রাজধানীর ধানমন্ডি সাতমসজিদ সড়কে মধ্যরাতে বেপরোয়া গতিতে চালানোর অভিযোগে লেক্সাস মডেলের গাড়িটি আটকিয়ে মদ্যপ অবস্থায় মডেল-অভিনয় শিল্পী অর্চিতা স্পর্শিয়া ও তার বন্ধু প্রাঙ্গণ দত্ত অর্ঘ্যকে দেখতে পায় পুলিশ।
পুলিশের দাবি, গতকাল বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে পথ আটকানোর পর সড়কেই ঘণ্টাখানেক মাতলামি করেন তারা। পরে তাদের ধানমন্ডি থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। তবে রাতেই মুচলেকা দিয়ে ছাড়া পেয়েছেন উভয়েই।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্যমতে, বৃহস্পতিবার রাত আনুমানিক ১২টার দিকে ধানমন্ডি সাতমসজিদ সড়কে বেপরোয়া গতিতে একটি লেক্সাস মডেলের (ঢাকা মেট্রো ঘ-১৭-৪০৭২) গাড়ি যাচ্ছিল। ইউনিমার্টের সামনে পুলিশ গাড়িটি থামায়। তখন চালকের আসনে ছিলেন প্রাঙ্গণ দত্ত অর্ঘ্য। তার পাশে বসা ছিলেন স্পর্শিয়া। দুজনই মদ্যপ অবস্থায় মাতলামি ও কর্তব্যরত পুলিশের সঙ্গে অসদাচরণ করতে থাকেন।
এ সময় দ্রুতগতির আরেকটি গাড়ি এসে দাঁড়ায়। তারা ধানমন্ডি থানার এসআই মাহবুবের ওপর চড়াও হন। পরে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানালে তাদের থানায় নিয়ে যেতে বলা হয়। তবে স্পর্শিয়া ও অর্ঘ্য থানায় যেতে অস্বীকৃতি জানিয়ে গাড়ির ব্যাকডালা খুলে সেখানেই বসে থাকেন। একপর্যায়ে পুলিশ তাদের থানায় নিয়ে যায়। এরপর স্পর্শিয়া ও অর্ঘ্যের স্বজনরা মুচলেকা দিয়ে উভয়কে ছাড়িয়ে আনে।
ধানমন্ডি থানার ওসি একরামুল আলী ভোরের আকাশকে জানান, ধানমন্ডি সাতমসজিদ এলাকায় মধ্যরাতে বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানোর অভিযোগে তাদের পরিচয় নিশ্চিত করতে দুজনকে থানায় আনা হয়। তাদের পরিবার মুচলেকা দিয়ে তাদের নিয়ে যায়।
তিনি জানান, তাদের গতিরোধ করার অপরাধে আমাদের ফোর্সের সঙ্গে অসদাচরণ করা হয়েছে। তারা মধ্যপ অবস্থায় ছিলেন কিনা সে সম্পর্কে তিনি নিশ্চিত করে বলতে পারেননি।
এসআই মাহবুব বলেন, ‘আমরা বেপরোয়া গতির একটি গাড়িকে চ্যালেঞ্জ করি। অর্ঘ্য নামে একজন এটি চালাচ্ছিলেন। গাড়িতে স্পর্শিয়াও ছিলেন। তারা আমাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। প্রাথমিকভাবে তাদের স্বাভাবিক মনে হয়নি। পরে ঊর্ধ্বতন অফিসারদের নির্দেশে তাদের থানায় নিয়ে যাই। পরে মুচলেকা দিয়ে তাদের ছাড়িয়ে নেওয়া হয়।’
প্রাঙ্গণ দত্ত অর্ঘ্য মুচলেকায় বলেন, ‘আমি গাড়িটি থামিয়ে দায়িত্বরত পুলিশ অফিসারের সঙ্গে কথা বলার সময় হঠাৎ উত্তেজিত হয়ে যাই এবং পুলিশের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করি। আমি মদ্যপ অবস্থায় আছি কিনা পুলিশ জানতে চাইলে, অল্প মদ পান করেছি বলে জানাই এবং এটাও বলি আমার মদপানের লাইসেন্স আছে।
‘পুলিশকে তৎক্ষণাৎ লাইসেন্স দেখাতে ব্যর্থ হই। মদ্যপ অবস্থায় অতিরিক্ত গতিতে গাড়ি চালানো এবং পুলিশের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা হওয়ায় থানার ঊর্ধ্বতন অফিসার আমার সঙ্গে ফোনে কথা বলে থানায় যেতে বলেন। আমি গাড়িসহ থানায় হাজির হই।’
অর্ঘ্য মুচলেকায় আরো বলেন, ‘এই মর্মে মুচলেকা দিচ্ছি যে, ভবিষ্যতে এমন কার্যকলাপ আর করব না। অতিরিক্ত গতিতে আর গাড়ি চালাব না। সাক্ষীদের উপস্থিতিতে ধানমন্ডি থানার ওসির কাছে দেওয়া এই মুচলেকায় স্বাক্ষর করলাম।’
জানা গেছে, প্রাঙ্গণ দত্ত অর্ঘ্যের বাবার নাম প্রদীপ কুমার দত্ত। তিনি সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে ২০১৬ সালে অবসর নিয়েছেন। সিদ্ধেশ্বরীর অপ্সরা অ্যাপার্টমেন্টে বাবার সঙ্গে থাকেন প্রাঙ্গণ। নিজেকে একজন সিআইপি হিসেবে দাবি করলেও প্রাঙ্গণ কী ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত তা জানা যায়নি।
অর্চিতা স্পর্শিয়া ২০১১ সালে একটি বিজ্ঞাপনের মডেল হিসেবে বিনোদন অঙ্গনে নিজের নাম লেখান। তিনি টিভি নাটকের পাশাপাশি একাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। ২০২০ সালে ‘নবাব এলএলবি’ ছবিতে পুলিশকে হেয় করে সাজানো একটি দৃশ্যে অভিনয়ের জন্য আলোচনায় আসে তার নাম। তখন ছবিটির পরিচালক অনন্য মামুন ও অভিনেতা শাহিন মৃধাকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ।