সরকারের ইটভাটা নির্মাণে ইট প্রস্তুত নিয়ন্ত্রণ আইন থাকলেও তা মানা হচ্ছে না লালমনিরহাটে। অনিয়ন্ত্রিতভাবে কৃষি জমির ওপর গড়ে উঠেছে ইটভাটা। এসব ইটভটায় নেওয়া হচ্ছে ফসলি জমির উর্বর মাটি। এতে ফসল উৎপাদনে জমি হারাচ্ছে তার উর্বরতা সক্ষমতা। আর ইটভাটার মালিকরা প্রভাশালী হওয়ায় কৃষকরা তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে সাহস পাচ্ছেন না।
সরেজমিনে দেখা যায়, ভোর থেকে বিকাল পর্যন্ত ফসলি জমির উপরের উর্বর অংশ কেটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ইটভাটায় পোড়ানোর জন্য। এ রকম দৃশ্য মিলছে জেলার সবগুলো ইটভাটার আশপাশে।
শুধু শ্রমিক দিয়ে নয়। মাটি কাটার মেশিন ‘ভেকু’ দিয়ে জমির মাটি কেটে নেওয়া হচ্ছে। ইটভাটার মালিকরা কৃষকদের কৌশলে ফেলে জমি থেকে মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে। এসব মাটি ভাটায় পুড়িয়ে তৈরি করা হচ্ছে ইট। জমির উপরের অংশে আট ইঞ্চি গভীর পর্যন্ত অংশই উর্বর। এসব ফসলি জমির তিন থেকে পাঁচ ফুট পর্যন্ত গভীর করে কেটে নিয়ে যাওয়া হয়। ফলে ফসল উৎপাদনে ব্যর্থ হচ্ছে উর্বর অংশ হারানো এসব মাটি। যার কারণে মাত্রারিক্ত সার ব্যবহার করেও কৃষকরা পাচ্ছেন না ফসল। ১২ থেকে ১৫ বছর লেগে যায় এসব জমি স্বাভাবিক হতে।
বর্তমানে দেশে ইটভাটা নিয়ন্ত্রণে প্রচলিত আইন থাকলেও তার সঠিক প্রয়োগ না থাকায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন ইটভাটার মালিকরা।
স্থানীয় কৃষকরা বলেন, তারা ইটভাটার মালিকের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে। নামমাত্র দামে মাটি বিক্রি করতে হয়।
লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক শামিম আশরাফ বলেন, ‘মাটির উপরিভাগ থেকে আট ইঞ্চি গভীর পর্যন্ত উর্বর অংশ, যাকে মাটির প্রাণ বলা হয়। ইটভাটার মালিকরা ফসলি জমির উপরিভাগ থেকে পাঁচ ফুট পর্যন্ত মাটি কেটে নিয়ে যায়। ফলে এসব মাটি ১২ থেকে ১৫ বছরের জন্য প্রত্যাশিত ফসল উৎপাদনে অক্ষম হয়ে যায়। আইন অনুযায়ী ইটভাটা তৈরির আগে কৃষি বিভাগের অনুমতি নিতে হবে। কিন্তু বাস্তবে তা মানা হচ্ছে না।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক আবু জাফর বলেন, ‘লালমনিরহাটে কৃষি জমির ওপর অবৈধ ইটভাটা ও কৃষি জমি থেকে মাটির উর্বর অংশ কেটে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
রংপুর পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মেজবা-উল-আলম বলেন, লালমনিরহাট জেলার ৪৮টি ইটভাটার মধ্যে ২৭টি অবৈধভাবে পরিচালিত হচ্ছে। পরিবেশ অধিদপ্তর স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় অবৈধভাবে গড়ে ওঠা ইটভাটার বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছে। মালিকরা নিজে থেকে অবৈধ ইটভাটা অপসারণ না করলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।