আংশিক কর্মী দিয়ে রোস্টার করে ব্যাংকের শাখা পরিচালনা করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা থাকলেও মানছে না বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। শাখা চলছে পুরো জনবল নিয়ে। মঙ্গলবার (২৫ জানুয়ারি) সকালে ব্যাংকের বিভিন্ন শাখায় গিয়ে এমন চিত্র দেখা গেছে।
ব্যাংকের শাখা ম্যানেজাররা বলছেন, তারা স্ব স্ব ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় থেকে নির্দেশনা পাননি, আগের মতোই পূর্ণ কর্মী দিয়ে ব্যাংক পরিচালনা করছেন। আজ মঙ্গলবার নির্দেশনা পেলে আগামীকাল বুধবার থেকে রোস্টারিং করে শাখা পরিচালনা করা হবে।
সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, মিরপুর-১০ গোলচক্করের পাশে অবস্থিত আল আরাফা ইসলামী ব্যাংকে দাপ্তরিক কাজ চলছে পুরো জনবল দিয়ে।
এ বিষয়ে রাফসান হাসান নামে এক কর্মকর্তা জানান, তারা শুনেছেন বাংলাদেশ ব্যাংক নির্দেশনা দিয়েছেন রোস্টার করে ব্যাংক পরিচালনা করতে হবে। কিন্তু প্রধান কার্যালয় থেকে এখনো নির্দেশনা শাখায় পৌঁছেনি। এ জন্য পুরো কর্মী দিয়ে অফিস চলছে। আজকে নির্দেশনা এলে রোস্টার করে নির্দেশনা দেওয়া হবে। কালকে থেকে সে মোতাবেক শাখা চলবে।
এনসিসি ব্যাংকের প্রিন্সিপ্যাল অফিসার গিয়াস উদ্দিন জানেনই না ব্যাংক শাখা রোস্টার করে আংশিক কর্মী দিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করার বিষয়ে।
ভোরের আকাশকে তিনি বলেন, রোস্টার করে আংশিক কর্মী দিয়ে অফিস পরিচালনা করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের যে ঘোষণা আছে, সেটা সরকারি অফিসের জন্য প্রযোজ্য। ব্যাংকের জন্য প্রযোজ নয়।
গিয়াস উদ্দিনের মুখেও মাস্ক দেখা যায়নি। শাখার ডেপুটি ম্যানেজার বসির উদ্দিন জানান, তিনি শুনেছেন বাংলাদেশ ব্যাংক ঘোষণা দিয়েছে রোস্টার করে ব্যাংক পরিচালনা করতে হবে। তবে সেই অর্ডার শাখায় এসে পৌঁছেনি। এনসিসি ব্যাংকের এই শাখায় অনেকে করোনায় আক্রান্ত হয়ে বাসায় অবস্থান করছেন। তারপরও মাস্ক ব্যবহারে কোনো কর্মকর্তার আগ্রহ নেই।
সবচেয়ে বেশি জনবল আর গ্রাহক নিয়ে চলে ডাচ্-বাংলা, ইসলামী ব্যাংক ও সোনালী ব্যাংকের শাখা।
ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের মিরপুরের শাখায় সকাল সাড়ে ১০টায় দেখা যায় গ্রাহকে পরিপূর্ণ। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য বসার আসনগুলো ভরে গেছে, খালি নেই। সব কর্মকর্তা-কর্মচারী অফিসে উপস্থিত আছেন। এ ব্যাংকটিও কর্মীদের রোস্টার করতে পারেনি, চলছে পুরো জনবল দিয়েই।
জানতে চাইলে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের সিনিয়র অ্যাসিসটেন্স ভাইস প্রেসিডেন্ট অ্যান্ড ম্যানেজার মঞ্জরুল ইসলাম ভোরের আকাশকে বলেন, ‘রোস্টারিং করে শাখা পরিচালনা সম্পর্কিত আমাদের অফিসিয়াল নির্দেশনা গতকাল সন্ধ্যায় পেয়েছি। ততক্ষণ অধিকাংশ কর্মকর্তা বের হয়ে গেছেন।
‘এ কারণে গতকাল আমরা নির্দেশনা জারি করতে পারিনি। আজকে রোস্টারিং করে নোটিশ জারি করব। সে মোতাবেক আগামীকাল থেকে রোস্টারিং করে শাখা পরিচালনা হবে।’
করোনাভাইরাস মোকাবিলা করে গ্রাহকের সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে রোস্টারিং করে শাখা পরিচালনার নির্দেশনা শাখা পর্যায়ে কোনো ব্যাংকই কার্যকর করতে পারেনি। ইউনিয়ন ব্যাংক, আইএফআইসি ব্যাংকসহ সব ব্যাংকেই পুরো কর্মী দিয়ে কার্যক্রম চলছে। মিরপুরের শাখা যেমন চলছে, তেমনি চলছে মতিঝিল, ফার্মগেট, বনানী এলাকার সব ব্যাংক এবং প্রধান কার্যালয়ও।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রায় সব ব্যাংকেই ৫ থেকে ১০ শতাংশ কর্মকর্তা-কর্মচারী করোনায় আক্রান্ত। কোনো কোনো ব্যাংকে আরো বেশি এবং তারা বাসায় অবস্থান করছেন। আবার অনেকে আক্রান্ত হওয়ার পর নেগেটিভ হয়ে পুনরায় কাজে যোগদান করেছেন। ফলে অঘোষিতভাবে রোস্টারিং আগে থেকেই চলছে।