logo
আপডেট : ২৩ জানুয়ারি, ২০২২ ১৫:২৩
‘একটা ইজিবাইক হলে আর ভিক্ষা করতাম না’
ঘোড়ায় চড়ে ভিক্ষা
জিয়াউর রহমান, নেত্রকোনা

‘একটা ইজিবাইক হলে আর ভিক্ষা করতাম না’

‘ভিক্ষা করতে আর ভালো লাগে না। লজ্জা লাগে। পা দুটি অকেজো থাকায় এবং অন্য কোনো কাজ করতে না পারায় পেটের দায়ে বাধ্য হয়েই ভিক্ষাবৃত্তিতে নেমেছি। কিন্তু ঘোড়ায় চড়ে ভিক্ষা করতে দেখে মানুষ আমাকে নিয়ে উপহাস ও হাসি-ঠাট্টা করে। এতে আমার খুব কষ্ট লাগে।’ এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন নেত্রকোনার কেন্দুয়া পৌর শহরের বাদে আঠারবাড়ি তুরুকপাড়া গ্রামে ঘোড়ায় চড়ে ভিক্ষা করতে আসা পঞ্চাশোর্ধ্ব শারীরিক প্রতিবন্ধী রবিকুল ইসলাম।


তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রবিকুলের পা দুটি সম্পূর্ণ অকেজো। তাই তিনি চলাচল করতে পারেন না। এ অবস্থায় ঘোড়ায় চড়ে গত ১৫ বছর ধরে তিনি বিভিন্ন হাটবাজারসহ গ্রামে গ্রামে ভিক্ষা করে জীবন চালিয়ে আসছেন।
ময়মনসিংহ জেলার নান্দাইল উপজেলার মোয়াজ্জেমপুর ইউনিয়নের আতকাপাড়া গ্রামে রবিকুলের বাড়ি। তিনি আতকাপাড়া গ্রামের গিয়াস উদ্দিনের ছেলে।


বৃদ্ধ পিতা, স্ত্রী, তিন মেয়ে ও এক ছেলেসহ সাত সদস্যের বৃহৎ পরিবার রবিকুলের। সংসারে আর কোনো উপার্জনশীল ব্যক্তি না থাকায় পুরো সংসারের ভরণপোষণের কঠিন দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে প্রতিবন্ধী রবিকুলের একাই। আর তাই বাধ্য হয়েই তাকে প্রতিদিন ঘোড়ায় চড়ে ভিক্ষাবৃত্তিতে বের হতে হয়।


জমিজমা বলতে কিছুই নেই জানিয়ে রবিকুল বলেন, ‘এত অভাব-অনটনের মধ্যেও মেয়েগুলোকে স্থানীয় একটা মাদ্রাসায় এবং ছেলেটাকে স্থানীয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াচ্ছি। খেয়ে না খেয়ে আমাদের সংসার চললেও সন্তানদের যাতে কষ্ট না হয় সে জন্যই তাদের পড়াশোনা করাচ্ছি। কিন্তু তা কতটুকু পারবÑ সেটা জানি না।


কিভাবে পা দুটি অচল হলো জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ‘আমার বয়স যখন সাত বছর। তখন আমার টাইফয়েড জ্বর হয়েছিল। আর সেই থেকেই আমার পা দুটি অকেজো। আমি হাঁটতে পারি না। তাই মানুষ আমাকে কোনো কাজ দেয় না। অবশেষে কোনো উপায় না দেখে জীবন চালাতে বাধ্য হয়েই মানুষের কাছে হাত পাততে শুরু করেছি। সারাদিন ভিক্ষা করে ৫-৬শ’ টাকার মতো হয়। তা দিয়ে সংসার চলে না। তবুও এভাবেই গত ১৫ বছর ধরে ঘোড়ায় চড়ে ভিক্ষা করে কোনোরকম বেঁচে আছি।’


তিনি আরো বলেন, ‘আগে আমাদের নিজের একটা ঘোড়া ছিল। সেটাতে চড়ে ভিক্ষা করতাম। বৃদ্ধ বাবা সে ঘোড়াটা দেখাশোনা করত। কিন্তু বাবা দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ তাই সে ঘোড়াটা বিক্রি করে দিয়েছি। এখন যে ঘোড়াটায় চড়ে ভিক্ষা করি সে আমার না। এটা আমাদের পার্শ্ববর্তী কেন্দুয়া থানার মামুদপুর গ্রামের একজনের কাছ থেকে নিয়েছি। কেন্দুয়াতে থেকেই কিছুদিন ধরে ভিক্ষা করছি। ঘোড়ার মালিক অবশ্য আমার কাছে টাকা চান না। কিন্তু তারপরও তো আমার তাকে কিছু দিতে হবে।’


ভিক্ষা ছাড়া অন্য কি করতে চান জানতে চাইলে রবিকুল বলেন, ‘টাকা থাকলে একটা অটোরিকশা (ইজিবাইক) কিনে চালাতাম। আর তা না হলে একটা মুদির দোকান দিয়ে ব্যবসা করতাম। কিন্তু সে ক্ষমতা আমার নাই। সরকার কিংবা সমাজের কোনো বিত্তশালী ব্যক্তি যদি আমাকে একটা অটোরিকশা কিনে দিতেন তাহলে আমি আর ভিক্ষা করতাম না। গাড়ি চালিয়ে সম্মানের সঙ্গে জীবনটা কাটিয়ে দিতাম।’