সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর সহিংসতা রোধে প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিতে সংসদে ৬০টি সংরক্ষিত আসন ও সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠাসহ দুই দফা দাবি জানিয়েছে জাতীয় হিন্দু মহাজোট। বৃহস্পতিবার (৩০ ডিসেম্বর) ঢাকা রিপোর্টারস ইউনিটিতে আয়োজিত এক সংবাদ সন্মেলনে এ দাবি তুলে ধরেন সংগঠনের মহাসচিব এ্যাডভোকেট গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক।
সংগঠনটি বলছে, বর্তমান সরকারের মেয়াদে ২০১৫ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত হিন্দু নির্যাতন বেড়েছে কয়েকগুণ। লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ২০১৮ সালে ৯৬জন হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছে। ২০১৯ সালে তা বেড়ে হয়েছে ১০৮ জন, ২০২০ সালে হত্যা হয়েছে ১৪৯ জন ২০২১ সালে ১৫২ জন।
২০১৮ সালে বসতবাড়ি থেকে উচ্ছেদ হয়েছিল ২১৭টি পরিবার, ২০১৯ সালে ৪৩৪টি পরিবার, ২০২০ সালে ২১২৫টি পরিবার, ২০২১ সালে ৯ হাজার ৮০৯ পরিবার। ২০১৮ সালে দেশ ত্যাগের হুমকী ছিল ২২৩ টি, ২০১৯ সালে ৬৪১টি পরিবার, ২০২০ সালে ৮৯৩টি, ২০২১ সালে ১৩ হাজার ৪৪৮টি পরিবার। ২০১৮ সালে দেশত্যাগে বাধ্য করা হয়েছিলো ৬৫টি পরিবারকে, ২০১৯ সালে ৩৭৯টি পরিবারকে, ২০২০ সালে ৬২৯টি, ২০২১ সালে দেশ ত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে ৯ হাজার ২৬১টি পরিবারকে।
শুধু চলতি বছরে সংখ্যালঘু হিন্দু স¤প্রদায়ের ১৫২ জন মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। হত্যার হুমকি দেয়া হয়েছে ১২৫ জনকে, জখম ও আহত করা হয় ১ হাজার ৬৪ জনকে। নিখোঁজ হয়েছে ১৪২ জন, চাঁদাবাজি হয়েছে তিন কোটি ২ লক্ষ ৮ হাজার টাকা। বসত বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট হয়েছে ২ হাজার ৯৪ টি। মন্দির লুট হয়েছে ১ হাজার ১৬২ টি। ভূমি দখল হয়েছে ৬ হাজার ১৭৯ একর ৮১ শতক। অগ্নিসংযোগ হয়ছে ৪২৯ টি। মোট ঘটনা ঘটেছে ১ হাজার ৯১৪ টি।
এই পরিসংখ্যান তুলে ধরে গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক বলেন, হিন্দু স¤প্রদায় দীর্ঘদিন যাবৎ সংখ্যালঘু নির্যাতন ও নিপিড়ন বন্ধে এবং প্রতিনিধিত্ব সুনিশ্চিত করতে জাতীয় সংসদে ৬০টি সংরক্ষিত আসন ও পৃথক নির্বাচন ব্যবস্থা পুণঃপ্রতিষ্ঠা এবং একটি সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠার দাবি করেছে। দাবি আদায়ে হিন্দু স¤প্রদায় সারা দেশে ব্যপকভাবে আন্দোলন সংগ্রাম করেছে। কিন্তু বেদনার বিষয় হলো সরকার দাবি দুটির প্রতি কর্ণপাত করেনি। যে কারণে দিন দিন হিন্দু নির্যাতন বেড়েই চলেছে।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীন ৫০ বছর পার করলেও এদেশের হিন্দু সম্প্রদায় কখনোই স্বাধীনতার স্বাদ পায়নি। স্বাধীনতার পরপরই ঐতিহ্যবাহী রমনা কালি মন্দির ধ্বংস করা হয়েছে। যদিও তা এখন ভারতীয় অর্থে পূনঃ নির্মাণ হয়েছে। ১৯৭৪ সালে শত্রু সম্পত্তি অর্ডিন্যান্সকে পরিত্যক্ত সম্পত্তি আইন নামে পাশ করে এদেশের ২৬ লক্ষ একর সম্পত্তি দখল করা হয়েছে। এর পর সংবিধান কেটে ছেটে সাম্প্রদায়ীকিকরণ করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন হিন্দু মহাজোটের সভাপতি অ্যাড. বিধান বিহারী গোস্বামী, নির্বাহী সভাপতি অ্যাড. দীনবন্ধু রায়, প্রদীপ কুমার পাল, বিজয় কৃষ্ণ ভট্টাচার্য, অভয় কুমার রায়, প্রদীপ সরকার, লাকি বাছার, শ্যামল কান্তি নাগ, নকুল চন্দ্র মন্ডল, নরেশ চন্দ্র হালদার, প্রদীপ চন্দ্র চন্দ, কল্যাণ মন্ডল প্রমুখ।
ও/এফ-৩০/১২