অভাব-অনটনের সংসারে পরিবারের ছয় সদস্যের মুখে তিন বেলা আহার জোগাতে দিশেহারা ছিলেন কৃষক আফাজ পাঠান। মাত্র পাঁচ বছর ধরে সৌদি আরবের খেজুরের চাষ করে বদলেছেন ভাগ্যের চাকা। তাকে দেখে এলাকার বেকার যুবকসহ কৃষকরাও খেজুর চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন।
ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার হবিরবাড়ী ইউনিয়নের পাড়াগাঁও গ্রামের স্বপ্নবাজ এই কৃষক ১০ বিঘা জমিতে গড়ে তুলেছেন খেজুরের এক বিশাল সাম্রাজ্য। বর্তমানে ১০ বিঘা জমিতে বছরে ২৫ লাখ টাকার খেজুর চারা বিক্রি করেন তিনি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হাসানিয়া সৌদিয়া নামে এই খেজুর বাগানের সারি সারি গাছে দুলছে কাঁচা-পাকা নানা জাতের খেজুর। বাগান পরিচর্যায় কাজ করছেন ১৫ জন শ্রমিক। বাগানে ছোট বড় মিলিয়ে ৫ হাজার গাছের সঙ্গে আরও পাঁচ হাজার কলমের চারা উৎপাদন করেছেন তিনি।
বাগানে রয়েছে মরিয়ম, আজওয়া, ছুকারি, আমবার, বারহী, চেগী, নেপতা, মেগজুনসহ ১০ জাতের খেজুর গাছ। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে ভালুকায় আরবের খেজুর চাষে বিপ্লব ঘটবে বলে আশা স্থানীয়দের।
বাগানে কাজ করার সময় কথা হয় আব্দুল করিম, খলিলুর রহমান, বাবু, আফাজ ও রজব আলী নামে স্থানীয় কয়েকজন শ্রমিকের সঙ্গে।
তারা জানান, দূর-দূরান্তে গিয়ে অনেক কষ্টের কাজ করে পরিবারের ভরণপোষণ করতে হতো। এতে করে নিজের থাকা-খাওয়ার জন্য অনেক টাকা খরচ হয়ে যেত। এখন বাড়ির পাশে খেজুরবাগান পরিচর্যা করে প্রতিদিন প্রতি শ্রমিক পাঁচশ টাকা করে রোজগার করছেন। এখানে কর্মসংস্থানের সুযোগ হওয়ায় এসব শ্রমিক খুশি।
স্থানীয় আফছর উদ্দিন খান, সুরুজ খান, সাহেব আলী নামে কয়েকজন দৈনিক ভোরের আকাশকে জানান, কৃষক আফাজ পাঠান পাঁচ বছর আগেও অনেক কষ্টে দিন কাটিয়েছেন। অথচ এখন তাকে দেখে মনে হয় আলাদিনের চেরাগ পেয়েছেন তিনি। তার দেওয়া বেতনে এখন অনেক শ্রমিকের সংসার চলে। এমন সফলতা সম্ভব হয়েছে তার পরিশ্রম ও ইচ্ছাশক্তির কারণে।
কথা হয় আরবের খেজুর চাষে সফলতা পাওয়া কৃষক আফাজ পাঠানের সঙ্গে। তিনি দৈনিক ভোরের আকাশকে বলেন, ‘২০১৬ সালের শেষদিকে সৌদি আরবের এক বন্ধুর কাছ থেকে খেজুরের বীজ সংগ্রহ করি। সে বছরই দুই বিঘা জমিতে ২৫শ চারা উৎপাদন হয়। এখন বর্তমানে বাগানে ছোট বড় মিলিয়ে দশ হাজার খেজুর গাছের চারা রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘খেজুরের একেকটি চারা ২ হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি করি। তবে, আমি যে চারাগুলো ২৫ হাজার টাকায় বিক্রি করি সেটির বাজারমূল্য ১ লাখ টাকা। তবু বাংলাদেশে এই জাতের চারা ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য কম দামে বিক্রি করছি। প্রতিবছর ২৫ লাখ টাকার চারা বিক্রি করি।’
তিনি আরও বলেন, ‘দিন দিন লাভের পরিমাণ বাড়ায় আরও জায়গা কিনেছি। বর্তমানে ১০ বিঘা জমিতে খেজুর চাষ করছি। বাগানের একটি গাছে ১৫০ কেজি খেজুর ধরে। তবে ৫ থেকে ১০ ফুট লম্বা হলে আরও বেশি হয়।’
আফাজ পাঠান বলেন, ‘সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে আরো জায়গা বৃদ্ধি করতে পারব। ফলে এখানকার বাগান থেকে বাংলাদেশে সৌদি আরবের খেজুরের চাহিদা অনেকটাই মেটানো সম্ভব হবে।’
এ বিষয়ে ভালুকা উপজেলা কৃষি অফিসার জেসমিন নাহার দৈনিক ভোরের আকাশকে জানান, কৃষক আফাজ পাঠান সৌদি খেজুর চাষে সফলতার দৃষ্টান্ত উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন। তাকে দেখে বেকার যুবক ও অন্য কৃষকরাও সৌদি আরবের খেজুর চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। আফাজ পাঠানসহ আরও কেউ খেজুর চাষ করলে সব ধরনের পরামর্শ দেওয়া হবে।