আসন্ন ষষ্ঠ ধাপে কুড়িগ্রামের আটটি ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এতে চেয়ারম্যান পদে ৪৭, সদস্য (মেম্বার) পদে ২৮৩ ও সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে ১১২ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এ আট ইউনিয়নের মোট ৪৪২ প্রার্থীর কেউই মানছেন না নির্বাচনী আচরণবিধি। পোস্টার ছাপানো থেকে শুরু করে সাঁটানো, প্রচার কোনো পর্যায়েই মানা হচ্ছে না আচরণবিধি। এসব দেখার জন্য নিয়োজিত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারও অনেকটা উদাসীন।
জানা যায়, ষষ্ঠ ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে চিলমারী ও ভূরুঙ্গামারীর আটটি ইউনিয়নে ভোট অনুষ্ঠিত হবে। ৩১ জানুয়ারির এ ভোট সামনে রেখে জমে উঠেছে প্রচার। তবে প্রচারে আচরণবিধি লঙ্ঘনের মহোৎসব চলছে। গত দুদিনে নির্বাচনী এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, দুপুর ২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত মাইক ব্যবহার করে প্রচারের নিয়ম থাকলেও সকাল ১০টা বাজলেই শুরু হয় মাইকিং, যা চলে রাত ১০টা পর্যন্ত। অধিকাংশ প্রার্থী স্বাস্থ্যবিধিও মানছেন না। একাধিক মোটরসাইকেল দিয়েও প্রার্থীরা দিচ্ছেন মহড়া। আবার ভোট কেন্দ্রগুলোর ভেতরে ঝুলছে নির্বাচনের পোস্টার। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দেয়ালে, বাসাবাড়ির টিনের বেড়ায় ও ছোট ছোট যানবাহনেও সাঁটানো হয়েছে নির্বাচনী পোস্টার। এছাড়া বড় বড় গাছ আর বৈদ্যুতিক খুঁটিতেও ঝুলছে নির্বাচনী বিলবোর্ড। এমনকি শিশুদেরও দেখা যাচ্ছে নির্বাচনের কাজে ব্যবহার করতে। নির্বাচনী আচরণবিধি না মানায় সাধারণ জনগণও এ নিয়ে অতিষ্ঠ।
ভূরুঙ্গামারীর পাথরডুবি ইউনিয়নের বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘সন্ধ্যার পরে বাচ্চারা পড়ালেখা করে। রাত ৮টার পরও ভোটের প্রচার থামে না। খুবই বিরক্ত লাগে।’ চিলমারী বাজারের বাসিন্দা হাফিজা বেগম বলেন, ‘সকাল ১০টার পর শুরু হয় ভোট চাওয়ার মাইকিংয়ের প্রতিযোগিতা। কোনো প্রার্থীই মানছেন না আচরণবিধি।’ রেডিও চিলমারীর সামনে দেখা যায়, একদল শিশুর হাতে ছোট ছোট নির্বাচনী পোস্টার। তাদের মধ্যে এক শিশু লিমন বলে, ‘আমাদের হাতে পোস্টারগুলো মেম্বারের লোকজন দিছে। তারা বলছে, তোমাদের আব্বু-আম্মুকে বলবা এই মার্কায় ভোট দিতে।’
নির্বাচনী পোস্টার দেয়ালে সাঁটানোর বিষয়ে চিলমারীর থানাহাট ইউপির চেয়ারম্যান প্রার্থী হালিমুজ্জামান বাবলু বলেন, ‘আমি আমার কর্মীদের বলে দিয়েছি আইন মেনে পোস্টার ঝুলাতে। সে হিসেবে পোস্টার ঝোলানোর কথা। তবে কোনো কোনো কর্মী হয়তো অতি উৎসাহী হয়ে দেয়ালে ও টিনের বেড়ায় পোস্টার সাঁটাচ্ছেন।’
সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর প্রার্থী মোছা রেজিয়া বেগম বলেন, ‘আমি একাই দেয়ালে পোস্টার সাঁটাচ্ছি না, আরো অনেক প্রার্থী সাঁটাচ্ছেন। তাদেরটা গিয়া বন্ধ করেন আগে।’ ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনী আচরণ বিধিমালা-২০১৬-এর ৮(৮) উপধারায় বলা হয়েছে, কোনো প্রার্থী বা তার পক্ষের কোনো ব্যক্তি, সংস্থা কিংবা প্রতিষ্ঠান নির্বাচনী এলাকায় অবস্থিত দেয়াল, যানবাহন ও লিফলেট লাগাতে পারবেন না। তবে ভোটকেন্দ্র ব্যতীত নির্বাচনী এলাকার যেকোনো স্থানে পোস্টার ঝুলিয়ে রাখা যাবে।
আচরণবিধি লঙ্ঘনে কী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে- এ বিষয়ে ভূরুঙ্গামারী উপজেলা নির্বাচন অফিসার মশিউর রহমান বলেন, ‘বিষয়টি ইউএনও ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দেখেন। তারা এসব বলতে পারবেন, তারপরও আমি বিষয়টি দেখব।’ চিলমারী উপজেলা নির্বাচন অফিসার ইকবাল হোসেন বলেন, ‘বিষয়টি আমরা দেখছি না। আপনি ইউএনওকে বিষয়টি অবগত করেন। তারা ব্যবস্থা নেবে।’
এ বিষয়ে জানার জন্য চিলমারী ও ভূরুঙ্গামারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তারা কেউই ফোন রিসিভ করেননি।