শেষ হলো বিপিএলের প্রথম ঢাকার পর্ব। অপেক্ষা এখন চট্টগ্রাম পর্বের। শুক্রবার থেকে বন্দরনগরী চট্টগ্রামে শুরু হতে যাচ্ছে বিপিএলের দ্বিতীয় পর্ব। এই পর্বে অনুষ্ঠিত হবে মোট আট ম্যাচ। ঢাকার প্রথম পর্বেও অনুষ্ঠিত হয়েছে আটটি ম্যাচ। এই পর্বে আপাতদৃষ্টিতে বেশ এগিয়ে আছে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স ও চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স। ছয় দলের পয়েন্ট তালিকায় শীর্ষে রয়েছে দল দুটি। তবে বাজে অবস্থা তারকাসমৃদ্ধ দল ঢাকার। দেখে নেয়া যাক প্রথম পর্বে দলগুলোর পারফরম্যান্স।
প্রথম পর্ব শেষে পয়েন্ট তালিকায় শীর্ষে রয়েছে সাবেক চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। দুটি ম্যাচ খেলে দুটিতেই জয় পেয়েছে তারা। যদিও তারা এক ম্যাচের পর বেশ সময় পেয়েছে দ্বিতীয় ম্যাচের আগে। সেই তুলনায় কিছু দল টানা খেলে ক্লান্ত। যেমন ঢাকার দলটি সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলেছে এই পর্বে, চারটি। অবস্থান তলানিতে।
দুই ম্যাচে পূর্ণ চার পয়েন্ট নিয়ে সবার উপরে কুমিল্লা। সেখানে তিন ম্যাচে দুই জয়ে সমান চার পয়েন্ট চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের। আছে একটি হার। নেট রান রেটে পিছিয়ে থাকায় দলটির অবস্থান দ্বিতীয়। এরপরের চারটি দলের পয়েন্টই সমান, ২। নেট রান রেটের হিসেবে যথাক্রমে এর পরের দলগুলো ফরচুন বরিশাল, খুলনা টাইগার্স, সিলেট সানরাইজার্স ও মিনিস্টার গ্রুপ ঢাকা।
প্রথম ম্যাচে কুমিল্লার প্রতিপক্ষ ছিল অপেক্ষাকৃত দুর্বল দল সিলেট। কিন্তু এই দলের বিরুদ্ধে জিততেও ঘাম ঝড়াতে হয়েছে কুমিল্লাকে। মাত্র ৯৬ রানে সিলেট অলআউট হলেও লক্ষ্য স্পর্শ করতে কুমিল্লাকে খেলতে হয়েছিল ১৯ ওভার পর্যন্ত, উইকেট পতন ৮টি। দুই উইকেটের জয় দিয়ে বিপিএল মিশন শুরু করে দলটি। দ্বিতীয় ম্যাচে অবশ্য দাপুটে অবস্থানে ছিল ইমরুল কায়েসের নেতৃত্বাধীন দলটি। বোলিং, ব্যাটিং, ফিল্ডিংÑ তিন ভার্সনেই কুমিল্লা ছিল দেখার মতো। সাকিবের বরিশালকে তারা হারায় ৬৩ রানের বড় ব্যবধানে। এই ম্যাচ দিয়েই শেষ হয় বিপিএলের প্রথম ঢাকা পর্ব।
পয়েন্ট তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে থাকা তারুণ্যনির্ভর দল চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স খেলেছে তিন ম্যাচ। এর মধ্যে দুটিতে জয় একটিতে হার। শুরুটা যদিও তাদের হার দিয়ে। বরিশালের সঙ্গে লড়াই করে প্রথম ম্যাচ মিরাজরা হারে ৪ উইকেটে। এরপরের দুটি ম্যাচেই দারুণ দক্ষতায় জেতে দলটি। দ্বিতীয় ম্যাচে তারকাসমৃদ্ধ দল ঢাকাকে তারা হারায় ৩০ রানের ব্যবধানে। আর তৃতীয় ও সর্বশেষ ম্যাচে খুলনা টাইগার্সের বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম ছিল অপ্রতিরোধ্য। আগে ব্যাট করতে নেমে সাত উইকেটে ১৯০ রান করে দলটি। জবাবে ১৬৫ রানে থামে খুলনা। তার মানে চট্টগ্রাম পর্ব শুরুর আগে বেশ চনমনে অবস্থায় রয়েছে মিরাজ ব্রিগেড। এবার নিজেদের হোম ভেন্যুতে সাফল্যের এই ধারা বজায় রাখতে চায় দলটি।
এরপর রয়েছে সাকিবের ফরচুন বরিশালের অবস্থান। যদিও দলটি বেশ ব্যালান্সড। শুরুটা ভালো হলেও শেষের দুটি ম্যাচ হতাশায় পুড়িয়েছে তাদের। শুরুটা তাদের চট্টগ্রামকে হারিয়ে। কিন্তু পরের দুই ম্যাচেই হারতে হয়েছে তাদের। দ্বিতীয় ম্যাচে মিনিস্টার ঢাকার কাছে বরিশাল হার মানে ৪ উইকেটে। অথচ এই ম্যাচ দিয়ে চলমান বিপিএল মিশন শুরু করেছিলেন ক্রিস গেইল। ব্যাট হাতে ওই ম্যাচে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংসও ছিল তার। কিন্তু কপাল খারাপ।
সর্বশেষ বরিশালের হার কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের সঙ্গে। এই ম্যাচে অবশ্য বরিশালকে ভুগিয়েছে দুর্বল ব্যাটিং। টপ অর্ডার তো বটেই লেজের সারির কোনো ব্যাটারও জ¦লে উঠতে পারেনি। সর্বোচ্চ ৩৬ রান আসে নাজমুল হোসেন শান্তর ব্যাট থেকে। অধিনায়ক সাকিব আল হাসান, ক্রিস গেইল, ডুয়াইন ব্রাভো, সৈকত আলী ছুতে পারেননি দুই অঙ্কের রান। তিন ব্যাটার আউট হয়েছেন রানের খাতা খুলার আগেই। ফলে বরিশালকে এই ম্যাচে অলআউট হতে হয়েছিল মাত্র ৯৫ রানে। চট্টগ্রাম পর্বে বরিশাল তেতে থাকবে, তা সহজেই অনুমেয়।
চতুর্থ স্থানে রয়েছে মুশফিকুর রহিমের খুলনা টাইগার্স। দুটি ম্যাচে দলটির জয় ও হার একটি করে। সেই হিসেবে বরিশালের চেয়ে ভালো অবস্থানে খুলনা। শুরুটা এদের দারুণ জয় দিয়ে ঢাকার বিরুদ্ধে। যা ছিল বেশ চমকজাগানিয়া। কিন্তু দ্বিতীয় ম্যাচে অবশ্য খুলনা পারেনি চট্টগ্রামের সঙ্গে। হারতে হয় ২৫ রানের ব্যবধানে।
বিপিএলে এবার সবচেয়ে দুর্বল দল ভাবা হচ্ছিল সিলেটকে। অথচ এই দলটি ঢাকা পর্বে দুটি ম্যাচে নিজেদের সক্ষমতা জানান দিয়েছে। প্রথম ম্যাচে কুমিল্লার সঙ্গে বেশ লড়াই করে হেরেছে। তবে দ্বিতীয় ম্যাচেই প্রবল দাপটে ঘুরে দাঁড়ায় মোসাদ্দেক শিবির। ঢাকাকে ১০০ রানে গুটিয়ে দিয়ে জয় তুলে নেয় সাত উইকেটে। ফলে সামনের ম্যাচগুলোতে সিলেট শক্ত প্রতিপক্ষ, তা আন্দাজ করা যাচ্ছে।
তবে তারকাসমৃদ্ধ দল মিনিস্টার গ্রুপ ঢাকার অবস্থাটা বেশ করুণ। যদিও দলটিকে বেশি ম্যাচ খেলতে হয়েছে। কিন্তু সেই হিসেবে আসেনি সাফল্য। অথচ এই দলে রয়েছে ক্রিকেটের তিন পাণ্ডব। অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে আছেন তামিম ইকবাল ও মাশরাফি বিন মর্তুজা। যদিও চোটের কারণে প্রথম তিন ম্যাচ খেলতে পারেননি মাশরাফি। ঢাকার বিপিএল মিশন শুরু হয় খুলনার সঙ্গে হার দিয়ে। দ্বিতীয় ম্যাচেও হার চট্টগ্রামের সঙ্গে। টানা দুই ম্যাচেই ফিফটি করে নিজেকে জানান দেন ড্যাশিং ওপেনার তামিম ইকবাল। তৃতীয় ম্যাচে গিয়ে প্রথম জয় পায় ঢাকা। বরিশালের বিরুদ্ধে মাহমুদউল্লাহরা পায় ৪ উইকেটের জয়। চতুর্থ ম্যাচে দীর্ঘদিন পর ঢাকার হয়ে মাঠে ফেরেন মাশরাফি। অথচ পুঁচকে সিলেটের কাছে হজম করতে হয় বাজে হার। সব মিলিয়ে বিপিএলে ঢাকার পর্বটা মোটেও ভালো যায়নি মাহমুদউল্লাহদের।
আগামীকাল থেকে শুরু হবে বিপিএলের চট্টগ্রাম পর্ব। দিনের দ্বিতীয় ম্যাচেই মাঠে নামবে মিনিস্টার ঢাকা। প্রতিপক্ষ সিলেট সানরাইজার্স। ম্যাচটি শুরু হবে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায়। দিনের প্রথম ম্যাচে মাঠে নামবে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স। তাদের প্রতিপক্ষ মুশফিকের খুলনা টাইগার্স। এই ম্যাচটি শুরু হবে বেলা দেড়টায়।