logo
আপডেট : ৪ জানুয়ারি, ২০২২ ২০:২১
রাজনৈতিক দলে ৩৩ শতাংশ নারী নেতৃত্ব ঐচ্ছিক করার দাবি খেলাফতের
নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজনৈতিক দলে ৩৩ শতাংশ নারী নেতৃত্ব ঐচ্ছিক করার দাবি খেলাফতের

বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে অংশ নেন বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের নেতারা। (ছবি: বাসস)

রাজনৈতিক দলগুলোর সব কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারী সদস্য রাখার প্রস্তাবকে বাধ্যতামূলক নয়, ঐচ্ছিক করার প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন। নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য রাষ্ট্রপতির ডাকা সংলাপে অংশ নিয়ে এ প্রস্তাব দিয়েছেন তারা। সোমবার (৩ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে এ সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। 

রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদীন গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, রাজনৈতিক দলটির প্রতিনিধিরা নির্বাচন কমিশন গঠনে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনার উদ্যোগ নেওয়ার জন্য রাষ্ট্রপতিকে কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানান।

সংলাপে বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের নেতারা নির্বাচন কমিশনের অভিজ্ঞতা কাজে লাগানোর লক্ষ্যে ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে নবীন-প্রবীণের সমন্বয়ে নির্বাচন কমিশন গঠনের প্রস্তাব দেন।

তারা দাবি করেন, ধর্মবিদ্বেষী, চিহ্নিত দুর্নীতিবাজ, কালো টাকার মালিক, অবৈধ সম্পদের অধিকারী, সন্ত্রাসী, সাজাপ্রাপ্ত অপরাধী, ঋণখেলাপির সঙ্গে জড়িত পরিবারগুলোকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের অযোগ্য ঘোষণা করতে হবে।

জবাবে নেতৃবৃন্দকে বঙ্গভবনে স্বাগত জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন কমিশন যাতে গঠন করা যায় সেজন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সুচিন্তিত মতামত খুবই গুরুত্বপূর্ণ। রাষ্ট্রপ্রধান বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ । তাই সকল রাজনৈতিক ব্যক্তি ও দলকে জনকল্যাণকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে।

রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের সচিবগণ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী রাজনৈতিক দলগুলোর সব কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারী সদস্য  রাখতে হবে। তবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ কোনো দলই এই শর্ত এখনও পূরণ করতে পারেনি। ২০২০ সালের মধ্যে এই শর্ত পূরণ করার কথা থাকলেও দলগুলোর চাপের মুখে তা কয়েক বছর বাড়িয়েছে নির্বাচন কমিশন।

তত্ত্বাবধায়ক শাসনামলে নারী সংগঠনগুলোর দাবির মুখে ২০০৮ সালে প্রধান নির্বাচন কমিশনার শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে রাজনৈতিক দলগুলোর নিবন্ধনের শর্ত হিসেবে দলগুলোর সব কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারী সদস্য রাখার বিধান করে। এই নীতি বাস্তবায়নের জন্য দলগুলোকে ২০২০ সাল পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হয়। রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশের মাধ্যমে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে এই বিধিসহ বেশ কিছু সংশোধন আনা হয়। পরে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে এই অধ্যাদেশ সংসদে পাস করে।

তবে মূল রাজনীতিতে নারীদের ব্যাপক অংশগ্রহণ না থাকায় কোনো দলই এই শর্ত পূরণের বিষয়ে বিশেষ আগ্রহ দেখায়নি। গত ১৩ বছরে রাজনৈতিক দলগুলোর কেন্দ্রীয় কমিটি গঠনের জন্য অনুষ্ঠিত নির্বাচনগুলোতেও এই ইস্যুটি তেমন প্রাধ্যান্য পায়নি।

২০১৮ সালে দলে এক-তৃতীয়াংশ নারীর প্রতিনিধিত্ব রাখার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান জানতে চেয়ে ইসির পক্ষ থেকে চিঠি দেওয়া হয়। সেখানে ৪০টি দলের মধ্যে ১০টি দল কমিটিতে নারী নেতৃত্বের বিষয়ে অগ্রগতি সম্পর্কে কমিশনকে জানায়। এর মধ্যে একটিমাত্র দল গণফ্রন্ট তাদের নেতৃত্বে ৩৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধি আনতে পেরেছিল। ওই সময়ে প্রধান তিনটি দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের কমিটিতে ৮১ জনের ১৯ জন নারী। বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটিতে ১৫ শতাংশ এবং জাতীয় পার্টির কমিটিতে ২০ শতাংশ নারী রয়েছেন।

সে বছরে অনুষ্ঠেয় সাধারণ নির্বাচনের আগে এই সংখ্যা ৩৩ শতাংশের বদলে ২৫ শতাংশ করার দাবিও তুলেছিল কয়েকটি রাজনৈতিক দল। ২০২০ সালে প্রতিটি দলের কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারী সদস্য রাখার সম্ভাব্যতা নিয়ে নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিক দল, নারী নেত্রী, বুদ্ধিজীবীসহ বেশ কিছু মহলের সঙ্গে আলোচনা করে। পরে এই আলোচনার ভিত্তিতে বিধানটি বহাল রেখে এটি কার্যকরের সময় ২০৩০ সাল পর্যন্ত পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে।