logo
আপডেট : ২৭ জানুয়ারি, ২০২২ ১৩:৪৬
ধূমপানে দিনে মৃত্যু ৩৫০
করোনার চেয়ে ২০ গুণের বেশি মারা যাচ্ছে অসংক্রামক রোগে
নিজস্ব প্রতিবেদক

ধূমপানে দিনে মৃত্যু ৩৫০

প্রতীকী ছবি

বাংলাদেশে করোনার চেয়ে ১০ থেকে ২০ গুণের বেশি মৃত্যু হয় অসংক্রামক রোগে। সংক্রামক রোগের চেয়ে অসংক্রামক রোগে অনেক বেশি মানুষের মৃত্যু হলেও অসংক্রামক রোগের প্রতি গুরুত্ব বেশি দেওয়া হয়।

দেশে মোট মৃত্যুর ৭০ শতাংশ অসংক্রামক রোগে। এদিকে গুরুত্ব না দিলে ২০৪০ সালে এই হার বেড়ে ৮০ ভাগে উঠে যেতে পারে। শুধু ধূমপানের কারণেই দেশে দিনে গড়ে মারা যাচ্ছে সাড়ে তিনশ মানুষ।

প্রথম জাতীয় অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনের প্রথম পর্বে যোগ দিয়ে এসব কথা বলেছেন বিশেষজ্ঞরা।

রাজধানী ঢাকার প্যান প্যাসেফিক সোনারগাঁও হোটেলে তিন দিনের এ সম্মেলন হচ্ছে। গতকাল বুধবার ২৬ জানুয়ারি শুরু হওয়া এ সম্মেলন শেষ হবে আগামীকাল শুক্রবার ২৮ জানুয়ারি। বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামসহ ৩০টি দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠান এ সম্মেলনের আয়োজন করেছে।

 

 

বৃহস্পতিবার সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনের প্রথম পর্বে স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের মহাপরিচালক মোহাম্মদ শাহাদাত হোসাইন মাহমুদ বলেন, কোভিডের কারণে সারাবিশ্ব এই মুহূর্তে ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। আমাদের দেশে কোভিডে যে মৃত্য, অসংক্রামক কোনো কোনো রোগে মৃত্যু তার চেয়ে ১০ থেকে ২০ গুণেরও বেশি।

শুধু ধূমপানের কারণে দেশে দিনে গড়ে মৃত্যু হচ্ছে সাড়ে তিনশ মানুষের। ক্যান্সার, টিবি, হার্ট ডিজিস সবই অসংক্রামক রোগ এবং এসব রোগের কারণে যে মৃত্যুহার, প্রত্যেকটির মৃত্যুর হার কোভিডের মৃত্যুর থেকে ৫ গুণ। কিন্তু কেন যেন আমরা শুধু সংক্রমক রোগের প্রতি বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকি। 

বিভিন্ন গবেষণার তথ্যের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, দেশে এই মুহূর্তে ৮.৪ মিলিয়ন মানুষ ডায়বেটিসে আক্রান্ত। সবাইকে পরীক্ষা করলে সংখ্যা বাড়তে পারে। তাদের শুরু ইনসুলেন্সের জন্য বছরে খরচ হচ্ছে ১৬ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। শুধু ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে অন্যান্য অসংক্রামক রোগ থেকেও রক্ষা পাওয়া যায়। 

সরকারের সদিচ্ছার ঘাটতি নেই জানিয়ে স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের মহাপরিচালক মোহাম্মদ শাহাদাত হোসাইন মাহমুদ বলেন, করোনার টিকার জন্য এবার সরকারের ২০ হাজার কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর একটি তহবিল আছে, সেখান থেকেও বিভিন্ন সহযোগিতা দেওয়া হয়।

একটি গবেষণার বরাত দিয়ে তিনি বলেন, চিকিৎসা ক্ষেত্রে ৬৭.৫ ভাগ অর্থ জনগণ পকেট থেকে ব্যয় করে। এটি নিঃসন্দেহে অনেক বেশি। এখানেও একটি হিসাব বারবার বাদ পড়ে যায়। যারা সরকারি কর্মচারী রয়েছেন তাদের জন্য সরকার প্রতি মাসে হেলথ অ্যালাউন্স দিয়ে থাকে দেড় হাজার থেকে আড়াই হাজার পর্যন্ত।

সব মিলে এর পরিমাণও ছয় হাজার কোটি টাকা। এটি কিন্তু কাউন্টে আনা হয় না। সব কিছু কাউন্টে আনলে হয়তো সরকারের অংশগ্রহণ আরো বেশি হতো। থোক বরাদ্দ খেকে চলমান অর্থবছরে কোভিডের কারণে যা খচর করা হয়েছে তা কাউন্ট করলে সরকারের অংশগ্রহণ অনেক বেশি হবে। অর্থাৎ সরকারের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ দেওয়ায় ক্ষেত্রে কোনো কার্পণ্য নেই।

শাহাদাত হোসাইন মাহমুদ বলেন, ‘যা বরাদ্দ দেওয়া হয়ে থাকে আমরা সবসময় সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারি না। সরকারের সদিচ্ছার ঘাটতি তো নেই। আমরা অনেক বিষয়ে অগ্রগামী চিন্তা করছি। কিন্তু সেই চিন্তুগুলোকে সমন্বিতভাবে পূরণ করতে পারলে অসংক্রামক রোগ থকে আমরা অনেকাংশে রক্ষা পেতে পারি।’

গবেষণার বরাত দিয়ে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে যত মৃত্যু হয় তার ৭০ ভাগই অসংক্রমামক রোগে। এটা বৈশ্বিক সমস্যা। ২০৪০ এই হার হয়তো ৮০ শতাংশে উঠে যাবে।’

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস।

 

আরো বক্তব্য রাখেন সাবেক মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ, ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি ফর আরবান হেলথ (আইএসইউএইচ) এর প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক জো আইভি বাফর্ড, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এনসিডি টিম লিডার (ব্যাংলাদেশ) সাধনা ভাগওয়াত, ওয়ার্ড ওরবেস্টি ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক জন উইলডিং, অরবিস ইন্টারন্যাশনালের কান্ট্রি ডিরেক্ট্রর ডা. মুনির আহমেদ, ইউনিভার্সেল মেডিকেল রিসার্স সেন্টারের রিসার্স প্রধান অধ্যাপক ডা. রেদওনুর রহমান, বিএসএমএমইউর পাবলিক হেলথ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. ফারিহা হোসেন।