দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রধান বালু-পাথর কোয়ারি সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের ফাজিলপুর থেকে বালি-পাথর পরিবহনে চরম দুর্ভোগ দেখা দিয়েছে। বৌলাই নদীর তলদেশ পলি ভরাট হয়ে নাব্য সংকট দেখা দেওয়ায় ১৫-২০ দিন ধরে তীব্র নৌজটের সৃষ্টি হয়েছে। আটকা পড়েছে বালি ও পাথরবোঝাই কয়েকশ’ বাল্কহেড।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অবকাঠামো নির্মাণে সুনামগঞ্জের ফাজিলপুরের বালি-পাথর প্রথম শ্রেণির। তাই এ এলাকার বালি-পাথরের ব্যাপক চাহিদা দেশজুড়ে। বালি-পাথর পরিবহণে সহজ নদীপথ। এ পথে খরচ কম হওয়ায় ভাল্কহেড (ইঞ্জিনচালিত মাল পরিবহণ নৌকা) দিয়ে বালি-পাথর দেশের বিভিন্ন এলাকায় পাঠানো হয়। সুনামগঞ্জ থেকে যাদুকাটা-বৌলাই-সুরমা নদী হয়ে প্রতিদিন শত শত বাল্কহেডে বালি-পাথর পরিবহণ করা হয়। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে জানুয়ারি মাস থেকেই বৌলাই নদীতে নৌযান আটকা পড়ে নৌজটের সৃষ্টি হচ্ছে।
সম্প্রতি বৌলাই নদীর বেহেলী বাজার, রহমতপুর, বদরপুর ও হিজলা গ্রামের কাছে বালি-পাথর ভর্তি শত শত ভাল্কহেড আটকা পড়ে আছে। নৌ চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় উপায় না পেয়ে অনেক ভাল্কহেড শ্রমিকরা ছোট নৌকায় বালি নামিয়ে নৌজট থেকে মুক্ত হওয়ার চেষ্টা করছেন। এতে পরিবহণ ব্যয় বৃদ্ধি হচ্ছে। পাশাপাশি বালি-পাথর সময়মতো সরবরাহ না হওয়ায় রাস্তা-ঘাট, দালানকোঠা ও সেতু নির্মাণে সময় বৃদ্ধি হচ্ছে।
আটকা পড়া নৌযানের সুকানী ও শ্রমিকরা জানিয়েছেন, বৌলাই নদীর বেহেলী বাজার থেকে পৈন্ডুপ বাজার পর্যন্ত নদীর অনেক অংশ ভরাট হয়ে গেছে। দ্রুত নদী খনন না করলে নৌ চলাচল বন্ধ হয়ে যাবে। গুরুত্বপূর্ণ এই নদীপথে এতদিন ধরে নৌজট থাকার পরও বিআইডব্লিওটিএ’র কারো দেখা পাওয়া যায়নি। এই নদীপথ সচল না থাকলে বালি-পাথরের দাম অনেক বাড়বে ও নৌযানের শ্রমিকরা কষ্টে পড়বেন বলে জানান তারা।
বৌলাই নদীর তীরবর্তী জামালগঞ্জের হাওরআলীপুর গ্রামের জুয়েল আহমদ আফাই মিয়া বলেন, ১৫-২০ দিন ধরে শত শত বালি-পাথরবোঝাই নৌকা বৌলাই নদীতে আটকা পড়ে আছে। দ্রুত নদী খনন না করলে এই সমস্যার সমাধান হবে না।
কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর এলাকার নৌযান ‘হিয়া-ইমন’ নৌযানের সুকানী হারুন অর রশিদ বলেন, আমার নৌকায় ৯ হাজার ফুট বালি পরিবহণ করা যায়। কিন্তু ছয় হাজার ফুট বালি নিয়ে বৌলাই নদীতে ১৫ দিন ধরে আটকা আছি। প্রতিদিন পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকা খরচ হচ্ছে। এক সপ্তাহ আগে বালি নিয়ে বরিশালের উজিরপুর-ভবানীপুর এলাকায় যাওয়ার কথা ছিল এবং এই বালি দিয়ে একটি স্কুল নির্মাণকাজের উদ্বোধনের কথা ছিল। কিন্তু আমরা বের হতে পারছি না। বিআইডব্লিওটিএ’র কাউকে নদীতে দেখা যায়নি।
জামালগঞ্জের মশালঘাট গ্রামের ‘মা-বাবার দোয়া’ নৌযানের চালক পারভেজ মিয়া বললেন, ঢাকার গাবতলীতে ছয় হাজার ফুট পাথর পৌঁছে দেওয়ার কথা ছিল ৫ দিন আগেই। কিন্তু আমরা ১০ দিন ধরে নদীতেই বসে আছি। নৌকাকে ভাটিতে নেওয়ার জন্য আমাদের ১২ হাজার টাকা খরচ করেছি কিন্তু বের হতে পারছি না।
তাহিরপুর উপজেলার বালিজুরি গ্রামের নাফিজ-নাবিদা এন্টারপ্রাইজের সুকানী লাল মিয়া বলেন, গত কয়েক বছর ধরে বৌলাই নদীতে নৌকা চলাচলে সমস্যা দেখা দিয়েছে। গত ১২ দিন ধরে বেহেলী বাজারের কাছে আমাদের নৌকা আটকে আছে। আমাদের মতো শত শত নৌকা বালি-পাথর নিয়ে নদীতে বসে আছে।
বেহেলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সুব্রত সামন্ত সরকার বলেন, বেহেলী বাজারের আশপাশে বৌলাই নদীর অনেক জায়গা ভরাট হয়ে গেছে। ফলে নৌ চলাচল বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে অবগত করেছি।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী জহুরুল ইসলাম জানান, বৌলাই নদীসহ সুনামগঞ্জের ১৪টি নদী খননের জন্য একটি প্রকল্প প্রস্তাবনা পরিকল্পনা কমিশনে রয়েছে। প্রকল্পটি অনুমোদন হলে তারা বৌলাই নদী দ্রুত খননের উদ্যোগ নেবেন।
বিআইডব্লিওটিএ’র ড্রেজিং শাখার প্রধান প্রকৌশলী মো. আব্দুল মতিন বলেন, আমরা ছাতক-ভৈরব নদীপথ খনন ও রক্ষণাবেক্ষণ করি। বৌলাই নদীর এই অবস্থানটুকু আমার ভালোভাবে জানা নেই। বৌলাই নদী ভরাটের ফলে নৌজটের সৃষ্টি হয়েছে বলে কেউ জানায়নি। যারা নদীতে আটকা পড়েছে তাদের কেউও আমাকে বিষয়টি অবগত করেননি। বৌলাই নদীর খোঁজখবর নেওয়া হবে।