরবরাহ করে এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে সরঞ্জামাদি সরবরাহ না করেই সরকারি অর্থ লোপাট করেছে।’
‘স্বাস্থ্যসেবা খাতে মেডিকেল সরঞ্জামাদি সরবরাহে আমি যেসব প্রতিষ্ঠানের সাথে কাজ করেছি সে প্রতিষ্ঠানের রোগীর সেবার মান যেন ভালো হয়, রোগীরা যেন সঠিক চিকিৎসা সেবা পায় তা নিশ্চিতে উন্নত দেশের ব্র্যান্ডের মেডিকেল যন্ত্রপাতি সরবরাহ করেছি। রোগীর স্বার্থকে সর্বাগ্রে প্রাধান্য দিয়েছি। কখনো দুর্নীতি করিনি, আমার বিবেক দুর্নীতি করতে দেয়নি। আমি যে অবস্থায় যেখানেই থাকি দুর্নীতি ও অনিয়মকে রোধ করার চেষ্টা করি। উল্লেখ করা যেতে পারে একই প্রতিষ্ঠানে আমার প্রতিষ্ঠান কর্তৃক সরবরাহকৃত মেডিকেল যন্ত্রপাতি সচল অবস্থায় ব্যবহৃত হচ্ছে; অপরদিকে একই প্রতিষ্ঠানে অন্যান্য ঠিকাদার কর্তৃক একই শ্রেণীর সরবরাহকৃত যন্ত্রপাতি অকেজো ও অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। প্রায় প্রতিষ্ঠানে তাদের সরবরাহকৃত যন্ত্রপাতি চালুর পরিবর্তে বাক্সবন্দি অবস্থায় থাকার দৃষ্টান্তও রয়েছে উল্লেখ করে একাধিক গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।’
স্বচ্ছতার সাথে সরবরাহ কাজ করে আসছেন উল্লেখ করে জাহের উদ্দীন আরও বলেন, বিভিন্ন স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে বাক্সবন্ধি বা অচল অবস্থায় অনেক দামি মেশিন পড়ে থাকার অভিযোগের প্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং স্বাস্থ্যবিষয়ক সংসদীয় কমিটিতে নিয়মিত সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় মেডিকেল যন্ত্রপাতি সরবরাহ নিয়ে পত্র-পত্রিকার সংবাদ এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে আসা অভিযোগ, আফটার সেলস সার্ভিস, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম, সরবরাহকৃত মেশিন ওয়ারেন্টি সময়ের পূর্বে অকেজো হয়ে যাওয়া, অকেজো হওয়ার কারণে চিঠি পাওয়াসহ অনেক বিষয় নিয়ে পর্যালোচনা এবং মূল্যায়ন করা হয়। অভিযোগের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। কয়েক যুগ ধরে স্বাস্থ্য খাতে সরকারি হাসপাতালে ভারী যন্ত্রপাতি সরবরাহ করে আসছি। কিন্তু আজ পর্যন্ত আমার প্রতিষ্ঠান কর্তৃক সরবরাহকৃত কোনো মেশিনের সমস্যার বিষয় নিয়ে কোনো অভিযোগ উত্থাপিত হয়নি। ভবিষ্যতেও কোনো প্রতিষ্ঠান অভিযোগ উত্থাপন করতে পারবে না বলে আমি আশা করি। আমি দৃঢ়তার সাথে সংশ্লিষ্ট সকলকে আহ্বান জানাচ্ছি যে, আমার সরবরাহ করা যন্ত্রপাতি ৬৪ জেলা হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসমূহে এবং উক্ত প্রতিষ্ঠানসমূহে অন্যান্য ঠিকাদারদের সরবরাহ করা যন্ত্রপাতি পাশাপাশি কিংবা একই কক্ষে রাখা আছে, সেগুলো পরিদর্শন করলে স্বাস্থ্য বিভাগ কর্তৃপক্ষ যন্ত্রপাতির তুলনামূলক গুণগত মান ও সচল অবস্থায় ব্যবহার সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাবেন।’
ভোরের আকাশ/মি/ সু
মন্তব্য