ভ্যাট (মূল্য সংযোজন কর বা মূসক) আদায়ের নামে রাজস্ব কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে হয়রানি করার অভিযোগ তুলেছেন ব্যবসায়ীরা। এসব কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ঘুষ আদায়সহ দুর্নীতিরও অভিযোগ করেছেন তারা। অনেক ব্যবসায়ী অভিযোগ করেছেন, এক কোটি টাকা ভ্যাট সংগ্রহের জন্য তিন কোটি টাকা ঘুষ নিচ্ছে রাজস্ব কর্তারা। চেষ্টা করেও এর প্রতিকার হচ্ছে না।
শনিবার (২২ জানুয়ারি) জেলা চেম্বার, বিশেষায়িত চেম্বার ও নারী উদ্যোক্তা চেম্বারগুলোর শীর্ষ নেতৃবৃন্দের ‘কাউন্সিল অব চেম্বার প্রেসিডেন্টস’র সভায় তারা এসব অভিযোগ করেন।
এতে বক্তব্য রাখেন- মেট্রোপলিটন চেম্বার, ঢাকা চেম্বার, ফরেন ইভেস্টমেন্ট চেম্বার, বাংলাদেশ চেম্বার, বাংলাদেশ উইমেন্স চেম্বার, চট্টগ্রাম উইমেন্স চেম্বারসহ নীলফামারী, টাঙ্গাইল, ঝিনাইদহ, লক্ষ্মীপুর, বাগেরহাট, চট্টগ্রাম, দিনাজপুর, বান্দরবান, পটুয়াখালী, গেপালগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, সাতক্ষীরা, রাজশাহী, রংপুর মেট্টপলিটন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, দিনাজপুর, লালমনিরহাট, কক্সবাজার, সিরাজগঞ্জ, খুলনা, জামালপুর, নরসিংদী, সিলেট, জামালপুর এবং বরিশাল চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের নেতারা।
এসময় তারা ভ্যাট আদায়ের ক্ষেত্রে তাদের নানা সমস্যার কথা তুলে ধরেন। এছাড়াও প্রসঙ্গে উঠে আসে ব্যবসায়ের পরিবেশসহ নানা সংকটের কথাও। তাদের প্রায় সবাই দাবি করেন, নিয়ে ব্যবসায়ীদের মধ্যে ভীতির পরিবেশ তৈরি হয়েছে। ভ্যাট ও রাজস্ব আদায়ের নামে হয়রানির দূর করতে এফবিসিসিআইকে জেলা প্রশাসকসহ জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) সঙ্গে নিয়ে একটি যৌথ (ভার্চুয়াল) সভার প্রস্তাব দিয়েছেন তারা।
সভায় ব্যাংকিং, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের প্রণোদনা, বিনিয়োগ, মাঠ পর্যায়ে রাজস্ব ব্যবস্থাপনা ও সামগ্রিক অর্থনীতির বিদ্যমান পরিস্থিতি সম্পর্কে মতামত তুলে ধরেন ব্যবসায়ী নেতারা। মতিঝিল এফবিসিসিআই আইকন ভবনে অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতিত্ব করবেন, এফবিসিসিআই’র সিনিয়র সহ-সভাপতি ও কাউন্সিল অব চেম্বার প্রেসিডেন্টস’র সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন।
ভ্যাট ইস্যুতে বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের (বিসিআই) সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী (পারভেজ) বলেন, ভ্যাটের নামে কর্মকর্তারা যে কোন সময়, যে কোন প্রতিষ্ঠানে থাবা মারছে এবং বন্ধ করে দিচ্ছে। এই বিষয়টি ব্যবসায়ীদের জন্য বিপর্যয় নিয়ে আসবে।
চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, বলা হয়েছে ভ্যাট এখন অনেক সহজ। তবে ভ্যাট কিন্তু হয়রানি মুক্ত হয়নি। এছাড়া এসএমই উদ্যোক্তাদের সমস্যার কথা বলার পর্যায়ে নাই। আয়কর আইন করা হচ্ছে, কিন্তু, এই আইনের ৩৩গ, ৩৭চ এবং ৩৭ছ এসব ধারা বিলুপ্ত করতে হবে। কারণ হচ্ছে, ব্যবসায়ীরা কোনো বছর লাভ করবেন আবার কোনো বছর ক্ষতির মুখোমুখি হবেন। কিন্তু, প্রতি বছর লাভ লোকসান যাই হোক একই হারে ট্যাক্স দিতে হবে এটি কেমন নিয়ম?
লক্ষ্মীপুর চেম্বারের সভাপতি এম আর মাসুদ বলেন- জেলার ব্যবসায়ীদের সমস্যার শেষ নাই। এর মধ্যে প্রতিবছর ভ্যাট, ট্যাক্স, অগ্নি, গ্যাস লাইনের কাগজপত্র নবায়নের নামে জন্য ব্যবসায়ীদের ওপর রাজস্ব কর্মকর্তারা ঝাঁপিয়ে পড়ছেন। এর থেকে জেলার সাধারণ ব্যবসায়ীরা পরিত্রাণ চান। এটি শুধু একটি জেলার সমস্যা নয়, সারাদেশের ৪ কোটি ব্যবসায়ীর সমস্যা। কম বেশি সবাইকে নাজেহাল হতে হচ্ছে। কিছু হলেই যেন ব্যবসায়ীদের ওপর এসব কর্মকর্তা হুমড়ি খেয়ে পড়ে।
বাগেরহাট চেম্বার সভাপতি শেখ লিয়াকত হোসেন বলেন, ব্যবসায়ীরা ভ্যাট, ট্যাক্স দিয়ে ব্যবসায় করতে চায়। তবে জেলা পর্যায়ে রাজস্ব আহরণের নামে আইনের ধারার ভয় দেখিয়ে দাড়ি, কমা ভুল দেখিয়ে, তারা (রাজস্ব কর্মকর্তারা) ব্যবস্থা নিচ্ছে। তাই মনে হচ্ছে যেন বাংলাদেশে ব্যবসা করতে হলে আগে আইনবিদ হতে হবে। আইনবিদ না হয়ে ব্যবসায় করা যাবে না।
কিশোরগঞ্জ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি মজিবুর রহমান বেলাল বলেন, এখন ব্যবসায়ীদের হাতে কোনো পুঁজি নাই। করোনায় সব শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু, লকডাউন শেষে ভ্যাট এর নামে রাজস্ব কর্মকর্তারা ঝাঁপিয়ে পড়েছে। তারা ভ্যাট আদায় করছে এক কোটি, কিন্তু, এটা সেটা দেখিয়ে ঘুষ নিচ্ছে ৩ কোটি। আমরা ব্যবসায়ী নেতারা প্রতিবাদ করলে সাময়িক চলে যায়, পরবর্তীতে আবার আসে। এসব থেকে বাঁচতে হলে ব্যবসায়ীদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।