দিনাজপুর জেলার সীমান্তবর্তী উপজেলা হাকিমপুর। উপজেলা সদর থেকে ১০ কিলোমিটার পূর্বদিকে তুলশীগঙ্গা নদীর কোলঘেঁষে গড়ে উঠেছে আলীহাট ইউনিয়ন। ইউনিয়নকে দুইভাবে বিভক্ত করেছে এই নদী। নদীর পূর্বপাশে বাঁশমুড়ি বাজার ও ডুগডুগী বাজার।
ইউনিয়নের বাসিন্দাদের পাশাপাশি ঘোড়াঘাট ও পাঁচবিবি উপজেলার কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দারাও তুলশীগঙ্গা নদী ব্যবহার করে পারাপার হয়ে থাকেন। প্রতিশ্রুতি মিলেছে বহুবার, কিন্তু দিন-মাস পেরিয়ে বছর যায় সেই প্রতিশ্রুতি পূরণ হয়নি। স্বাধীনতার ৫০ বছর পেরিয়ে গেলেও তুলশীগঙ্গা নদীর ওপর হয়নি সেই কাঙ্ক্ষিত সেতু।
তাই অনেকটা জনপ্রতিনিধিদের ওপর অভিমান করে ২০০ ফুট একটি কাঠের সেতু তৈরি করেন স্থানীয়রা। সেটি আবার চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এতে আরো বিপাকে পড়েছেন উপজেলার ছোট আলীহাট, বাঁশমুড়ি, কাশিয়াডাঙ্গাসহ আট গ্রামের মানুষ। প্রতিশ্রুতি নয়, এবার দ্রুত একটি সেতু বাস্তবায়নের দাবি স্থানীয়দের।
এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, স্বাধীনতার পর থেকেই তুলশীগঙ্গা নদী পারাপারে নৌকা ব্যবহার করেন বাঁশমুড়ি, ছোট আলীহাট ও পাঁচবিবিসহ ঘোড়াঘাট উপজেলার কয়েক হাজার বাসিন্দা। কিন্তু নৌকায় নদী পাড়ি দিতে গিয়ে বিভিন্ন সময় দুর্ঘটনা ঘটে। ফলে স্থানীয়রা সেই নদীতে একটি করে সেতু করে দেওয়ার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে আসছেন।
জনপ্রতিনিধিরা সেতু করে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন বারবার। কিন্তু স্বাধীনতার ৫০ বছরেও হয়নি সেই সেতু। সেতুটি হলে উপজেলার কয়েক হাজার মানুষের যাতায়াতের সুবিধা হবে।
মোতালেব উদ্দিন নামে এক বৃদ্ধ জানান, স্বাধীনতার পর থেকেই এই নদীর ওপর সেতু বানিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছেন তারা। নির্বাচন এলেই এমপি-চেয়ারম্যানরা বলেন, ‘সেতু করে দেবেন’। কিন্তু আজ পর্যন্ত সেতুর কোনো হদিস নেই। বাংলাদেশের প্রত্যন্ত এলাকায় রাস্তা-ঘাট ও সেতু হয়েছে, অথচ এখনো সেতুর অভাবে কাঠের সাঁকো দিয়ে নদী পার হতে হয় দুই পাড়ের মানুষকে। সেটাও আবার এখন নষ্ট হইছে।
আলীহাট ইউনিয়নের কাশিয়াডাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা মোস্তাফিজুর রহমান জানান, সেতু না থাকার কারণে মাথায় করে মালামাল নিয়ে সাঁকো পার হতে হয়। যদি সেতু থাকত তাহলে আর কোনো দুঃখ-কষ্ট থাকত না। দ্রুত একটি সেতু করে দেওয়ার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান তিনি।
স্থানীয় আহম্মেদ আলী জানান, স্বাধীনতার পর থেকেই এই নদীর ওপর সেতু হবে-হচ্ছে বলে আশায় বুক বেঁধে আছেন ইউনিয়নের লাখো মানুষ। সেতুর অভাবে মানুষজন অনেক কষ্ট করে নদী পার হয়। অনেক সময়ই দুর্ঘটনা ঘটে। মাঝে-মধ্যে যখন এই সাঁকো ভেঙে পড়ে তখন মানুষের দুর্ভোগ আরো বেড়ে যায়। মানুষের এই দুর্ভোগ লাঘবে অনতিবিলম্বে একটি সেতু করা প্রয়োজন।
আলীহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু সুফিয়ান বলেন, ‘ইউনিয়নের কয়েক গ্রামের মানুষের দুঃখ দূর করতে তুলশীগঙ্গা নদীর ওপর সেতু করার জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে আমরা বারবার যোগাযোগ করছি। আশা করছি, দ্রুত এটি বাস্তবায়ন করা হবে।’
হাকিমপুর উপজেলা চেয়ারম্যান হারুন উর রশিদ হারুন বলেন, ‘তুলশীগঙ্গা নদীর ওপর সেতু নির্মাণের জন্য বিভিন্ন সময় প্রতিশ্রুতি দেয়া হলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। টেন্ডারের প্রক্রিয়া চলছে। সেতুটি দৃষ্টিনন্দন একটি সেতু হবে। আশা করছি, দ্রুত সেতুটি নির্মাণ হবে।’
হাকিমপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ নুর এ আলম বলেন, ‘আলীহাট ইউনিয়নের মানুষের দুঃখ-কষ্টের কথা চিন্তা করে তুলশীগঙ্গা নদীর ওপরে একটি পাকা সেতু নির্মাণের জন্য এলজিইডি মাধ্যমে টেন্ডারের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত পাঠানো হয়েছে। দ্রুত সেতু নির্মাণকাজ শুরু হবে।’