logo
আপডেট : ২৭ জানুয়ারি, ২০২২ ১৮:৫৬
টি-টোয়েন্টিতে আর দেখা মিলবে তামিমের?
মাহমুদুন্নবী চঞ্চল

টি-টোয়েন্টিতে আর দেখা মিলবে তামিমের?

কানাঘুষা অনেক হয়েছে। হয়েছে আলোচনা-সমালোচনা। এবার এলো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা। আগামী ছয়মাস টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট খেলবেন না তামিম। নিজ মুখে বলে দিয়েছেন তিনি। ছয় মাস পর ফিরবেন তিনি এই ফরম্যাটে? কোটি টাকার প্রশ্ন এটি। কারণ এমন প্রশ্নের উত্তরে রয়েছে ঢের সংশয়।

গতকাল চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে মিনিস্টার ঢাকা দলের সংবাদ সম্মেলনে নিজের অবস্থান পরিস্কার করেন তামিম। অনেক কথাই বলেছেন তিনি। কয়েকটি কথা ধরলে, অনুমান করা যায়, টি-টোয়েন্টিতে তার ফেরাটা হয়তো আর হবে না। যেমন একটি জায়গায় তিনি বললেন, তার আশা বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি দলে তাকে আর কখনোই প্রয়োজন হবে না। তার অনুরোধ এই ফাঁকে তরুণদের যেন সুযোগ করে দেয়া হয়। ছয় মাস পর দল যদি তাকে প্রয়োজন মনে করে এবং তিনি (তামিম) নিজেকে ফিট বা মন সায় দেয়, তাহলে ভেবে দেখবেন।

এত যদি-কিন্তুর মিছিলে আপাতদৃষ্টিতে বলাই যায়, হয়তো তামিমের এই ঘোষণা টি-টোয়েন্টি থেকে বিদায় বলার। এর পেছনের ইতিহাসও তেমনটি বলছে। তামিম টি-টোয়েন্টি খেলছেন না সেই ২০২০ সালে ৯ মার্চ, মিরপুরে জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে ম্যাচ থেকে। এরপর চোটের কারণে ফিরে আসেন জিম্বাবুয়ে থেকে। ঘরের মাঠে বিশ্বকাপের আগে খেলা হয়নি অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে সিরিজ। আশা ছিল তামিম বিশ্বকাপ খেলবেন। সেখানেও গুড়ে বালি। তামিম ঘোষণা দেন, অপর্যাপ্ত অনুশীলনের অভাবে বিশ্বকাপ থেকে নিজের নাম সরিয়ে নিচ্ছেন তিনি।

বিশ্বকাপের পর পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সিরিজেও দেখা যায়নি তাকে। এখন খেলছেন তিনি বিপিএল। বিশ্বকাপের আগে একটা বিষয় বেশ চাউড় হয়েছিল, যে কোচ ডমিঙ্গো ও অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহই চাননি তামিম বিশ্বকাপ খেলুক। অন্দরমহলের সেই মনোমালিন্য আস্তে আস্তে হয়তো অভিমানের পাহাড় জমে গেছে। যার চুড়ান্ত প্রকাশ, তামিমের ছয় মাসের টি টোয়েন্টি থেকে বিশ্রামের ঘোষণা।

যদিও কয়েকদিন আগে বিসিবির সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন তামিম ইস্যুতে মুখ খুলেছিলেন। বলেছিলেন, তামিম তাকে বলেছে যে সে আর টি-টোয়েন্টি খেলতে চায় না। আর সেটা বিপিএলে ঢাকার হয়ে টানা দুই ম্যাচে ফিফটি করার পর। এটা যে সুপ্ত অভিমান থেকে তামিমের বলা, তা অনেকটাই বোঝা যায়।

তামিম অনেক ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। গতকাল সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে তামিম তা জানালেন এভাবে, ‘শেষ কয়েকদিন ধরে আপনারা সবাই জানেন যে আমার টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ার নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। অনেক জায়গায় বৈঠক হয়েছে। সভাপতি, জালাল ভাই, কাজী এনাম ভাইদের সঙ্গে। উনারা অবশ্যই চাচ্ছেন আমি চালিয়ে যাই অন্তত বিশ্বকাপ পর্যন্ত। আমার ব্যাপারটা আলাদা ছিল। এখন দুজন মিলে যেটা ভালো হয় ওই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আগামী ছয় মাস আমি টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট নিয়ে ভাবছি না। এই কয়েক মাস আমার পুরো ফোকাস টেস্ট ও ওয়ানডেতে থাকবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আগামী ছয় মাস আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি নিয়ে ভাবব না। ছয় মাসে তরুণরা এত ভালো খেলবে-আমার আর প্রয়োজন পড়বে না। তারপরও ছয় মাস পর আল্লাহ মাফ করুক যদি এমন সময় আসে ক্রিকেট বোর্ড, সিলেক্টর বা টিম ম্যানেজম্যান্ট যদি মনে করে আমাকে দরকার। আমিও যদি রেডি থাকি। তখন আবার এটা নিয়ে আলাপ হবে। কিন্তু এই ছয় মাস ভাবছি না।’

ক্রিকেটাররা আগে সাধারণত ছেড়ে দেন টেস্ট, তারপর ওয়ানডে। শেষে টি-টোয়েন্টি। তামিম যা করলেন তা উল্টো। তামিম এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘অনেক ক্রিকেটারই টি-টোয়েন্টি আগে ছেড়েছেন। বড় বড় ক্রিকেটাররাও করেছেন। ওয়ানডে আমাদের সবচেয়ে প্রিয় ফরম্যাট, আমিও খুব উপভোগ করি। টেস্ট ক্রিকেট এমন একটা ফরম্যাট- যখন থেকে ক্রিকেটের ব্যাট ধরা শুরু করেছি। তখন দুইটা ইচ্ছে ছিল। এক হচ্ছে বাংলাদেশের হয়ে খেলবো, এবং টেস্ট খেলবো।’

তামিমের চোখ এখন টেস্টে, ‘টেস্ট আমি যতদিন সম্ভব খেলে যেতে চাই। আমার বয়স ৩৩। ৩৪-৩৫ এ অনেকের অভিষেক হয়। তারা আরও পাঁচ বছর খেলে। আমার এখনও চার-পাঁচ বছর আছে ভালো ক্রিকেট খেলার। আমার পারফরম্যান্স ও ফিটনেস ঠিক থাকলে আরও চার পাঁচ বছর খেলব।’

তরুণদের সুযোগ নিয়ে তিনি বলেন, ‘শেষ সিরিজেও তরুণদের সুযোগ দিয়েছি। ওদেরও যথেষ্ট সুযোগ দেওয়া দরকার। এক দুই সিরিজে আস্থা হারালে সেটা ভুল। ছয় মাসে আমি ব্যক্তিগতভাবে নিশ্চিত আমার আর দরকার হবে না। তারপরও বললাম বিশ্বকাপের আগে বোর্ড বা আমি মনে করলে ফিরব। তবে এই মুহূর্তে এটা নিয়ে ভাবছি না।’

বিসিবি সম্পর্কে তামিম বলেন, ‘আমি এখন যেটা বলেছি সেটাতেই স্ট্রিক্ট থাকবো। বোর্ডকে অনেক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা তারা ডেকে বলেছে তাদের পরিকল্পনা কী। সব মিডিয়াতে এসে বলা ঠিক না। কিছু বিষয় আমার ও বোর্ডের মধ্যে কথা হয়েছে। পাপন ও জালাল ভাই গত কয়েকদিন আমাকে অনেক সময় দিয়েছে। বোঝার চেষ্টা করেছে আমার জায়গাটা কী।’

সামনের ছয় মাসে কী হবে। এমন প্রশ্নে তামিম বলেন, ‘দেখেন, আমি এটাই আশা করি আমি বিশ্বাসও করি। আমাদের যারা টি-টোয়েন্টিতে ওপেন করছে, তাদের সব ধরনের সামর্থ্য আছে। তারা ভালো করবে। আমি আমার দল ও সতীর্থদের খারাপ উইশ করতে পারবো না। আমি নিশ্চিত তারা ভালো করবে। আমার আর দরকার পড়বে না।’

শেষ বাক্যটিতেই তামিম যেন সব বলে দিয়েছেন, ‘আমার আর দরকার পড়বে না।’